করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে হঠাৎ করেই দেশের পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক ঋণ কমতে শুরু করেছে। পাইপলাইনে ঋণের পরিমাণ কমলেও শুধুমাত্র আটটি উন্নয়ন সহযোগীর কাছে পড়ে আছে সাড়ে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ।
সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) নিয়মিত প্রকাশনা ফ্লো অব এক্সটারনাল রিসোর্সেস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক ২০২২-২৩ প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পাইপলাইনে সব থেকে বেশি ঋণ পড়ে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর পরেই রয়েছে আমেরিকা-জাপানের কাছে ২ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ঋণ। বিশ্বব্যাংকের কাছে পড়ে আছে ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। এশীয়ার দেশ বিশেষ করে ভারত-চীনের কাছে পাইপলাইনে পড়ে আছে ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন এবং ইউরোপের কাছে পড়ে আছে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ। ৮টি বড় উন্নয়ন সহযোগীর কাছে ১০ দশমিক ৬৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাইপলাইনে।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কাছে ৫৮, জাতিসংঘের কাছে ২৬৬, কর্ডোনেশন অ্যান্ড নর্ডিকের কাছে ৬৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাইপলাইনে পড়ে আছে।
ইআরডি জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বিদেশি সহায়তায় পাইপলাইনের আকার দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরের শুরুতে পাইপলাইনে ছিল ৪৫ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান মিলে বিদেশি সহায়তায় ছাড় হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার। যদিও চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে প্রতিশ্রুতি বেড়েছে।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ ছিল ৫০ দশমিক ৩৪৬ বিলিয়ন ডলার, যা অর্থবছর শেষে কমে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ১৭৩ বিলিয়ন ডলারে। আর গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাইপলাইনের অর্থ আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে এক বছরে পাইপলাইনের আকার কমেছে ১ দশমিক ৩৩৬ বিলিয়ন ডলার বা ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর আগে একক বছর হিসেবে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ১৭৩ বিলিয়ন ডলার কমে পাইপলাইনে জমা অর্থ।
যদিও চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ৬ দশমিক ৯৮৯ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে, যা গত কয়েক অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি। এসময় ছাড় হয়েছে ৪ দশমিক ০৬৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ছাড়ের চেয়ে প্রতিশ্রুতি বেশি এসেছে।
ইআরডি সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিশ্রুতির চাইতে ১ দশমিক ৩৫৪ বিলিয়ন ডলার ছাড় বেশি হয়। এছাড়া ১ দশমিক ৩২৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল এবং অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় পাইপলাইনের আকার কমে।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, গত অর্থবছরে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা মোট ১৭৬ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করেছে। আর অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে পাইপলাইনের আকার কমেছে প্রায় বিলিয়ন ডলার মূল্যের। এ অবস্থায় বিদেশি সহায়তা ছাড় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে পাইপলাইনের আকার বৃদ্ধিতেও গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, পাইপলাইনে বিদেশি সহায়তার আকার যত বাড়বে, ভবিষ্যতে বিদেশি সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতাও তত বাড়বে। আর পাইপলাইনের আকার কমলে ভবিষ্যতে অর্থ ছাড়ও কমে আসতে পারে।