ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে গুজব, খোলাসা করলো বিএসইসি

কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ না দিলেও দুই বছর পর্যন্ত ক্যাটাগরি বহাল রাখার সুযোগ দিয়েছিলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে সেই সুযোগ চলতি মাসের ২৮ তারিখে শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে যেসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হবে সেসব কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। তবে এক শ্রেণীর কারসাজি চক্র এটি নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। কোনো কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ দেওয়া ছাড়াই আরও এক বছর আবার কোনো কোম্পানি ৬মাস ক্যাটাগরি বহাল রাখার সুযোগ পাচ্ছে বলে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের বেশকিছু গ্রুপ-পেইজে ভিত্তিহীন এসব তথ্য ছড়াচ্ছে। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ নয়। এসব তথ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্র মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দেওয়া ক্যাটাগরি বহালের সুবিধা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও এর মধ্যে তালিকাভুক্ত ৪৯ কোম্পানি এখনো বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি। ফলে বিএসইসির জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের পর এসব কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। তবে এক শ্রেণীর কারসাজি চক্র এটি নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। যার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজ। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টায় কারসাজি চক্রগুলো।

এবিষয়ে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের ক্যাটাগরি বহাল রাখার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। তবে বিষয়টি কমিশনের নজরে আছে। যেটি পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো হবে সেটি করা হবে। বাজারের জন্য যাতে নেতিবাচক না হয়, সময় হলে কমিশন সেটাই সিদ্ধান্ত নেবে।

সূত্র মতে, বেশকিছু আলোচিত-সমালোচিত কোম্পানি লভ্যাংশ না দিয়েও ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। এমন কোম্পানির সংখ্যা ৩৯টি। কোম্পানিগুলো হচ্ছে আলোচিত-সমালোচিত- খান ব্রাদার্স, খুলনা প্রিন্টিং, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনটেক লিমিটেড, কেয়া কসমেটিকস, এক্টিভ ফাইন, এএফসি এগ্রো বায়োটিক লিমিটেড, আলহাজ টেক্সটাইল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আনলিমা ইয়ার্ন ডাইং, আরামিট সিমেন্ট, এটলার্স্ট বাংলাদেশ, আজিজ পাইপস, বঙ্গজ, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস (বিবিএস), বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, ঢাকা ডাইং, ডেল্টা স্পিনিং, ফার কেমিক্যাল, ফাস ফাইন্যান্স, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, মেট্রো স্পিনিং, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, ন্যাশনাল ফিড মিল, ন্যাশনাল টি, ন্যাশনাল টিউবস, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, পেনিনসুলা চিটাগং, প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস, রিজেন্ট টেক্সটাইল, সাফকো স্পিনিং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপিয়ার্ড এবং জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

এদিকে লভ্যাংশ না দিয়েও ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ১০টি। কোম্পানিগুলো হচ্ছে- কাট্টলী টেক্সটাইল, ম্যাকসন স্পিনিং, মালেক স্পিনিং, নিউ লাইন ক্লোথিংস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রিং সাইন টেক্সটাইল, রানার অটোমোবাইলস পিএলসি, সাইফ পাওয়ারটেক, সায়হাম কটন মিলস এবং সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড।

জানা গেছে, বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাস চলাকালীন সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ছোট-বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বেশকিছু কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হয়। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির ক্যাটাগরি বহাল রাখতে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা জারি করেছিলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ‘জেড’ ক্যাটাগরি সংক্রান্ত বিএসইসির ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা আদেশে বলা হয়েছিল, পরপর দুই বছর লভ্যাংশ প্রদান কিংবা বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হলে কমিশনের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘জেড’ গ্রুপে স্থানান্তর করা যাবে। তাছাড়া ৬ মাস বা তার বেশি সময় কোম্পানির উৎপাদন বা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে, পরপর দুই বছর নিট পরিচালন লোকসান অথবা পরিচালন কার্যক্রম থেকে নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক থাকলে অথবা কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান তার পরিশোধিত মূলধনের বেশি হলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হবে।

এতে আরও বলা হয়, আইনি কারণে এজিএম করতে না পারলে কিংবা সংস্কার, বিএমআরই ও দৈব দুর্ঘটনাজনিত কারণে ছয় মাসের বেশি উৎপাদন বন্ধ থাকলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে না। এছাড়া সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের কারণে কমিশনের অনুমতিক্রমে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে। স্টক এক্সচেঞ্জ এসব বিধান পরিপালন করা হচ্ছে কিনা সেটি নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করবে এবং বিএসইসির পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে কোনো কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর বা সমন্বয় করতে পারবে।

তবে গত বছরের ৩০ নভেম্বর আগের নির্দেশনা রদ করে আরেকটা নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিফিকেশনে জেড ক্যাটাগরির বিষয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সেটলমেন্ট অব ট্রানজেকশন্স বিধিমালা অনুসারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে সাথে সাথে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা আদেশের কারণে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ যেসব কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারেনি, সেগুলোকেও এখন স্থানান্তর করা যাবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা বা পরিচালকেরা বিএসইসির পূর্বানুমোদন ছাড়া শেয়ার কেনাবেচা কিংবা স্থানান্তর করতে পারবেন না। তবে ব্যাংক, বীমা কোম্পানি ও অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) উদ্যোক্তা বা পরিচালকেরা এক্ষেত্রে ছাড় পাবেন। ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হবে।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার