ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজারের অন্যতম হাতিয়ার পেপারলেস মার্কেট: ডিএসই চেয়ারম্যান

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেছেন, পুঁজিবাজারের অন্যতম হাতিয়ার হলো পেপারলেস মার্কেট। তিনি বলেন, স্টেকহোল্ডারদের তথ্য যদি আমরা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে স্মার্টলি না নিতে পারি, তথ্যের মধ্যে যদি সত্যতা না থাকে তাহলে পুঁজিবাজার একটা ভ্রান্ত ধারণায় পরিণত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে উত্তরণের জন্য তথ্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর নিকুঞ্জ টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম অব ডিএসই গো লাইভ’ প্রোগ্রামের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট রূপালী হক চৌধুরী এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম। এছাড়া ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, তথ্য প্রতিটি পদক্ষেপের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। এই তথ্য সংগ্রহের জন্য ডিএসইর স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম উদ্বোধন বাকিদের ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসতে চলেছে। পুঁজিবাজারকে পেপারলেস করতে ডিএসই ইতোমধ্যে নিজস্ব স্মার্ট ডাটা সেন্টার তৈরি করছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সঙ্গে পুঁজিবাজার যে স্মার্টের দিকে যাচ্ছে সেটা ডিএসই গত বছর থেকেই শুরু করেছে। আজকে ছিল এর দ্বিতীয় উদ্যোগ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এই স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি উপাদানেরে মধ্যে স্মার্ট ইকোনমি অন্যতম বড় একটি অংশ। আবার, স্মার্ট ইকোনমির দুটি শাখা রয়েছে- ১. ক্যাপিটাল মার্কেট এবং ২. মানি মার্কেট। বিশ্বের উন্নত দেশে ক্যাপিটাল মার্কেট তাদের অর্থনীতিতে যেভাবে অবদান রাখে, আমরা সে অবস্থানে নেই। কারণ আমাদের দেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন হচ্ছে। সেটা উন্নত দেশগুলোতে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে হয়। আমাদের স্মার্ট ইকোনমি গড়তে অবশ্যই স্মার্ট ক্যাপিটাল মার্কেট গড়তে হবে।

তিনি আরও বলেন, স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ, এজিএমের তথ্যগুলো তুলে ধরতে পারবো। এতে একজন বিনিয়োগকারী যেমন কোম্পানিগুলোর তথ্য দেখে বিনিয়োগ করতে পারবে, তেমনি তাদের লোকসানের পরিমাণ কমে আসবে। আমরা এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, বিএপিএলসি এবং অন্যান্যদের সাথে আলোচনা করবো।

ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেন, স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম চালু যেমন আমাদের একধাপ এগিয়ে নিয়েছে, তেমনি আমাদের দায়িত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পদ্ধতির কার্যকারিতা ধরে রাখতে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ট্রেইনআপ করতে হবে এবং রক্ষণাবেক্ষনে শতভাগ সতর্ক থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবে স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম চালু হওয়ায় পুঁজিবাজার আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেমের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো এখন থেকে সহজে নির্ভুল তথ্য প্রকাশ করতে পারবে। আগে যে ইচ্ছা ও অনিচ্ছাভাবে ভুল তথ্য প্রদান ও প্রকাশ করার ঝুঁকি ছিল সেই ঝুঁকি আর থাকবে না এবং কেউ কোনো অনিয়ম করলে তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, আজকের এই কার্যক্রম শুরুর ফলে পুঁজিবাজারের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপের যাত্রা শুরু হল। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সঙ্গতি রেখে শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের সহযোগিতায় ডিএসই’র কর্মকর্তাবৃন্দ স্পেশাল সাবমিশন সিস্টেম তৈরি করেছে। এতোদিন কোম্পানির বিভিন্ন তথ্য ম্যানুয়ালি সাবমিশন করা হতো। যার ফলে অনিচ্ছাকৃত ভুল হবার সম্ভাবনা থাকতো। এই সফটওয়্যারটি চালু হবার ফলে এই সমস্যাটিকে সমাধান হবে। ফলে কমপ্লায়েন্স পরিপালন করা সহজ হবে। একই সাথে ইনফরমেশন গ্যাপেও অনিয়ম কমে যাবে।

বিএপিএলসি’র প্রেসিডেন্ট রূপালি হক চৌধুরী বলেন, অনলাইনে তথ্য জমা দেয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় এখন থেকে সময় অনেক বেঁচে যাবে। এতে করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য দ্রুততম সময়ে সবার কাছে পৌঁছানো যাবে। তবে সিস্টেমে সমস্যা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে করে সমস্যা হওয়ার কারণে সিস্টেমের কাজ বন্ধ না হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা। সবার সঙ্গে কাজ করে বাজারের আরো উন্নতি করা। কোম্পানিগুলোর কিছু সমস্যা আছে। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে বাজারের এবং বিনিয়োগকারীদের যাতে কোনো সমস্যা বা ক্ষতি না হয় ‌। আজকের এই সিস্টেমের ফলে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের অংশ ছাড়াও তথ্য দেয়া আরো সহজ হবে। এতে সময়ের যে ব্যয় হত সেটাও কমে যাবে। যা সময়পযোগী কাজ হয়েছে। অনেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে যারা এই সফটওয়্যারটি অতি সহজে ব্যবহার করতে পারবে। একই সাথে কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা অটোমেটেড নয় তাদের এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে সহযোগিতা করতে হবে। তারা সময়ের সাথে সাথে এই সফটওয়্যারটিরেত অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য কোনোভাবে যাতে ভুল প্রকাশ না হয় এবং বাদ না যায় সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাজার থেকে অনৈতিক মুনাফা করতে না পারে এবং ক্ষতি করতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। আজকের এই উদ্যোগের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে অনেক ধন্যবাদ। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ডিএসইর চেয়ারম্যান একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। তাই ভবিষ্যতে যদি ডিএসইর আইটি প্লাটফর্মে ঘাটতি থাকে তবে সেটা দুঃখজনক হবে। এছাড়া চায়নারা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার পর এই প্রথম কোনো কাজে তাদের সহযোগিতা দেখা গেছে। তবে কোম্পানিগুলোর তথ্য যাতে ঠিকভাবে যাচাই করে প্রকাশ করা হয়। তাহলে সবার উদ্দেশ্যে পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও লিস্টিং অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান মোঃ রবিউল ইসলাম। মূল প্রবন্ধে তিনি তৈরীকৃত সফটওয়্যারটির উদ্দেশ্য, ব্যবহার ও টেকনিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক এবং বিভিন্ন মডিউল সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

অর্থসংবাদ/এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার