ক্যাটাগরি: শিল্প-বাণিজ্য

এসএমই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে: বিসিআই সভাপতি

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর পারভেজ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এসএমই খাত সব থেকে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এসএমই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এময় গভর্নরকে বিসিআই পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ হতে বিসিআইয়ের ‘আমার পণ্য আমার দেশ’ লোগো সম্বলিত একটি ফ্রেম উপহার দেন।

সাক্ষাৎকালে বিসিআই সভাপতি বলেন, বিসিআই সমগ্র বাংলাদেশ ভিত্তিক একক এবং একমাত্র জাতীয় শিল্পচেম্বার বিসিআই স্থানীয় সকল শিল্পের উন্নয়নের পথে সর্বপ্রকার প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কাজ করে চলেছে। শিল্প মালিকরা অনেক সময় অনেক পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভুল তথ্য পেয়ে থাকে যার ফলে অনেক সময় অনেকে ঘাবড়ে যান। আমরা আজ আপনার কাছে কিছু বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য এসেছি। দেশে বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারনে সব প্রতিষ্ঠানের সেলস ড্রপ করেছে, ঋনের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। ঋনের উচ্চ সুদের সাথে সাথে ব্যাংক সমূহ বন্ডে বিনিয়োগের দিকে ঝুকে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খুলতে পারছেনা শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং ডলার স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া রেট থেকে অনেক বেশি টাকায় ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে। রপ্তানি মূখী শিল্পের উৎসাহিত করার জন্য যে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয় সরকার থেকে সেটা ঠিক সময় মত পরিশোধ করা হচ্ছে না। যার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের সময়মত তাদের অপারেশন কর মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো নগদ সহায়তা ছাড় না করা গেলে সময়মত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। আমরা মনে করি নগদ সহায়তা দ্রুত ও সময়মত ছাড় করা উচিত।

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং তারা টাকার অবমূল্যায়নকেও আমলে নিচ্ছে না। আমার মনে হয় এটা আগের মত রাখা উচিত। আমরা ঋণ ক্লাসিফাইডের ক্ষেত্রে (এসএমএ) ৩ মাসে না এনে ৬ মাস রাখার প্রস্তাব করছি। প্রছন্ন রপ্তানির ক্ষেত্রে দেখা যায় এক্সসেপটেন্স পেতে এবং এলসি ম্যাচিউইর হতে ৪-৫ সপ্তাহ লেগে যায় যার ফলে তাদের লায়াবিলিটি বেড়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি প্রচ্ছন্ন রপ্তানির ক্ষেত্রেও একটি নিদের্শনা থাকা জরুরী যে, স্বাভাবিক রপ্তানির মতই প্রচ্ছন্ন রপ্তানির ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা রাখতে হবে। সিঙ্গেল কোম্পানি একটি সিঙ্গেল আইডেনটিটি, আন্তর্জাতিক প্রাকটিস হচ্ছে কেউ যদি গ্রুপ অব কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করে তবে তাদের গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গ্রুপ হিসেবে নিবন্ধন না করা হলেও ৩-৪ জন পরিচালক কমন হলে তাদেরকে গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। এবং কোন একজন পরিচালক কোম্পানি থেকে বের হয়ে গেলেও সে অন্য কোথাও যদি কোন ভাবে সিক হয়ে যায় তবে তার লায়াবিলিটি নিতে হয়। এটার একটি ক্লারিফিকেশন দরকার।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এসএমই খাত সব থেকে ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমাদের এসএমই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা কিছু দিন আগে পত্র-পত্রিকায় দেখলাম অগ্রিম ডলার বুকিং দিলে প্রায় ১২৩-১২৪ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। এটা সম্পর্কে আমরা জানতে চাই।

এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য বিকল্প সকল পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি কমেনি। পরে আমরা মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আশা করি খুব দ্রুত মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে কারণ আমাদের এখন প্রধান কাজ মুদ্রাস্ফীতি কমানো। ঋণপত্র খোলার বিষয়ে বলতে চাই আমরা কোন ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে না করিনি এবং এখন প্রতি দিন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার দুইশত ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। আমরা কঠোর হাতে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করি জানুয়ারি ২০২৫ থেকে আর ডলারের স্বল্পতা থাকবে না। এসএমই খাতের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে যেখান থেকে ৭% হারে এবং নারী উদ্যোক্তরা ৫% হারে ঋণ নিতে পারে। আমরা জানি আপনাদের কষ্ট হচ্ছে, আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে খাদ্য পণ্য, সার, জ্বালানি আমদানির পরে অন্য কিছু। অগ্রিম ডলার বুকিংয়ের বিষয়ে ভূলভাবে সংবাদ এসেছির আমরা পরবর্তিতে এর ব্যাখ্যা প্রদান করেছি। এটা ৫% সুদে ৩মাস মেয়াদে বুকিং দিতে হবে সেক্ষেত্রে ১.৭৫% সুদ হবে।

সভায় বিসিআইয়ের সহ-সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস, পবিচালকবর্গ, রঞ্জন চৌধুরী, ড. দেলোয়ার হোসেন রাজা, আবুল কালম ভ্ইূয়া, জিয়া হায়দার মিঠু, মিজানুর রহমান, রুসলান নাসির, সোহানা রউফ চৌধুরী, মো. সেলিম জাহান, মো. মাহফুজুর রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের, ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের ও নুরুন নাহার এবং বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের পরিচালক মো. সারোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

কাফি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার