ভারতের ডিজিটাল লেনদেনের জন্য সুপরিচিত পেটিএমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। গতকাল শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভারতের পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন শুরু হয় ৪৩৫ রুপিতে। দিন শেষে দর কমে দাঁড়িয়েছে ৪১৯ রুপি। অর্থাৎ একদিনে শেয়ারপ্রতি দাম কমেছে ১৬ রুপি।
চলতি মাসের শুরু থেকে পেটিএমের মূল কোম্পানি ওয়ান ৯৭ কমিউনিকেশনের শেয়ারের দাম কমতে থাকে। জানুয়ারি মাসের শেষ কার্যদিবসে পেটিএমের শেয়ারের মূল্য ছিলো ৭৬১ রুপি। এরমধ্যে প্রথম পাঁচ দিনে শেয়ারটির দর কমে ৩২৩ রুপি। এরপরের দুদিনে কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য কিছুটা বেড়েছিলো। অর্থাৎ গত ৭ ফেব্রুয়ারি শেয়ারটির মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো ৪৯৬ রুপিতে।
এরপরের দুই কার্যদিবসে আবারও পতনের মুখে পেটিএমের শেয়ার। গত ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৭৭ রুপি কমে ৪১৯ রুপিতে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি আরবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ক্রমাগত নিয়ম লঙ্ঘন’ এবং তত্ত্বাবধানের অভাবেই এই কঠোর পদক্ষেপ।
এর আগে ২০২২ সালেই আরবিআই পেটিএমকে নির্দেশ দিয়েছিল, কোনো নতুন গ্রাহক করা যাবে না। তারপরই মনে করা হচ্ছিল, যেকোনো সময় পেটিএমের ব্যাংকিংয়ে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এনডিটিভি জানিয়েছে, শেষমেশ তা-ই করা হয়েছে।
আরবিআইয়ের ডেপুটি গভর্নর জে স্বামীনাথন বলেছেন, পেটিএম পেমেন্টস ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য যা করণীয়, তা-ই করা হবে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২৯ ফেব্রুয়ারির পর আর ব্যাংকিং পরিষেবা দিতে পারবে না পেটিএম। একই সময়ের পর কোনো গ্রাহকের পেটিএম অ্যাকাউন্ট, ওয়ালেট বা ফাসট্যাগে নতুন করে অর্থ জমা নিতে বা ক্রেডিট লেনদেন করতে পারবে না বলেও জানায় আরবিআই। এরপরই ধস নামে পেটিএমের শেয়ারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই পদক্ষেপে পেটিএম গ্রাহকদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ তৈরি হয়। পেটিএমের হিসাবে জমা অর্থের কী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল গ্রাহকদের মনে।
তখন পেটিএম জানায়, রিজার্ভ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের কারণে গ্রাহকদের সঞ্চয়ী হিসাব ও ওয়ালেটে জমা আমানতে প্রভাব পড়বে না। তারা আরও জানায়, পেটিএমের ফাসট্যাগ বা এনসিএমসি হিসাবে জমা থাকা অর্থেও প্রভাব পড়বে না। অর্থাৎ গ্রাহকদের আমানত সুরক্ষিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে আরবিআই।
আরবিআই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগে করে বলে, পেটিএম অ্যাপে উপযুক্ত তথ্য, পরিচয় ছাড়া হাজার হাজার হিসাব খোলা হয়েছে। অধিকাংশ হিসাবেই সঠিক কেওয়াইসি বা সাধারণ ব্যাংকিং তথ্য নেই। এমনকি এও দেখা গেছে, একটি প্যান নম্বর দিয়ে হাজারখানেক পেটিএমের হিসাব খোলা হয়েছে। ফলে আর্থিক দুর্নীতির সম্ভাবনা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে জন্য অনেক দিন তর্জন-গর্জনের পর হঠাৎ করে পেটিএমের লেনদেনে রাশ টেনেছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়া যেসব হিসাব খোলা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোটি কোটি রুপি লেনদেন হয়েছে। আরবিআই ওই হিসাবগুলোর নথি খতিয়ে দেখতে গিয়ে গলদ খুঁজে পেয়েছে। প্রায় কোনো হিসাবের সঙ্গেই উপযুক্ত নথিপত্র পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরবিআইয়ের সন্দেহ, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়া পেটিএমে যেসব হিসাব আছে, সেগুলোর মধ্যে কোনো কোনো হিসাব আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সংবাদ অনুযায়ী, পেটিএমের সম্ভাব্য এই দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে ভারত। পেটিএমের মূল কোম্পানি ওয়ান ৯৭ কমিউনিকেশন লিমিটেড আরবিআইয়ের কোপে পড়েছে। এদের মাধ্যমে লেনদেনে গোপন তথ্য ফাঁসের সম্ভাবনা আছে বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, পেটিএমের বিরুদ্ধে যত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার সবই করা হয়েছে আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার স্বার্থে। গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।