বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ৫৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই)। একই সঙ্গে এনবিআরের কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রশাসনের সমন্বয় ও সব জায়গায় অটোমেশন করার দাবিও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। প্রাক বাজেট আলোচনায় বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড), ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ (বিসিসিআই) অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর নীতির সদস্য এবং প্রথম সচিব ও দ্বিতীয় সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির পরিচালক শেখ আমিন উদ্দিন। তিনি ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল আমদানিতেও শুল্ক সুবিধা কমিয়ে আনার দাবি জানান। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) চেয়ারম্যান ও নিটল মোটরস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ নারায়ণগঞ্জ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে সব পণ্য আমদানি করার সুযোগ করে দেয়ার প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) মহাপরিচালক গাজী একেএম ফজলুল হক বলেন, বর্তমানে রিটার্ন দাখিলের জন্য ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা চালু থাকলেও অ্যাসেসমেন্ট, আপিল আবেদন ও শুনানির ক্ষেত্রে কোনো ডিজিটালাইজেশনের পদ্ধতি নেই। এগুলো চালু হলে করদাতা ও রাজস্ব কর্মকর্তা-উভয়েরই সময় সাশ্রয় হবে এবং বিড়ম্বনা কমবে। অনিবাসীদের উৎসে কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫-১০ শতাংশ করার প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। ভ্যাটের চালানপত্র অনলাইনে জমা দেয়ার ব্যবস্থা, ঝুট থেকে সুতা তৈরির ক্ষেত্রেও আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার বা কমিয়ে আনারও প্রস্তাব দেন তিনি।
বেজার উপসচিব মোহাম্মদ রেজাউল হক, বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দেন। দেশের শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আনা একাধিক পণ্যের শুল্ককর কমানোর দাবি জানান রেজাউল হক।
বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা করের আওতা বৃদ্ধি, উপজেলা পর্যায়ের অফিসের কর আদায় এবং তাদের ওপর ব্যয়ের খরচের বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেয়া, আংশিক রফতানিকারকদের জন্য কাঁচামালের শুল্কমুক্ত আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, এইও সনদপ্রাপ্তদের জন্য বন্দরে গ্রিন চ্যানেল সিস্টেম বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে দেশের আটটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) ৪৪৯টি শিল্প ইউনিটের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছয়টি সোলার পণ্য আমদানির সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব তুলে ধরেন।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, সবাই সততা দেখালে অনেক সুবিধাই দেয়া যেত। ইপজেডে অনেক সুবিধা দেয়া হয়েছে, তাই এখানে হয়তোবা অপব্যবহার হবে না। কিন্তু পরক্ষণেই দেখা যায়, ইপিজেডের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান নানা অপকর্মে জড়িত। তখন সুবিধার বিষয়ে আমাদের বিবেচনা করতে হয়। এখানে সুযোগ নিয়ে অপব্যবহারের অনেক জায়গা তৈরি করা হয় বলেও জানান তিনি। সুবিধা যারা গ্রহণ করছে তাদের স্বচ্ছ ও সততা অবলম্বনের আহ্বান জানান তিনি।