ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

লভ্যাংশ পায়নি বিনিয়োগকারীরা-ফের আইন লঙ্ঘন করে স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা কৃষিবিদ ফিডের

পুঁজিবাজারে এসএমই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড যেন আইনের তোয়াক্কাই করছে না। একের পর এক আইন লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে এসএমই খাতে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি। গত বছরের ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের এখনো পরিশোধ করেনি। এরই মধ্যে আবারও আইন লঙ্ঘন করে বোনাস লভ্যাংশ (স্টক ডিভিডেন্ড) ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। এসএমই খাতে তালিকাভুক্তির তিন বছরের মধ্যে বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া নিষেধ থাকা সত্বেও তা মানছে না কৃষিবিদ ফিড। এর আগেও কোম্পানিটি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছিলো। গত বছরের ১০ নভেম্বর আইন বহির্ভূতভাবে কৃষিবিদ ফিডের উদ্যোক্তা পরিচালক জিন্নাত আরা শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনের বিধি ৪ এর ২ উপবিধির লঙ্ঘন হয়। ফলে বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসংবাদ ‘কৃষিবিদ ফিডের উদ্যোক্তার আইন বহির্ভূত শেয়ার বিক্রির ঘোষণা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে আসার পর পরিচালকের শেয়ার বিক্রির সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করে কৃষিবিদ ফিড।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, আইন লঙ্ঘনের কারণে বিধি অনুযায়ী এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশনে যাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গত বছরের ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ পরিশোধ না করায় একাধিকবার সতর্ক করে লভ্যাংশ পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।

সূত্র মতে, গত ৩০ জুন,২০২৩ সমাপ্ত হিসাববছরের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বোনাস ও নগদ মিলিয়ে ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারে এসএমই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্সের ২ সিসি এবং কন্সেন্ট লেটার (সম্মতি পত্র) কন্ডিসন (শর্ত) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়াও গত বছরের ঘোষিত লভ্যাংশের অর্থ একবছরেও বিনিয়োগকারীদের পরিশোধ করতে পারেনি কোম্পানিটি। গত বছরের লভ্যাংশের অর্থ পরিশোধ না করে আবারও নতুন করে লভ্যাংশ ঘোষণাকে প্রতারণা বলছেন বিনিয়োগকারীরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, কনসেন্ট লেটার কন্ডিসন (সম্মতি পত্রের শর্ত) অনুযায়ী এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর ইস্যুয়ার কোম্পানি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যুর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন শুরু করে কৃষিবিদ ফিড। সেই হিসাবে এখনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করার কোনো সুযোগ নেই কোম্পানিটির। যেহেতু এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ বছর ইস্যুয়ার কোম্পানি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না এমন শর্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।

এ বিয়ষে জানতে চাইলে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, যেসময়ে বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া নিষেধাজ্ঞা থাকে সে সময়ে যদি তা করে থাকে তাহলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্সের ২ সিসি এবং কন্সেন্ট লেটার (সম্মতি পত্র) কন্ডিসন (শর্ত) লঙ্ঘন করে থাকে তাহলে সে কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে এই ধরনের নন কম্প্ল্যায়েন্স ভবিষ্যতে না করতে পারে সে জন্য আরও কঠোর হবে বিএসইসি।

লভ্যাংশ পরিশোধ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, যদি ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ কেউ না পেয়ে থাকে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে অভিযোগ দাখিল করে তাহলে লভ্যাংশ পেতে সহায়তা করা হবে। একই সঙ্গে এই নন কম্প্ল্যায়েন্সের কারণে কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, গত ৩০ জুন,২০২২ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের কৃষিবিদ ফিডের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। যার রেকর্ড ডেট ছিলো ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। আর এজিএম ছিলো ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ। এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের দিয়ে এ লভ্যাংশ অনুমোদনও করিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ লভ্যাংশের সেই অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধই করেনি। নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা না দেওয়াকে মহাপ্রতারণা বলছেন বিনিয়োগকারীরা। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ঘোষণা করা লভ্যাংশ বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডদের অনুমোদনের ৩০দিনের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি বিএসইসির জারি করা আদেশে বলা হয়, অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে লভ্যাংশ জমা করতেই হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা থাকলেও ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের একবছর পেরিয়ে গেলেও সেই লভ্যাংশের অর্থ এখনো বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে পাঠায়নি এসএমই খাতে তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির লভ্যাংশের অর্থ পাঠানোর শেষ সময় ছিল ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল।

ডিএসই সূত্র মতে, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের পরিশোধ না করায় কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠায় প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই। তবে ডিএসইর নোটিশের কোনো জবাব দেয়নি কোম্পানিটি।

এছাড়াও, এর আগেও আইন বহির্ভূতভাবে কৃষিবিদ ফিডের উদ্যোক্তা পরিচালক জিন্নাত আরা শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনের বিধি ৪ এর ২ উপবিধির লঙ্ঘন হয়। ওই আইনে বলা হয়েছে, কোন কোম্পানির বার্ষিক হিসাব সমাপ্ত হওয়ার দুই মাস পূর্ব থেকে পরিচালনা পর্ষদ কতৃক উক্ত হিসাব বিবেচিত, গৃহীত বা অনুমোদিত হওয়ার সময়কাল পর্যন্ত কোন পরিচালক, স্পন্সর কেউ শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। যেহেতু কৃষিবিদ ফিড জুন ক্লোজিং বা হিসাববছর সমাপ্ত হয় জুন মাসে (জুলাই-জুন)।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার