অবশেষে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব পেতে আবেদন করেছেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক। মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে বিকেলে জেলা প্রশাসক নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে এ সব কথা বলেন। দ্রুতই আবেদনটি কার্যকর করা হবে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ি প্রকৃতপক্ষে যে কোন বিচারে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য দাবিদার। আমরা বিগত ৩ মাস ধরে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য ডকুমেন্টেশন কার্যক্রম করেছিলাম। আজ আমরা আবেদন করেছি। মূলত শাড়িটির ইতিহাস, এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানুনের জীবন জীবিকার তথ্যটি, আড়াইশ বছরের ইতিহাসের তথ্যাদি সংগ্রহ করে ডকুমেন্টেশন তৈরি করে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই টাঙ্গাইল শাড়ি নামে জিআই স্বীকৃতি পাবো।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পরে ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের’গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আপিল করবো। আমরা পুরোপুরো আশাবাদী টাঙ্গাইল শাড়ি চূড়ান্ত বিচারে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে আসতে পারবো।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়িকে গত ২ জানুয়ারি নিজেদের ‘জিআই পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট দেওয়ার পর।
এতে বলা হয়েছিল, টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত। এটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রঙ এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।
পোস্টটি নজরে আসার পরপরই বাংলাদেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক ওঠে এবং টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব বাংলাদেশের নেয়ার দাবি ওঠে। ভারতের পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের তন্তুবায়ী সমবায় সমিতি টাঙ্গাইল শাড়ির পেটেন্ট দাবি করে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগ টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমানের পণ্য স্বীকৃতি দেয়।
শাড়িটির জিআই চিহ্ন হিসেবে বলা হয়, এর নাম ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’। শান্তিপুর ডিজাইন ও ঢাকাই টাঙ্গাইলের সংমিশ্রণে এক ধরনের সংকর শাড়ি এটি। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতেই সেটি তৈরি হয়েছে। তাই উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গ এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে ভারতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনে। একই সঙ্গে এ রেজিস্ট্রেশনের বৈধতা ২০৩০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে বলে স্বীকৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।