দেশের অর্থনীতির তথ্য-উপাত্তসহ ব্যবসার ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বাভাসের তথ্য জানাবে পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্স (পিএমআই)। যা কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের নতুন ক্রয়াদেশ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, সরবরাহ এবং ইনভেন্টরির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য এবং সম্ভাব্য খাতভিত্তিক সুযোগগুলোর একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ করে। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উন্নীত হওয়ার আলোকে, বিশেষ করে মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান হওয়ার পর বাংলাদেশের উন্নয়ন গতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে পিএমআই বা ক্রয় ব্যবস্থাপনা সূচকের মাধ্যমে ব্যবসার পূর্বাভাসের তথ্য জানা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) যৌথভাবে এখন থেকে এসব তথ্য জানাবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে পিএমআই তৈরি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। বিস্তারিত তুলে ধরেন পিইবির চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিইবির অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ম্যানেজার হাসনাত আলম। পিএমআই যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) সহায়তায় এমসিসিআই ও পিইবির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম। অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান।
মাশরুর রিয়াজ জানান, পিএমআই বাংলাদেশে নতুন হলেও বিশ্বে এটি নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৯ সালেই এটি চালু হয়। বাংলাদেশের কিছু প্রধান শিল্প খাতের অন্য দিকগুলো প্রতিফলিত করতে এবং মোকাবিলার জন্য এটি ব্যবহার হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন খাতের নীতিনির্ধারকরা খুব সহজেই অর্থনীতির পূর্বাভাস বুঝে বিনিয়োগ করতে পারবেন। সরকার, বেসরকারি খাত, সিভিল সোসাইটি এ টুল ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে এটি সহায়ক হবে। কারণ এর মাধ্যমে প্রতি মাসের অর্থনৈতিক পরিবেশ বোঝা যাবে। সর্বোচ্চ ১০ দিনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ১১তম দিনের তথ্য আমাদের কোনো কাজে আসবে না। তখন চিহ্নিত করা যাবে কে সঠিক উত্তর দিচ্ছেন, কী করছেন।
ইউনিলিভারের জিনিয়া হকের এক প্রশ্নের জবাবে মাশরুর রিয়াজ বলেন, ধার যাক, ইউনিলিভার সাবান তৈরির জন্য কাঁচামাল কিনেছে। এটি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কতটুকু সহায়ক হবে, কতটুকু প্রভাব ফেলবে—তা পিএমআইর মাধ্যমে জানা যাবে।
ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১০ বছর ধরে ৬ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। বিশ্বজুড়ে পিএমআই ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগের জন্যও এটি জরুরি।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়া নির্দেশ করবে এ টুল। রিয়েল টাইম ডাটা অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির পরের ধাপে কীভাবে পৌঁছানো যাবে—সেটি জানা জরুরি। এর মাধ্যমে পরের ধাপে পৌঁছানোর নির্দেশনা মিলবে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মতে, পরিবর্তনশীল বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বা সংগতিপূর্ণ থাকতে পিএমআই অবশ্যই প্রয়োজন।
মূল প্রবন্ধে হাসনাত আলম জানান, এটি এখন পাইলট প্রকল্প হিসেবে আছে। গত নভেম্বর কাজ শুরু হয়েছে। আগামী মার্চ নাগাদ একটি প্রতিবেদন আমরা প্রকাশ করতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি নতুন হওয়ায় চ্যালেঞ্জ অনেক। বিশেষ করে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের তথ্য প্রকাশ করতে চাইবে না। তবে আমরা প্রশ্নগুলো সেভাবেই সাজিয়েছি। এতে কোম্পানি যে কোনোভাবেই তথ্য দিতে পারবে।
অর্থসংবাদ/এমআই