ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

টলমাটাল মিয়ানমারের গার্মেন্ট শিল্প

মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিতে। তাতে টলমাটাল অবস্থায় রয়েছে উদীয়মান গার্মেন্ট শিল্প। অনিয়ন্ত্রিত সংঘাতে এই খাতে যেমন পরিচালন ব্যয় বেড়েছে, তেমনি কর্মী সংকট শুরু হয়েছে। ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংঘাতপূর্ণ দেশটির পোশাক খাত।

মিয়ানমারের গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমজিএমএ) জানায়, তাদের সদস্যদের মধ্যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে ২৯৮টি কারখানার উৎপাদন, যা মোট সদস্য কারখানার ৩৬ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় বন্ধ হওয়া কারখানা বেড়েছে ৫২টি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বন্ধের হার ছিল প্রায় ৩১ শতাংশ।

সস্তা শ্রম ও দুর্বল মুদ্রার কারণে গার্মেন্ট শিল্পের জন্য মিয়ানমার লাভজনক হয়ে উঠেছিল। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ডলারের বিনিময় হারের নিরিখে মিয়ানমার থেকে পোশাক রফতানি ২০২২ সালে সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছে। রফতানির ৩০ শতাংশ হিস্যা দখল করে পোশাক হয়ে উঠেছিল মিয়ানমারের শীর্ষ রফতানি পণ্য।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এ খাতে সংকটের অন্যতম কারণ হলো কর্মী সংকট। উচ্চ চাহিদার বিপরীতে কিছু কারখানা খোলা রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। এমজিএমএর শ্রমবিষয়ক এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের প্রায় অর্ধেক সময় শ্রমিক সংকটের খবর পাওয়া গেছে। ভালো বেতন ও কর্মপরিবেশের আশায় তারা হয় অন্য কারখানায় চলে গেছে অথবা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।

পোশাক শিল্পের এ পরিস্থিতি মিয়ানমারের চাকরির বাজারের পরিবর্তন প্রতিফলিত করছে। গত অক্টোবরে কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম মজুরির ওপরে একটি বিশেষ ভাতা দিতে বাধ্য করে জান্তা শাসকরা। এতে ন্যূনতম পারিশ্রমিক প্রতিদিন ৫ হাজার ৮০০ কিয়াত বা ২ দশমিক ৭৬ ডলারে উন্নীত হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো মুশকিল হয়ে পড়েছে কর্মীদের জন্য। কারণ ২০১৮ সালের তুলনায় মিয়ানমারে চালের দাম তিন গুণ বেড়েছে। সে হিসাবে বেড়েছে অন্যান্য পণ্যের দাম। তাই মজুরি বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেন না কর্মীরা।

অন্যদিকে, বেকারত্ব ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণের সমাধান হিসেবে বিদেশে অভিবাসনে নাগরিকদের উৎসাহিত করছে সামরিক শাসকরা। অবশ্য দেশ ছাড়ার অন্য কারণও রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘাতে বেশি প্রভাবিত হয়েছেন তরুণ কর্মীরা, যা তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করছে। জাপানের মালিকানাধীন একটি পোশাক কারখানার সংশ্লিষ্টরা জানান, চাকরি ছাড়ার কারণ হিসেবে বিদেশে পাড়ি জানানোর কথা বলছে ৬০-৭০ শতাংশ কর্মী।

অর্থসংবাদ/এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার