প্রতারণা, অর্থপাচার এবং অবৈধ ব্যবহার ঠেকানোর লক্ষ্যে স্থানীয় আটটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলারে লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইরাক। যুক্তরাষ্ট্রর অর্থ বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তার বাগদাদ সফরের কয়েক দিন পর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইরাক। সোমবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যেক দিনের ডলারের নিলামে ওই আট ব্যাংক অংশ নিতে পারবে না। আমদানি-নির্ভর দেশটির অর্থের অন্যতম উৎস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নিলাম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার নেওয়ার পর প্রতিবেশি ইরানে তা পাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান- উভয়েরই বিরল মিত্র এই দেশটির যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ আটকা রয়েছে। তেলের রাজস্ব আর অর্থ লেনদেনে যাতে ইরাকের প্রবেশাধিকার বাধাগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে ওয়াশিংটনের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করে দেশটি।
ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত নথিতে ডলার লেনদেনে নিষিদ্ধ করা ব্যাংকগুলোর তালিকা দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাংক হলো- আশুর ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফরেইনভেস্টমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক অব ইরাক, ইউনিয়ন ব্যাংক অব ইরাক, কুর্দিস্তান ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংক ফর ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আল হুদা ব্যাংক, আল জানুব ইসলামিক ব্যাংক ফর ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স, আরাবিয়া ইসলামিক ব্যাংক এবং হাম্মুরাবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এই বিষয়ে ইরাকের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের কর্মকর্তাদের মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনও সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমরা ইরাকি আর্থিক ব্যবস্থাকে অপব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অব্যাহত পদক্ষেপের প্রশংসা করি।
এর আগে, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ইরাকের ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ইরানে ডলার পাচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক কড়াকড়ির অংশ হিসেবে দেশটির ১৪টি ব্যাংকের ডলার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল বাগদাদ। ওয়াশিংটনের এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানোর পর ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ইরাকি ও মার্কিন কর্মকর্তারা।
ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, যেসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তারা অন্যান্য মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবেন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের শীর্ষ নিষেধাজ্ঞা কর্মকর্তা ব্রায়ান নেলসন বাগদাদে ইরাকের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। অপরাধ, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িতদের হাত থেকে ইরাকি ও আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থাকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, বৈঠকে সেই বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।
নেলসনের সফরের সময় ইরাকের আল-হুদা ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ। ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে ইরাকের এই ব্যাংক বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।