উইকেটের পেছনে মাহফুজুর রহমান রাব্বির ক্যাচ নিলেন সাদ বেগ। তিনি নিজেই দুই হাত উঁচিয়ে সতীর্থদের উজ্জীবিত করতে চাইলেন। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে রাজ্যের হতাশা। অষ্টম উইকেটে রাব্বির এই উইকেটই যেন বাংলাদেশের হতাশার গল্প লিখে ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকার বেনোনিতে। সেখান থেকে অলৌকিক কিছু করা হয়নি আর শেষ পর্যন্ত।
যুব বিশ্বকাপের সেমিতে যেতে ৩৮ ওভারে ম্যাচ শেষ করতে হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু নির্ধারিত সেই ওভার তো বটেই, পুরো ম্যাচটাই বাংলাদেশের জেতা হলো না। সেমিফাইনালের অনেকটা কাছে গিয়েও ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে যুবা টাইগাররা ম্যাচ হেরেছে ৫ রানে। পাকিস্তানের ১৫৫ রানের লক্ষ্য অতিক্রম করতে গিয়ে জুনিয়র টাইগাররা অলআউট হয়েছে ১৫০ রানে।
প্রথম ইনিংস শেষের পর বাংলাদেশ হারবে, এমন বাজি ধরার লোক খুব কমই ছিলেন। এমনকি পাকিস্তানের খেলোয়াড়রাই হয়ত বিশ্বাস করতে পারেননি নিজেদের এমন ভাগ্যের কথা। তবে উবাইদ শাহ একাই শেষ করলেন টাইগারদের স্বপ্ন। তার বোলিং তোপে পুড়ে ছাই হলো বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশা। একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট। আলী রাজার ভাগ্যে গিয়েছে ৩ উইকেট। তাতেই বাংলাদেশ ফিরল সেমিফাইনালের একদম কাছ থেকে।
যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যেতে হলে কেবল জিতলেই হতো না, বরং পাকিস্তানের রানরেটও টপকাতে হতো বাংলাদেশকে। বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকই সেরে রেখেছিলেন। তবে ব্যাটাররাই যেন খেই হারালেন। পাকিস্তানি পেসারদের তোপের মুখে দলীয় শতরান পার হওয়ার আগেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে জুনিয়র টাইগাররা।
সেখান থেকে কিছুটা ভাল অবস্থানে এসেছিল বাংলাদেশ। তবে শিহাব জেমস আর মাহফুজুর রাব্বির কল্যাণে অনেকটাই এগিয়ে যায় যুবা টাইগাররা। এরপর অবশ্য আরেকদফা ছন্দপতন। শেষ উইকেটে দুই পেসার মারুফ মৃধা এবং রোহানাত দৌলা বর্ষন হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর ব্যাটার। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ৬ রান দূরে থাকতেই ভাঙ্গে তাদের প্রতিরোধ। বাংলাদেশের হার ৫ রানে।
যদিও শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। জিশান আলম ৪টি চারে বাংলাদেশকে দ্রুত সূচনাই এনে দিয়েছিলেন। তবে উবাইদ শাহের লাফিয়ে ওঠা বলে উইকেটের পেছনে সাদ বেগকে ক্যাচ দেন তিনি। শিবলিও আউট হয়েছেন একইভাবে। ১১ বলে ৪ রান করেই সাজঘরে তিনি।
রিজওয়ান আউট হয়েছেন আলী রাজার বলে। কাকতালীয়ভাবে সেটাও সাদ বেগকে ক্যাচ দিয়ে। ৫০ পেরুনোর আগেই নেই বাংলাদেশের ৩ উইকেট। প্রত্যেকেই পেস বোলারদের হাতেই নিজের উইকেট খুইয়েছেন। আহরার আমিন এবং আরিফুল ইসলাম কিছুটা আশা দেখালেও ৭৬ রানে ফিরতে হয় আহরারকে। উবাইদের বলে স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন হারুন আরশাদ।
এক রান পরেই আরও একটি অসাধারণ ফিল্ডিং। এবার শামল হুসাইনের উড়ন্ত ক্যাচে সাজঘরের পথ ধরেছেন মিডল অর্ডারের বড় ভরসা আরিফুল। শেখ পারভেজ জীবনও টিকতে পারেননি। ৯ বলে ২ রান করে পয়েন্টে মিনহাসকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। বোলার সেই উবাইদ শাহ।
দলীয় ১২৩ রানে শিহাব আর ১২৪ রানে মাহফুজুর রাব্বির উইকেটই বাংলাদেশকে নিয়ে যায় খাদের কিনারায়। ১২৭ রানে ইমন আউট হলে বাংলাদেশের হার হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার। কিন্তু সেখান থেকেই বর্ষন আর মারুফের প্রতিরোধ। ২৩ রানের জুটি দেখাচ্ছিল জয়ের স্বপ্ন। যদিও একেবারে শেষে এসে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে যান মারুফ। ৫ রানের হারে সুপার সিক্স থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে রোহানাত দৌলা বর্ষন এবং শেখ পারভেজ জীবনের অসাধারণ বোলিং নৈপুণয়ে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো পাকিস্তানও একশ পেরুবার আগেই ৬ উইকেট হারায়। সেখান থেকে মিনহাস এবং আসফান্দের ব্যাটে ভর করে দেড়শ পার করে তারা। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে হারাতে ওটাই হয়ে যায় যথেষ্ট।