বছরের প্রথম মাসে এশিয়ার কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম ছিল বেশ শ্লথ। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, এ অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে ভোক্তা চাহিদা কম থাকায় ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে বাজার। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এ শ্লথতা এখন এশিয়ার গোটা উৎপাদন কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে শ্লথতার মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি দেশের উৎপাদন খাত।
সাইশিন ও এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল অনুসারে, জানুয়ারিতে চীনের বেসরকারি খাতে ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) ছিল ৫০ দশমিক ৮ পয়েন্ট। গত ডিসেম্বরও সূচক একই ছিল। তবে ৫০ পয়েন্ট অতিক্রম করায় কোনোমতে, সংকোচন এড়ানো গেছে। অবশ্য এ সূচকের সঙ্গে সরকারি জরিপের বৈপরীত্য রয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, উৎপাদন কার্যকলাপ এ নিয়ে টানা চার মাসে সংকুচিত হয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হিসেবে রয়ে গেছে, যা ভোক্তা চাহিদার দুর্বলতাকে নির্দেশ করে। সব মিলিয়ে বছরের প্রথম মাসে চীনে শ্লথ অর্থনীতি বিরাজ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারকে প্রত্যাশিত পথে পরিচালিত করতে প্রয়োজন নীতি সহায়তার।
অবশ্য চিত্রটি চীনা ভোক্তা চাহিদার সঙ্গে এশিয়ার বাজারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিছু ক্ষেত্রে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ায় ১৯ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার কারখানা কার্যক্রম সম্প্রসারণ হয়েছে। বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উৎপাদন কার্যক্রমে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে বেশি। জরিপ বলছে, মালয়েশিয়ায় কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে এবং ফিলিপাইনে ধীরগতিতে সম্প্রসারণ হয়েছে।
দাই-ইচি লাইফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান উদীয়মান বাজারবিষয়ক অর্থনীতিবিদ তোরু নিশিহামা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির স্থিতিস্থাপকতার কারণে চীনের দুর্বল ভোক্তা চাহিদার অভিঘাত কিছুটা পূরণ করতে পেরেছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দুই ক্ষেত্রে চীনে ভোক্তা চাহিদা দুর্বল।’
মহামারী-পরবর্তী সময়ে চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেইজিং বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আবাসন খাতে ধস, স্থানীয় সরকারের ঋণ ও বৈশ্বিক পর্যায়ে চাহিদা কমে আসায় দেশটি হিমশিম খাচ্ছে। সর্বশেষ গত জানুয়ারির শেষ দিকে দেশটির অন্যতম আবাসন প্রতিষ্ঠান চায়না এভারগ্র্যান্ডকে অবসায়নের নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে জাপানে উৎপাদন কার্যক্রমও জানুয়ারিতে টানা অষ্টম মাসের মতো সংকুচিত হয়েছে। কারণ উৎপাদন ও নতুন ক্রয়াদেশ কমে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, অটো জায়ান্ট টয়োটা মোটর করপোরেশনের অন্যতম ইউনিট দাইহাতসুর উৎপাদন স্থগিতাদেশ অর্থনীতিতে নতুন আঘাত হিসেবে কাজ করছে।
টয়োটা গ্রুপ জাপানের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। এর সঙ্গে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অনেক যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী জড়িত। জাপানের শিল্প উৎপাদন ডিসেম্বরে বাড়লেও সরকারি জরিপ জানায়, জানুয়ারিতে উৎপাদন ৬ দশমিক ২ শতাংশ কমবে। দাইহাৎসুর উৎপাদন স্থগিত এ পরিস্থিতিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলেও জানান এক সরকারি কর্মকর্তা।
এর বিপরীতে ভারতে জানুয়ারিতে উৎপাদনে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। সর্বশেষ চার মাসের মধ্যে শক্তিশালী ভোক্তা চাহিদার ভিত্তিতে কারখানার কার্যক্রম দ্রুত প্রসারিত হয়েছে।
গত ৩১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এশিয়ার জন্য দেয়া চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করেছে। এ অনুসারে, ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো চাহিদা ও চীনে প্রত্যাশিত পদক্ষেপকে অন্তর্ভুক্ত করে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
প্রবৃদ্ধির ধারাটি সবক্ষেত্রে মসৃণ হবে না। অর্থনীতি অনুযায়ী ভিন্ন হবে। যেখানে জাপানে দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে, এর বিপরীতে ভারতে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ সম্প্রাসরণ আশা করা হচ্ছে। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী চীনে এ বছর ৪ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে, যা আগের বছরের চেয়ে ধীর। ২০২৩ সালে এ হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ।