ক্যাটাগরি: শিল্প-বাণিজ্য

বিশ্বের পরিত্যক্ত জাহাজের ৩৮ শতাংশই ভাঙা হয় বাংলাদেশে

বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের যাত্রা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে। লাভজনক হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে অনেকগুলো ইয়ার্ড। সেখানে বিদেশ থেকে নানা ধরনের পুরনো জাহাজ এনে ভাঙতে থাকেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।ফলে বর্তমানে বিদেশী জাহাজের ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডগুলো। গবেষণা সংস্থা এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের পরিত্যক্ত ৪৪৬টি জাহাজের মধ্যে ৩২৫টিই ভাঙার জন্য পাঠানো হয় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শিপইয়ার্ডে, এর মধ্যে ১৭০টিই ভাঙা হয় চট্টগ্রামে। যা মোট জাহাজের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। এসব জাহাজের মধ্যে অধিকাংশেই রয়েছে পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর খণিজ পদার্থ অ্যাসবেস্টস।

২০০২ সালে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন জাহাজে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান অ্যাসবেস্টস ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। আর বাংলাদেশে ভাঙা ১৭০টির মধ্যে ১৫৯টি জাহাজই তৈরি হয়েছে ওই নিষেধাজ্ঞার আগে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, জাহাজগুলোতে অ্যাসবেস্টস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, যখন সেগুলো তৈরি করা হয়েছে, ওই সময় জাহাজ নির্মাণে অ্যাসবেস্টস ব্যবহারের ব্যাপক প্রবণতা ছিল।

এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজ ভাঙার সময় দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিকরা বিস্ফোরণ, বিষাক্ত ধোঁয়া এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসেন। জাহাজ ভাঙার সময় এসব ক্ষতিকর পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্রেও। এসব বিষাক্ত উপাদানে বায়ু ও পানি দূষিত হচ্ছে। এসব জাহাজে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান অ্যাসবেসটস নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের জীববৈচিত্র্য। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় জাহাজ ভাঙার কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে নাজুক অবস্থানে পড়ে গিয়েছে সুন্দরবনের মতো সংবেদনশীল বনাঞ্চলও। একইসঙ্গে তা ক্ষতিগ্রস্ত করছে সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকাকে।

শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে ৪৪৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আর অতীতের গবেষণায় এসব শিল্পের এক তৃতীয়াংশ শ্রমিকই ফুসফুসের রোগ অ্যাসবেস্টোসিসে ভুগে মারা গিয়েছে। শুধু ২০২৩ সালেই চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডগুলোতে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ৬ জন, এসব ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১৯জন শ্রমিক।

বাংলাদেশে ভাঙা জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে জাপানি ও দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানির আটটি করে জাহাজ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, গ্রিক, সিঙ্গাপুর, রুশ ও ইন্দোনেশিয়ান কোম্পানির ছয়টি করে জাহাজ। এসব জাহাজের অধিকাংশই ওইসব দেশের পতাকাধারী ছিল না। জাহাজগুলোর মালিকরা বিভিন্ন কারণে সুবিধাজনক দেশের পতাকা ব্যবহার করত। মূলত প্রকৃত মালিককে আড়াল করে অন্য কোনো দেশের নামে জাহাজগুলো নিবন্ধন করা হতো। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সিয়েরা লিওন, কমোরোস, লাইবেরিয়া, পানামা ও গ্যাবনসহ আরো কয়েকটি দেশ। চট্টগ্রামে যে ছয়টি গ্রিক জাহাজ ভাঙা হয়েছিল তাতে কমোরোস, বাহামা ও লাইবেরিয়ার পতাকা ছিল।

জাহাজ ডাম্পিংকারীদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীনা মালিকরা। দেশটিতে জাহাজ রিসাইকেলের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও তারা ভাঙার জন্য ৭১টি জাহাজ বিক্রি করেছে, এর মধ্যে ৫৯টিই এসেছে বাংলাদেশের শিপইয়ার্ডগুলোতে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার