চলমান ডলার সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের চুক্তি করে বাংলাদেশ। সাত কিস্তিতে বিতরণ করা এই ঋণে নানান শর্ত জুড়ে দেয় আইএমএফ। তার মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিলো ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা। এবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ আইএমএফের ঋণের লক্ষ্য ও শর্ত বাস্তবায়নের পথেই রয়েছে। মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। ফলে কমে আসছে সার্বিক মূল্যস্ফীতি। তবে মূল্যস্ফীতি আরও কমাতে আরও ব্যবস্থা নিতে হবে।
গতকাল বুধবার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক আউটলুক প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন। জাপানের টোকিও থেকে বাংলাদেশ সময় সকাল আটটায় অনলাইনে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের চুক্তি হয় গত বছরের ৩০ জানুয়ারি। সাত কিস্তিতে সাড়ে তিন বছরে ঋণের এ অর্থ দেবে আইএমএফ। এর মধ্যে দুই কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। দুই কিস্তির অর্থ পেতে আইএমএফের কিছু শর্ত পূরণও করা হয়েছে। ব্রিফিংয়ে শ্রীনিবাসনের কাছে গতকাল প্রশ্ন ছিল, ঋণ লক্ষ্য ও শর্ত পরিপালনের ঠিক পথে বাংলাদেশ আছে কি না।
জবাবে শ্রীনিবাসন বলেন, দুই মাস আগে ঋণ কর্মসূচি নিয়ে আইএমএফের একটা পর্যালোচনা বৈঠক হয়। তা সন্তোষজনক ছিল। সেই ভিত্তিতে এ কথা বলা যায় যে বাংলাদেশ এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঠিক পথেই আছে। যদিও কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ ভালো করতে পারেনি। যেমন নির্বাচনের কারণে আর্থিক হিসাব এখনো নেতিবাচক বা ঋণাত্মক। তবে চলতি হিসাব ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তাও কেটে যাবে। তাতে আর্থিক হিসাব টেকসই অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।
আইএমএফের এ পরিচালক আরও বলেন, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও সংকটে পড়ে। আর এ কারণেই দরকারি হয়ে ওঠে আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচির। কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে অনেক শর্ত (পিলার) দেওয়া হয়, যার অন্যতম হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। আরেক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে রাজস্ব আদায়ে টেকসই ব্যবস্থা তৈরি করা, যাতে ঝুঁকিতে থাকা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা যায়।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির গড় ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে একটু কমেছে মূল্যস্ফীতি।
রাজস্ব আয় সংগ্রহ একটা বড় বিষয়—এমন মন্তব্য করে শ্রীনিবাসন বলেন, বাংলাদেশের রাজস্ব আয় তেমন বাড়ছে না, আবার ব্যয়ও করা হচ্ছে বেছে বেছে। এ দুইয়ের সমন্বয়টা জরুরি। তিনি বলেন, সুদের হার বাড়ছে। প্রয়োজনে মুদ্রানীতি আরও কঠোর করতে হবে।
নিকট ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে—এমন প্রশ্ন করা হলেও আইএমএফের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন কোনো জবাব দেননি।
অর্থসংবাদ/এমআই