তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, বৈশ্বিক অস্থিতিশীল অর্থনীতির মাঝে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক থেকে প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত ঝুঁকি ও বিপর্যয় ডেকে আনবে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোর পোশাক আমদানি ও চাহিদা ভাল নয়, এবং স্থানীয় পর্যায়ে আমরা (বিজিএমইএ) উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির চাপে আছি তখন প্রণোদনা কমানোর পদক্ষেপ শিল্প ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের যে নিম্নমূখী প্রবণতা ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টে যে চাপ রয়েছে, সেই বাস্তবতায় এরকম একটি পদক্ষেপ আমাদের অর্থনীতির জন্য মোটেই সহায়ক নয়, বরং তা এই সংকটকে আরও ঘনিভূত করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত মঙ্গলবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা বিষয়ক একটি সার্কুলার জারি করেছে, যার মাধ্যমে প্রচলিত নগদ সহায়তার হার ও কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিজিএমইএ বলছে, এই পরিবর্তন শিল্পের জন্য মোটেও সহায়ক ও সময়োপযোগী নয়, বরং এটি শিল্পে অনাকাঙ্খিত ঝুঁকি ও বিপর্যয় ডেকে আনবে।
প্রজ্ঞাপনে ৫টি প্রধান রপ্তানি পণ্যের উপর নগদ সহায়তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পণ্যগুলো হল, টি শার্ট, সুয়েটার, নীটেড শার্ট, পুরুষদের আন্ডার গার্মেন্ট, এবং ওভেন ট্রাউজার ও জ্যাকেট। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই ৫টি পন্যের রপ্তানি মূল্য ছিল ২৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট পোশাক রপ্তানির ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ। এই পণ্যগুলো সামগ্রিক প্রণোদনা ব্যবস্থা থেকে বাদ দেয়ায় মূলত এসব পন্য রপ্তানিকারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো কোনো প্রণোদনাই পাবে না। মোট পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির।
কচি বলেন, ডব্লিউটিওর বিধান অনুযায়ী এই ৫টি পণ্যের উপর নগদ সহায়তা বাদ দেয়া হয়েছে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে ডব্লিউটিও কমপ্লায়েন্ট পদ্ধতিতে বিকল্প প্রণোদনা প্রবর্তনের বিষয়ে সার্কুলারটিতে কোনো উল্লেখ নেই। বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ প্রচলিত ব্যবস্থা কর্তন শিল্প ও অর্থনীতির জন্য সহায়ক পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি না।
এ ব্যবসায়ী নতুন বাজারে প্রণোদনা বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে আরও বলেন, আবার আমরা প্রধান যে ৩টি অপ্রচলিত বাজারে ভাল করছি, অর্থাৎ জাপান, ভারত ও অষ্ট্রেলিয়ায় রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন বাজারের রপ্তানি প্রণোদনাটি বাদ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই ৩টি বাজারে আমাদের পোশাক রপ্তানি ছিল ৩.৭৭ বিলিয়ন ডলার, যা আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮ শতাংশ। এই বাজারগুলো বাদ দেয়ার ফলে সেখানে আমাদের রপ্তানি বিপর্যস্ত হবে।
তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপনে পোশাকখাতে প্রচলিত প্রণোদনার প্রায় ৭০ শতাংশ কর্তন করা হয়েছে। যেখানে চলতি অর্থবছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে সকল প্রণোদনার হার ও কাঠামো ঘোষণা করে, সেখানে স্টেকহোল্ডারদের সাথে কোনো প্রকার পূর্ব আলোচনা ছাড়া হঠাৎ এরকম একটি গুরুতর সিদ্ধান্ত শিল্পকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করবে।
এস এম মান্নান (কচি) বলেন, বিশেষ করে যখন আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোর পোশাক আমদানি ও চাহিদা ভাল নয়, এবং স্থানীয় পর্যায়ে আমরা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির চাপে আছি তখন এরকম একটি পদক্ষেপ শিল্প ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের যে নিম্নমূখী প্রবণতা ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টে যে চাপ রয়েছে, সেই বাস্তবতায় এরকম একটি পদক্ষেপ আমাদের অর্থনীতির জন্য মোটেই সহায়ক নয়, বরং তা এই সংকটকে আরও ঘনিভূত করবে।
অর্থসংবাদ/এমআই