ক্যাটাগরি: ব্যাংক

অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় আইন পরিবর্তন করবে সরকার

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রচলিত অফশোর ব্যাংকিং বা বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল ব্যবসায় আইন পরিবর্তন করতে চলেছে সরকার। নতুন আইন অনুযায়ী, অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জিত ব্যাংকগুলোর সুদ বা মুনাফার ওপর কোনো ধরনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর আরোপ করা হবে না। পাশাপাশি আমানতকারীদের অর্জিত আয়ের ওপরও থাকবে না কোনো কর বা শুল্ক। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ জোরদার করতে এমন আইন প্রণয়ন করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪ ’-এর খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের খসড়া যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠিয়েছে। এ কমিটির পর্যবেক্ষণের পর তা আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ফিরে আসবে। এরপর বিভাগটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য চূড়ান্ত খসড়া পাঠাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

যে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বৈদেশিক উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সৃষ্টি হয় এবং প্রচলিত ব্যাংকিং আইনকানুনের বাইরে আলাদা আইনকানুনের মাধ্যমে এ তহবিল পরিচালিত হয় ও হিসাব সংরক্ষণ করা হয়, তাকেই বলা হয় অফশোর ব্যাংকিং। অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের ভেতরে আলাদা এক ব্যাংকিং ব্যবস্থা। স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং, জাপানি ইয়েন, কানাডীয় ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলার, সুইস ফ্রাঁ ইত্যাদি বৈদেশিক মুদ্রায় অফশোর ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা হয়।

চলতি নিয়ম অনুযায়ী, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) না থাকলে আমানতের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ আর টিআইএন থাকলে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। তবে প্রস্তাবিত অফশোর আইনে তা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় জড়িত থাকা ব্যাংক এবং আমানতকারীদের মুনাফার ওপর কোন কর দিতে হবে না।

এদিকে মুনাফার ওপর কর প্রত্যাহার করা হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন আইন পাস হলে বিদেশিদের পাশাপাশি অনাবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকেও আমানত নিতে পারবে তফসিলি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলো। তবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করলে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে—এমন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে নতুন আইনের খসড়ায়।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, আর্থিক বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে বা দেরি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটকে দুই হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রা জরিমানা করতে পারবে। আইন লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে জরিমানা আরোপের প্রথম দিন থেকে পরের প্রতিদিনের জন্য বাড়তি জরিমানা গুনতে হবে ১০০ ডলার করে। ইউনিটের কেউ মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দাখিল করলে জরিমানা হবে পাঁচ হাজার ডলার করে।

আইন না থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা আধা পৃষ্ঠার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশে একভাবে অফশোর ব্যাংকিং চালু আছে ১৯৮৫ সাল থেকেই। দীর্ঘকাল পর ২০১৯ সালে অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর বেশ কয়েকটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।

অর্থসংবাদ/এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার