চলতি ২০২৩-২৪ বিপণন বর্ষে (জুলাই-জুন) বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন ২৩০ কোটি ৭০ লাখ টনে দাঁড়ানোর পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল (আইজিসি)। এক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি। যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অর্লিন্সে গত বুধবার গ্রেইন কাউন্সিলের ৫৯তম কাউন্সিল সেশনে এ তথ্য জানানো হয়।
কাউন্সিলের সভায় উঠে আসে ২০২৩-২৪ বিপণন বর্ষে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়তে যাচ্ছে আগের বিপণন বর্ষের তুলনায় ২ শতাংশ। তবে এ সময় খাদ্যশস্যের ভোগ উৎপাদনকেও ছাড়িয়ে যাবে। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ বিপণন বর্ষে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ভোগ দাঁড়াবে ২৩১ কোটি ৪০ লাখ টনে।
ফলে এ সময় বৈশ্বিক মজুদ ১ শতাংশ কমে দাঁড়াবে ৫৯ কোটি টনে। এ নিয়ে টানা সপ্তম বছরের মতো কমতে যাচ্ছে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুদ।
সংকুচিত হতে যাচ্ছে কৃষিপণ্যগুলোর বিশ্ব বাণিজ্যও। আইজিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ বিপণন বর্ষের তুলনায় এবার খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য ৩ শতাংশ কমে দাঁড়াবে ৪১ কোটি ৫০ লাখ টনে। বিশেষ করে গম, ভুট্টা ও বার্লির আমদানি-রফতানি এবার কমতে যাচ্ছে।
তবে আগামী বিপণন বর্ষে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের আবাদি এলাকা কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইজিসি। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ বিপণন বর্ষে শুধু গমেরই আবাদি এলাকার পরিমাণ কমবে ১ শতাংশ। এছাড়া সরিষা, ক্যানুলার মতো কিছু তেলবীজেরও আবাদি এলাকা কমার আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণ সম্পর্কে সংস্থাটির মূল্যায়ন হলো আগামী বিপণন বর্ষে বেশকিছু খাদ্যশস্যের দাম কমে আসবে। প্রত্যাশামতো মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিশ্বব্যাপী কৃষকরা পণ্যগুলোর আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন। তবে কমলেও এসব কৃষিপণ্যের আবাদি এলাকা হবে গত কয়েক বছরের গড়ের চেয়ে বেশি।
অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়লেও বিশ্বব্যাপী এবার চালের উৎপাদন ১ শতাংশ কমে দাঁড়াবে ৫১ কোটি ১০ লাখ টনে। অন্যান্য মহাদেশে বাড়লেও কৃষিপণ্যটির প্রধান উৎপাদনকারী মহাদেশ এশিয়ায় এবার তা ব্যাপক মাত্রায় কমবে বলে আশঙ্কা আইজিসির।
সংস্থাটি জানিয়েছে, পরিমাণে কমলেও এবারো চালের শীর্ষ রফতানিকারকের অবস্থান ধরে রাখবে ভারত। ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ায় চালের প্রধান ভোক্তাদেশগুলোয় এবার আমদানির চাহিদা দেখা যাচ্ছে তুলনামূলক কম। এ ধারাবাহিকতায় ২০২৩-২৪ বিপণন বর্ষে সংকুচিত হতে যাচ্ছে চালের বিশ্ব বাণিজ্যও।
চলতি বিপণন বর্ষে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে সয়াবিন। কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন এবার রেকর্ড ৩৯ কোটি ২০ লাখ টনে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা আইজিসির। সংস্থাটি জানিয়েছে, এবার সয়াবিনের উৎপাদন গত বিপণন বর্ষের তুলনায় ৬ শতাংশ বাড়তে যাচ্ছে। বৃহৎ উৎপাদনকারী দেশগুলোয় বিশেষ করে আর্জেন্টিনায় এবার কৃষিপণ্যটির উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় বাড়বে। এছাড়া পণ্যটির ভোগ ও মজুদ—দুটোই এবার বিশ্বব্যাপী বেড়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে।
তবে গত কয়েক বছর টানা বাড়ার পর সয়াবিনের বৈশ্বিক বাণিজ্য এবার কমতে যাচ্ছে। আইজিসির হিসাব অনুযায়ী, কৃষিপণ্যটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আকার এবার ২ শতাংশ কমে দাঁড়াতে পারে ১৬ কোটি ৮০ লাখ টনে। বিশেষ করে চীন ও আর্জেন্টিনায় এবার কৃষিপণ্যটির আমদানি কমতে যাচ্ছে। রফতানি কমতে যাচ্ছে ব্রাজিল থেকেও।
অর্থসংবাদ/এমআই