গত ডিসেম্বর শেষে এনবিআর ও এনবিআরবহির্ভূত কর রাজস্ব আহরণ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির জন্য এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কিছু পিছিয়ে থাকলেও রাজস্বসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ হওয়ায় ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সংস্থাটি রাজস্ব আদায় করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ছয় মাসে এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব এসেছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
ছয় মাসে আইএমএফ নির্ধারিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও এনবিআরের নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে প্রায় ২৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে সংস্থাটি। পুরো অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের। তবে আইএমএফ পুরো অর্থবছরে এনবিআর ও নন-এনবিআর কর সব মিলিয়ে রাজস্বে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া নির্বাচন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব ও রিজার্ভে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়। তবে পরবর্তী ছয় মাসে তুলনামূলক বেশি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। আগামী জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সরকারকে আরও ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৯০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে।
এটি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছে কর রাজস্বের অধিকাংশ আহরণকারী প্রতিষ্ঠান এনবিআর। সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সত্যি চ্যালেঞ্জিং। তবে বাকি সময়ে তা অর্জনে কাজ করছে এনবিআর। ইতোমধ্যেই রাজস্ব বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ন্যূনতম রিজার্ভ ও রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে ৬৮১ মিলিয়ন ডলারের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ দেওয়ার অনুমোদন দেয় আইএমএফ বোর্ড। তৃতীয় কিস্তির অর্থ পরিশোধের জন্য পর্যালোচনা মিশন আগামী মার্চে আসবে। দলটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সরকারের কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করবে। এরপর মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী মে নাগাদ তৃতীয় কিস্তির প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলার ছাড় করার কথা রয়েছে।
তৃতীয় কিস্তির ঋণের শর্তগুলোর মধ্যে আরও একটি ছিল– গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের বাজেট ঘাটতি যেন ৯০ হাজার ৫২০ কোটি টাকার বেশি না হয়। এটিসহ বাকি চারটি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তবে গত ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভের জন্য কমপক্ষে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এর থেকে কম রয়েছে ৫৮ মিলিয়ন ডলার।
অর্থসংবাদ/এমআই