ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

চীনে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি ছিল নবায়নযোগ্য জ্বালানি

ডিকার্বনাইজেশনভিত্তিক অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে চীন। জোর দিয়েছে পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। গত বছর এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে দেশটিতে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি অবকাঠামো খাতের বিপুল এ বিনিয়োগকে দেশটির ২০২৩ সালের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির সরকারি প্রতিবেদনের তথ্যেও বিষয়টি উঠে এসেছে। খবর স্ট্রেইটস টাইমস।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী সর্বোচ্চ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশও চীন। আবার এটি বায়ু ও সৌর শক্তির শীর্ষ উৎপাদক দেশ। দেশটির জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি খরচ দিন দিন বাড়ছে যার কারণে চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। অন্যদিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০২৬-৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সত্ত্বেও ২০১৫ সালে চালু হওয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বৃহত্তম সম্প্রসারণের জন্য ২০২২ সালে অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

ফিনল্যান্ডভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) গবেষকরা গতকাল একটি নতুন প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ গত বছর চীনের জিডিপি সম্প্রসারণে ৪০ শতাংশ অবদান রেখেছে। সামগ্রিকভাবে ২০২৩ সালে চীনা বিনিয়োগ ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বেড়েছে। এর পুরোটাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির কারণে বেড়েছে। অন্যদিকে রিয়েল এস্টেটের মতো খাতে বিনিয়োগ সংকুচিত হয়েছে। সৌরজ্বালানি, বৈদ্যুতিক যানবাহন, জ্বালানি সক্ষমতা, রেলপথ, বিদ্যুৎ সঞ্চয়স্থান, বিদ্যুৎ গ্রিড, বায়ু, পারমাণবিক ও জলবিদ্যুতে বিনিয়োগ বাড়ছে।

সিআরইএ গবেষকদের মতে, এ খাতগুলোয় ৮৯ হাজার কোটি ডলারের মতো বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা গত বছর জীবাশ্ম জ্বালানিতে মোট বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের প্রায় সমান।

গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রবৃদ্ধি না হলে চীনের জিডিপি ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারত না। সেক্ষেত্রে দেশটির জিডিপি ৫ দশমিক ২ শতাংশের বদলে হতো ৩ শতাংশ। মূল অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ওপর চীনের নির্ভরতা দেশটির প্রবৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, চীন দ্রুতই বৈদ্যুতিক গাড়িতে অতিরিক্ত সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এ খাতের নির্দিষ্ট একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে যে কতটা সৌরশক্তি, ব্যাটারি ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে হলে বছরের পর বছর এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবে এরই মধ্যে অতিরিক্ত সক্ষমতার হুমকি চীনা নীতিনির্ধারকদের সমস্যায় ফেলতে শুরু করেছে।

চীনা শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার জিন গুওবিন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় নতুন যানবাহন তৈরির প্রকল্প গড়ে উঠছে।

জিন গুওবিন গত সপ্তাহে একটি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, দেশটির সরকার অপ্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রকল্পগুলোকে বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারি ভর্তুকি কাজে লাগিয়ে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্প গত এক দশকে অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। গত প্রান্তিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির দিক থেকে মার্কিন গাড়ি নির্মাতা টেসলাকে পেছনে ফেলেছে চীনের বিওয়াইডি। চীনা সরকার জানায়, ২০১৪-২২ সালের মধ্যে চীন সরকার শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ি খাতে ভর্তুকি ও কর অব্যাহতি বাবদ ২০ হাজার কোটি ইউয়ান ব্যয় করেছে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার