অযত্ন আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসা ঢাকা গেট (ফটক) সংস্কার করে পুরোনো আদলে আনার চেষ্টা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রায় আট মাস ধরে সংস্কারের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের পাশে ঐতিহাসিক এই ফটক আজ বুধবার বিকেলে খুলে দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষে দৃষ্টিনন্দন রূপে ফিরেছে স্থাপনাটি।
এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ঢাকা কোষে বলা হয়েছে, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে বাংলার সুবেদার মির জুমলা ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এটি নির্মাণ করেছিলেন।
আজ বিকেলে এক অনুষ্ঠানে সংস্কার করা ঢাকা ফটকের উদ্বোধন করেন ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ফটকের একটি অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের দিকে, মাঝখানের অংশটি সড়ক বিভাজকের ওপর এবং অন্য অংশটি পড়েছে তিন নেতার মাজারের পাশে। মির জুমলার আসাম অভিযানের ‘বিবি মরিয়ম’ নামের কামানটি ওসমানী উদ্যান থেকে এনে ঢাকা ফটকের শক্তি গবেষণা কেন্দ্র অংশে স্থাপন করা হয়েছে। ফটকের আশপাশে দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থাও।
অনুষ্ঠানে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘মোগল আমলের ঢাকা ফটককে আমরা আবার পুনরুজ্জীবিত করতে পারলাম, সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারলাম। এটা ঢাকা দক্ষিণ সিটির জন্য একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। নজরের বাইরে চলে যাওয়া বিষয়গুলো আমরা পুনরুজ্জীবিত করছি। আমি আজ খুবই আনন্দিত। আমার প্রথম সন্তান যেদিন জন্মগ্রহণ করেছে, সেদিন যে রকম আনন্দিত হয়েছিলাম, আজ আমার সে রকম আনন্দ হচ্ছে। এটা একটা উন্মুক্ত জাদুঘর।’ কেউ সংস্কার করা ঢাকা ফটকের পরিবেশ নষ্ট করলে তাঁকে জরিমানাসহ কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে তিনি সতর্ক করেন।
ঢাকাকে পূর্ণ চরিত্রে ফিরিয়ে আনতে হলে এই শহরের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, ‘খুবই অল্প অর্থে ঢাকা ফটকের সংস্কার করা হয়েছে। কোনো বড় বরাদ্দের প্রয়োজন হয়নি, প্রয়োজন হয়েছে ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতা। আরও ৪০০ বছর পরও এটা জীবিত ও অম্লান থাকবে। আমরা অনেক দেশে অনেক কিছু দেখি। যেমন দুবাইয়ে বড় বড় অট্টালিকা, বড় সড়ক ও অবকাঠামো আছে। এগুলো নতুন। অনেক নতুন কিছু করতে পারবে, কিন্তু কয়েক শ বছরের পুরোনো ঢাকা ফটক ও কামান দুবাইয়েও পাওয়া যাবে না।’
প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ সংস্কার দলের নেতৃত্ব দেন। সংস্কারের কাজে চুন, সুপারির কষ, চিটা গুড়, ইটের গুঁড়া, খয়ের ও মধ্যপাড়ার গ্রানাইট পাথরকুচি ব্যবহার করা হয়েছে। ফটকটি সংস্কারে খরচ হয়েছে প্রায় ৮২ লাখ টাকা।
অর্থসংবাদ/এমআই