প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তি সনদ ৬-দফা, পরবর্তীকালে ১১-দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। গত ১৫ বছরে নিরলস পরিশ্রম করে দেশের আর্থসামাজিক সব খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষ উন্নয়নের সুফল উপভোগ করছে। জাতিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস উপহার দিয়েছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করেছি। অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ চিরতরে রুদ্ধ করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি এবং রায় কার্যকর করছি। নতুন প্রজন্ম দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে।
বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এসডিজির লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশ দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ‘এসডিজি প্রোগ্রেস এওয়ার্ড’ পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশে রূপান্তর এবং ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে আমরা সক্ষম হবো, ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসন, শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে চিরতরে মুক্ত করতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণা করেন। এতে আরও তীব্র হয় স্বাধিকার আন্দোলন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জনকে বন্দি করে। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ঢাকা সেনানিবাসে বিচার শুরু করে।
এ মামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা গণআন্দোলন গড়ে তোলে জানিয়ে তিনি বলেন, কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে গর্জে ওঠে সারা বাংলার মানুষ। ১৯৬৯ সালের পুরো জানুয়ারি ছিল আন্দোলনে উত্তাল। প্রতিদিন আন্দোলনের ঘটনা ঘটে এবং ধারাবাহিকভাবে দেশব্যাপী আন্দোলন চলতে থাকে। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায় ছাত্র-জনতার চলমান মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এতে আসাদুজ্জামান শহীদ হন এবং আহত হন আরও অনেকে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্ত করা এবং পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের সংকল্প নিয়ে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলি বর্ষণে ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক এবং মকবুল, আনোয়ার, রুস্তম, মিলন, আলমগীরসহ আরও কয়েকজন শহীদ হন। জনতার কঠিন রুদ্ররোষ এবং গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সবাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ফলে আইয়ুব খানের স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়।
অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আজও অনুপ্রাণিত করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী সব শহীদ গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি শহীদ মতিউরসহ দেশের মুক্তিসংগ্রামের সব শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।