ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

বিনিয়োগকারীদের প্যানিক না হওয়ার আহ্বান বিএসইসি চেয়ারম্যানের

বিনিয়োগকারীদের প্যানিক না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান।

এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, পুঁজিবাজারের গতিপথ ঠিক রাখতে একসময় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিলো। আবার শেয়ারবাজারের উন্নয়ন আরও সমৃদ্ধ করতে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাজারের গতিবিধির উপর ভিত্তি করে ফ্লোর প্রাইস আরোপ এবং প্রত্যাহার করা হয়।

তিনি বলেন, যে কোন স্টক একচেঞ্জে ফরেইন ইনভেস্টরদের অবদান বাজারকে আরও গতিশীল করে তুলে। আমাদের শেয়ারবাজারেও অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে তারা চাচ্ছিলো শেয়ারমূল্য সার্কিট ব্রেকারে আটকে না রেখে বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হোক। চলতি বছরে আমাদের ইনডেক্স, টার্নওভার (লেনদেন) কিন্তু বেশ বেড়েছে। আমরা ইতিবাচক বাজারের দিকে নজর রেখেই ফ্লোর প্রাইস তুলেছি। এতে যেমন টার্নওভার আরও বাড়বে, পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগের কারণে বাজারে আরও কয়েকগুণ গতি ফিরবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সব প্রতিষ্ঠান একত্রে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেন আতঙ্কিত না হয় সেদিকে নজর রাখবে বিএসইসি। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর বেশ ইতিবাচক। তিনি আমাদের পাশে আছেন এবং থাকবেন। সম্প্রতি আমাদের পরামর্শে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ড পুর্নগঠন করেছেন। তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ফেরাতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। আমরাও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করছি। যার সুফল বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে পাবেন।

এদিকে পুঁজিবাজারের শীর্ষ ব্রোকারহাউজগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম আগামীকাল রোববার (২১ জানুয়ারি) বৈঠক ডেকেছে। সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি, বিশেষ করে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের উপর থেকে ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। বিষয়টি অর্থসংবাদকে নিশ্চিত করেছেন ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছায়েদুর রহমান।

তিনি বলেন, ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে ব্যাপারে করণীয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। আমরা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চাই, যাতে বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহার হলেও উদ্বেগের কিছু নেই। দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিরতা অনেকটাই কেটে গেছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। সামষ্টিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে চাপমুক্ত হচ্ছে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেকটা যৌক্তিক পর্যায়ে আছে। তাই বাজার নিয়ে উদ্বেগের তেমন কিছু নেই। শুধু ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হন, বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি না হয় সে লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের কথা বলবেন। পাশাপাশি নিজেরা বিনিয়োগে থাকার চেষ্টা করবেন।

এদিকে সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একত্রে কাজ করার অঙ্গীকারকে সামনে রেখে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ‎আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে উন্নয়ন কীভাবে ত্বরান্বিত করা যায় সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এছাড়া আইনের মধ্যে থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর তারল্য আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের অবদান আরও উল্লেখযোগ্য করার ব্যাপারটিও বৈঠকে উঠে এসেছে।

গত বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারের ৩৫ কোম্পানি ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলো থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। শেয়ারদরে লাগাতার পতন ঠেকাতে গত চার বছরে কয়েক দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়।

এদিকে শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হলেও ৩৫টি কোম্পানির উপর তা বহাল থাকবে। কোম্পানিগুলো হলো- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বারাকা পাওয়ার, বিএটিবিসি, বেক্সিমকো, বিএসসিসিএল, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডিবিএইচ, ডোরিন পাওয়ার, এনভয় টেক্সটাইল, গ্রামীণফোন, এইচআর টেক্সটাইল, আইডিএলসি, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, ইসলামী ব্যাংক, কেডিএস লিমিটেড, কেপিসিএল, কট্টালি টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, মেঘনা পেট্রলিয়াম, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল পলিমার, ওরিয়ন ফার্মা, পদ্মা অয়েল, রেনাটা, রবি, সাইহাম কটন, শাশা ডেনিমস, সোনালী পেপার, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, শাহজিবাজার পাওয়ার, সামিট পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার