২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ কয়লা রফতানি হয়েছে। ওই বছর প্রথমবারের মতো রফতানি ১০০ কোটি টন ছাড়িয়ে যায়। মূলত বিদ্যুৎ গ্রিডে জ্বালানিটির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে রফতানিতে এমন উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। খবর রয়টার্স।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধের অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চলছে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে বর্তমান বিশ্ব। জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলনে প্রথমবারের মতো তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বহুমুখী প্রচেষ্টার পরও কয়লার ব্যবহার বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ফলে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপলারের দেয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটি ৪০ লাখ টন তাপীয় কয়লা রফতানি হয়েছে। ২০২২ সালের তুলনায় রফতানি ৬ কোটি ২৫ লাখ টন বা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।
জলবায়ুবিষয়ক থিংক ট্যাংক এম্বার জানায়, গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর পর্যন্ত বৈশ্বিক কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৯৫ টেরাওয়াট ঘণ্টা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে ১ শতাংশ। অন্যদিক অক্টোবর পর্যন্ত কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে কার্বন নিঃসরণও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। নিঃসরিত হয়েছে ৭৮৫ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সমজাতীয় গ্যাস, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ কোটি ৬৭ লাখ টনেরও বেশি।
এশিয়ার দেশগুলো এখনো জ্বালানি হিসেবে কয়লার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এটির ব্যবহার রোধে এ অঞ্চলের দেশগুলোয় নীতিগত চাপও কম। ব্যাপক মজুদের পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী হওয়ায় এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি চাহিদার বড় একটি অংশই পূরণ করে কয়লা। ফলে এখানে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও রফতানি দুটোই বাড়ছে সমানতালে। তবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বন্ধে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করেছে।
কিন্তু কয়লার ব্যবহার ও বাণিজ্যের ভৌগোলিক অঞ্চল সংকুচিত হয়ে এলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় এটির ব্যবহার, রফতানি ও নিষ্কাশন অব্যাহত বাড়ছে। গত বছর তাপীয় কয়লা রফতানিতে বিশ্বের শীর্ষ দেশ ছিল ইন্দোনেশিয়া। বছরজুড়ে দেশটি ৫০ কোটি ৫৪ লাখ টন রফতানি করে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ বা ৫ কোটি ৪০ লাখ টন বেশি। কেপলার জানায়, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক কয়লা রফতানিতে অর্ধেকেরও বেশি অবদান ছিল ইন্দোনেশিয়ার।
অস্ট্রেলিয়া সমাপ্ত বছরে ১৯ কোটি ৮০ লাখ টন কয়লা রফতানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ কোটি ২৫ লাখ টন বা ৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে দেশটি। অন্যদিকে রাশিয়া ১০ কোটি ৩০ লাখ, দক্ষিণ আফ্রিকা ছয় কোটি ও কলম্বিয়া ৫ কোটি ১০ লাখ টন রফতানি করেছে।
আমদানির দিক থেকে শীর্ষে ছিল চীন। দেশটি রেকর্ড ৩২ কোটি ৫০ লাখ টন তাপীয় কয়লা আমদানি করে, ২০২২ সালের তুলনায় যা ১০ কোটি ৯০ লাখ টন বেশি। ১৭ কোটি ২০ লাখ টন আমদানির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত, ১০ কোটি ৯০ লাখ টন আমদানির মধ্য দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে জাপান, আট কোটি টন আমদানির মধ্য দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে দক্ষিণ কোরিয়া ও ৫ কোটি ১০ লাখ টন আমদানির মধ্য দিয়ে পঞ্চম স্থানে তাইওয়ান। এছাড়া ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামও গত বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কয়লা আমদানি করেছে।
বিশ্লেষকরা জানান, অন্যান্য অঞ্চলে কমলেও এশিয়ার দেশগুলোয় কয়লার ব্যবহার ও আমদানি আরো বাড়বে। বিশেষ করে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলো লম্বা সময় ধরে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে জ্বালানিটি ব্যবহার করবে।