ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

ব্যারেলপ্রতি ৭৪ ডলারে নামতে পারে জ্বালানি তেলের দাম

লম্বা সময় ধরেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক সরবরাহ কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক ও এর সহযোগী ওপেক প্লাস। উদ্দেশ্য দাম বাড়ানোর মাধ্যমে লোকসান এড়ানো। কিন্তু জোটের বাইরের দেশগুলো থেকে উত্তোলন ও সরবরাহ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানিটির উত্তোলন বাড়াচ্ছে ব্যাপক মাত্রায়। ফলে চলতি বছর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের গড় দাম নিম্নমুখী থাকবে বলে জানিয়েছে বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ।

সিটির গবেষণা বিভাগ সম্প্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের মূল্য পূর্বাভাস সংশোধন করে কমিয়েছে। চলতি বছর এটির গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৪ ডলার ধরা হয়েছে। তবে চলতি বছর বাজার আদর্শটির দাম ৭০ ডলারের নিচে নামবে না বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া আগামী বছরের জন্যও পূর্বাভাস কমানো হয়েছে।

সিটি গ্রুপ এক নোটে জানায়, এ বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ বাড়লেও সম্প্রতি কিছু বিষয় উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের কারণে লোহিত সাগর দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। অনেক শিপিং কোম্পানি আগাম ঝুঁকি মোকাবেলায় এ রুট এড়িয়ে চলছে। এতে কিছু সময়ের জন্য সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে। সংঘাত শিথিল হয়ে এলে আবারো সরবরাহ বাড়বে।

এর আগে দেয়া এক পূর্বাভাসে সিটি গ্রুপ জানিয়েছিল, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ব্রেন্টের গড় দাম নামতে পারে ৭০ ডলারে। নতুন পূর্বাভাসে তা আরো কমানো হয়েছে। ব্যারেলপ্রতি গড় বার্ষিক মূল্য ধরা হয়েছে ৬০ ডলার।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ ডলারেরও বেশি কমেছে। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী। দেশটির অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে ফের হতাশা দেখা দেয়ায় জ্বালানিটির বাজারে এমন দরপতন হয়েছে। অন্যদিকে পণ্যটির ভবিষ্যৎ সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের কারণেও দাম কমেছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।

আইসিই ফিউচারস এক্সচেঞ্জে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ১ ডলার ১৯ সেন্ট বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৭৭ ডলার ১০ সেন্টে। অন্যদিকে পণ্যটির মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ১ ডলার ২১ সেন্ট বা ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৭১ ডলার ১৯ সেন্টে।

সিটি গ্রুপের বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখা না দিলে চলতি বছর নিম্নমুখী চাহিদার বিপরীতে মাত্রাতিরিক্ত সরবরাহের ধারা অব্যাহত থাকবে। জ্বালানি তেলের দামও নিম্নমুখী থাকবে। ফলে ওপেক প্লাস বছরজুড়ে উত্তোলন কমানোর নীতি বহাল রাখবে। তবে আগামী বছর এ নীতি থেকে ধারাবাহিকভাবে সরে আসতে পারে জোটটি।

২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে জোটভুক্ত কয়েকটি দেশ দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়াতে গত বছর কয়েক দফায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রফতানি কমায় জোটের সদস্য দেশগুলো। ফলে জ্বালানিটির বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়। তবে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) বলছে, উত্তোলন ও রফতানি কমানোর এ ধারা অব্যাহত থাকলেও চলতি বছর সরবরাহ উদ্বৃত্তে থাকবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতসহ বিশ্বজুড়ে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও এ বছর জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার পর্যন্ত যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানিটির উত্তোলন ও রফতানি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি মাত্রায় বাড়াচ্ছে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার