ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

বিশ্ববাজার থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ জ্বালানি তেল কিনেছে চীন

জ্বালানি সংকট এড়াতে গত বছরজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়িয়েছে চীন। ফলে আমদানি বাড়াতে হয়েছে বিপুল পরিমাণে। বছর শেষের হিসাব বলছে, দেশটি ২০২৩ সালে বিশ্ববাজার থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনেছে।

তথ্য বলছে, কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় ২০২০ সালে থেকেই কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল চীনের অর্থনীতি। ফলে সেখানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা তলানিতে নামে। তবে গত বছরের শুরুতে বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ায় অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করে। ফলে জ্বালানিটির চাহিদা ব্যাপক মাত্রায় বাড়ে। আর এ চাহিদায় সাড়া দিতেই দেশটিকে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি করতে হয়েছে।

চীনের শুল্ক বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দৈনিক ১ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেলে, যা ২০২০ সালের রেকর্ড আমদানি দৈনিক ১ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ব্যারেলেও বেশি। ওই বছর বেইজিং নিম্নমুখী দামের সুযোগ নিয়ে মজুদ বাড়াতে আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছিল।

মহামারীসংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় চীনে স্থানীয় ভ্রমণ বেড়ে যায়। এতে পরিবহন জ্বালানি চাহিদায় উল্লম্ফন দেখা দেয়। বিশেষ করে জেট জ্বালানি ও গ্যাসোলিনের ব্যবহার আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। তবে সে তুলনায় ডিজেলের চাহিদা অনেকটা দুর্বল ছিল। শিল্প উৎপাদন ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে অনিশ্চয়তাকে এর পেছনে দায়ী করা হচ্ছে।

চীনে ২০২৩ সালে সব ধরনের জ্বালানি চাহিদা ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটিকে সরবরাহ বাড়াতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে রাশিয়া। বিশেষ করে গত বছরের নভেম্বরে মস্কো চীনের শীর্ষ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়। ওই মাসে দেশটি থেকে আমদানি করা হয় দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল করে। জানুয়ারি-নভেম্বর পর্যন্ত রুশ জ্বালানি তেল আমদানি বাড়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ২ শতাংশ।

মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে এশিয়া, বিশেষ করে চীনের বাজারে জ্বালানি তেলের বিক্রি বাড়াতে শুরু করে রাশিয়া।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর ঘোষণা করা হয় প্রাইস ক্যাপ। এতে প্রতি ব্যারেলের মূল্য সর্বোচ্চ ৬০ ডলার বেঁধে দেয়া হয়। পাল্টা জবাবে রাশিয়া এসব দেশে জ্বালানি তেল ও জ্বালানি পণ্য সরবরাহ কমিয়ে দেয়। দেশটি এ সময় বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতা আকর্ষণে দেশটি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামে উল্লেখযোগ্য হারে মূল্যছাড় দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগায় চীনসহ এশিয়ার মূল্যসংবেদনশীল ক্রেতা দেশগুলো।

অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছরও চীনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা ও আমদানি লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়বে। জেট জ্বালানি ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতের চাহিদা এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার