চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেকর্ড ৩ হাজার ৮৫৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশের ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩ হাজার ৮৫৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৩ হাজার ২৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছিলো। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৬২৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিলো ১ হাজার ৯০৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকার।
অপরদিকে একক মাস হিসেবে নভেম্বর মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। এ মাসে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৮৫৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার। এর আগের মাস অর্থাৎ অক্টোবর রমাসে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিলো ৮০৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৪৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিতরণ করা মোট ঋণের মধ্যে ২ হাজার ৫৪৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা গ্রামে বিতরণ করা হয়। আর শহরে বিতরণ করা হয় ১ হাজার ৩১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই ব্যাংকিং মাধ্যমে সিংহভাগ ঋণ গ্রামে বিতরণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এজেন্ট ব্যাংকিং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তার হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। তাই গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যকরী একটি উদ্যোগ।
আলোচ্য এ সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পাশাপাশি আমানত সংগ্রহ বেড়েছে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আমানত সংগ্রহ বেড়েছে ২৫ হাজার ২২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
যেসব অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে ও ব্যাংকিং সুবিধা কম এমন যায়গার মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। শুরুর দিকে পল্লী অঞ্চল থেকে সংগৃহীত আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণের হার খুবই কম ছিল। তবে ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। পাশাপাশি প্রান্তিক অঞ্চলে অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ ব্যাংকিং মাধ্যম। এতে আর্থিক সুবিধা যেমন মানুষের নাগালের মধ্যে চলে গেছে, তেমনি কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। কম টাকায় এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঝামেলামুক্তভাবে হিসাব খোলার কারণে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ হাজার ৯১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা রেমিট্যান্স বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পল্লী অঞ্চলে ৯ হাজার ৯৩৫ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং শহরে ৯৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। নীতিমালা অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়। যেকোন এলাকায় ব্যাংকের শাখা না থাকলেও এখন সারা দেশের মানুষ ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে।
এরপর দেশের ব্যাংক খাতে ২০১৪ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। বর্তমানে এই সেবার গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ১১ লাখ ৯৫ হাজার ২০৫টি। দেশব্যাপী পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে এরকম এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫৮১টি। আর এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার ৫০৬টি।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ প্রদান ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করেন এজেন্টরা। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন উপযোগ সেবার বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর অর্থও উত্তোলন করা যায়। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারেন এসব এজেন্ট। তবে এখনো বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই এজেন্টদের।