ক্যাটাগরি: জাতীয়

দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা

জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়নসহ নানা কারণে বিশ্বের বহু শহর বেশ কয়েক বছর ধরেই বায়ুদূষণের কবলে রয়েছে। মেগাসিটি ঢাকার বাতাসেও নেই কোনো স্বস্তির খবর।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ভারতের রাজধানী দিল্লির বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাতাসেও রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

এদিন সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ১৮২ স্কোর নিয়ে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে ঢাকা।

এ সময় একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি। যার ২৩৩ স্কোর, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা, স্কোর ১৮২। এ ছাড়া তৃতীয় স্থানে ভারতের আরেক শহর কলকতা, যার স্কোর ১৭৯। চতুর্থ স্থানে থাকা পাকিস্তানের শহর করাচি রয়েছে, যার স্কোর ১৭০, পঞ্চম অবস্থানে থাকা মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের স্কোর ১৬৭।

আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

সাধারণত একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে; যেমন: বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)। বায়ুদূষণ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে। এটা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর।

লাগামহীন ঢাকার বায়ুদূষণ যেন দিনের পর দিন বেড়েই চলছে এর মাত্রা। ২০১৬ সালের পর গত আট বছরে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমান সবচেয়ে খারাপ ছিল। আট বছরের মধ্যে ঢাকায় ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের বছর। চলতি বছরের শুরুতে দূষণের মাত্রা কিছুটা কমলেও প্রথম ১৩ দিনের সাত দিনই শীর্ষে ছিল ঢাকার অবস্থান। নানা উন্নয়ন প্রকল্পসহ দূষণের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের এক ধরনের নির্লিপ্ততাকে দায়ী করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠীর যেমন শিশু ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে ছিল। সবশেষ তিন বছরসহ বাকি পাঁচ বছর ছিল অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে। ২০২৩ সালে যা আট বছরের সর্বোচ্চ ১৭১।

চলতি বছরের শুরুর দিন বাদ দিলে বাকি সময়টা বায়ুর মানের কিছুটা উন্নতি হলেও তা সন্তোসজনক নয়। বছরের শুরুর প্রথম ১৩ দিনের মধ্যে সাত দিনই বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল ঢাকা। এই সময়ে ২৮৪ পর্যন্ত উঠেছে।

তাই চলমান শৈত্যপ্রবাহের হাড় কাঁপানো শীতে কুয়াশাকে ধূলার মিশ্রণ অর্থাৎ ধোঁয়াশা বলছেন গবেষকরা। আইন বাস্তবায়নে এখনই কঠোর না হলে আরও চড়া মূল্য দেয়ার শঙ্কা পরিবেশবিদদের।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার