দেশে ২০২৩ সালে বিশ্বের ২১৫টি দেশ থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ বা ৪ লাখ কোটি টাকার পণ্যই এসেছে নয় দেশ থেকে। দেশগুলো হলো চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুর। প্রত্যেকটি দেশ এককভাবে সরবরাহ করেছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি পণ্য। কাস্টম হাউজ ও শুল্ক স্টেশনের শুল্কায়ন মূল্যের হিসাব পর্যালোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমদানি তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে আমদানি পণ্যের সবচেয়ে উৎস চীন ও ভারত। দেশে শিল্পের মেশিনারিজ ও খাদ্যশস্যের বাজার যত বড় হচ্ছে, পণ্য সরবরাহে এ দুই দেশের অংশীদারত্ব ততই বাড়ছে। পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের বাজারে ৬০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকার মেশিনারিজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ করেছিল চীন। গত বছর সেখান থেকে এসেছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশের আমদানি পণ্যের বাজারে চীনের অংশীদারত্ব বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি।
পণ্য আমদানিতে চীনের পরই ভারতের অবস্থান। পাঁচ বছর আগে ভারত থেকে ২৬ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার ৪৭ লাখ টন পণ্য আমদানি করেছিল। গত বছর আমদানি হয়েছে ২ কোটি ৮৭ লাখ টন। যার অর্থমূল্য ৮৯ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। সে হিসাবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ৭০ শতাংশ অংশীদারত্ব বেড়েছে ভারতের।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪১ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার ১ কোটি ৭৬ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। আমদানীকৃত ভোজ্যতেলের বড় একটি অংশই আসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশ থেকে। এছাড়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৭ হাজার ২১১ কোটি টাকার, ব্রাজিল থেকে ২৬ হাজার ৪১৩ কোটি, মালয়েশিয়া থেকে ২৩ হাজার ৯২১ কোটি, রাশিয়া থেকে ২৩ হাজার ৩০৫ কোটি, জাপান থেকে ২২ হাজার ২৪১ কোটি এবং সিঙ্গাপুর থেকে ২১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ।
এনবিআরের তথ্য মতে, বাংলাদেশের মোট আমদানি ব্যয়ের বড় একটি অংশই এলএনজি বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, এলপিজি, পুরনো লোহার টুকরো (রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল), ক্লিংকার (সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল), অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, সার, অপরিশোধিত চিনি, তুলা (বস্ত্র খাতের কাঁচামাল), গম, পাম তেল, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের দখলে।
চীন থেকে বাংলাদেশ শিল্প-কারখানার যন্ত্র, কেমিক্যাল, বস্ত্র খাতের কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক পণ্য ও আসবাবপত্র আমদানি করে। আবার পোশাক তৈরির বেশির ভাগ কাঁচামালও আসে চীন থেকে। যদিও আমদানির বিপরীতে চীনে নামমাত্র পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। ফলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশের মোট পণ্য রফতানির মাত্র ১ শতাংশের কিছুটা বেশি যায় চীনে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে গত বছর খাদ্যশস্য, মসলা, তুলা, মোটরযান, চিনিজাতীয় পণ্য ও জ্বালানি আমদানি হয়েছে বেশি। ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি এসেছে পাম অয়েল। দেশটি থেকে বিভিন্ন ধরনের মসলা ও টায়ারও আমদানি করা হয়েছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে ইস্পাতের কাঁচামাল, খনিজ জ্বালানি, তেলবীজ, তুলা ও বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য। কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি হলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় পরিসরে জ্বালানিটি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এনবিআরের তথ্য মতে, গত বছর ব্রাজিল থেকে গম, চিনি, মাংস এবং নানা ধরনের শুকনো ফল ও মসলা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ভোজ্যতেল, রাবার, দুগ্ধপণ্য, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, রাসায়নিক পদার্থ, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য। খাদ্যশস্য ও বীজ, গম এবং ডালের উল্লেখযোগ্য আমদানি হিস্যা ছিল রাশিয়ার হাতে। জাপান থেকে আমদানি হয়েছে গাড়ি, ইস্পাতের কাঁচামালসহ শিল্পের যন্ত্র। সিঙ্গাপুর থেকে মূলত জ্বালানি আমদানি করা হয়। পাশাপাশি দেশটি থেকে কাঁচা তুলা, ডাল, গম, তেলবীজ ও পাম অয়েলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য এসেছে।
কাফি