ক্যাটাগরি: অর্থনীতি

সমুদ্রপথে বেড়েছে পণ্য পরিবহন খরচ

লোহিত সাগরে চলমান নিরাপত্তা সংকটের কারণে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে ইয়েমেনে হুথিদের দমনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যৌথ বিমান হামলা চালানোয় সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্বের ব্যস্ততম এ রুট এড়িয়ে জাহাজ চলাচল করায় এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, লোহিত সাগরে এ মুহূর্তে শান্তি ফিরে এলেও শিডিউল পুনর্নির্ধারণ করে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হতে অন্তত দুই মাস সময় লেগে যাবে। আর বিকল্প পথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ায় সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগছে। এর প্রভাবে পণ্যবাজারে ফের মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে। খবর রয়টার্স।

খবরে বলা হয়েছে, গত নভেম্বর থেকে ইয়েমেনের হুথিরা ইসরায়েলগামী জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছিল। এর জবাবে সম্প্রতি লোহিত সাগরে যুদ্ধবিমান, জাহাজ ও সাবমেরিন জড়ো করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে তারা ইয়েমেনজুড়ে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে। এমন অবস্থায় বেশির ভাগ কনটেইনার জাহাজ সুয়েজ খাল হয়ে লোহিত সাগর রুট এড়িয়ে চলাচল করছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার এ সংক্ষিপ্ত পথেই বিশ্ব বাণিজ্যের ১২ শতাংশ পরিচালিত হয়। হুথিদের বিরুদ্ধে হামলা শুরুর পর বিরোধপূর্ণ অঞ্চল থেকে সব নৌযানকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এ অবস্থায় পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এরই মধ্যে সাংহাই কনটেইনারাইজড ফ্রেইট ইনডেক্সে দাম এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২০৬ পয়েন্টে। সাংহাই-ইউরোপ রুটে দাম এক সপ্তাহ আগের তুলনায় বর্তমানে প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারের ভাড়া ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ১০৩ ডলার হয়েছে। চলমান ঘটনা প্রবাহ থেকে দূরে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে ৪০ ফুট কনটেইনারে ভাড়া ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৯৭৪ ডলার হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ৯০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যা দখলে রয়েছে এমন কোম্পানিগুলো আগামীতে খরচ বাড়ার ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছে। এ বিষয়ে লজিস্টিকস সংস্থা কুনে প্লাস নাগেলের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল অ্যাল্ডওয়েল বলেন, ‘যদি আজ বলা হয়, বাব আল-মান্দেব প্রণালি জাহাজ চলাচলের জন্য নিরাপদ, তার পরও জাহাজগুলোর রুটিন বিন্যাস করে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পৌঁছাতে ন্যূনতম দুই মাস সময় লাগবে।’

মায়েরস্ক ও হ্যাপাগ-লয়েডের মতো প্রধান কনটেইনার লাইনের মালিকরা সুয়েজ খালের রুট পরিবর্তন করে উত্তমাশা অন্তরীপ বেছে নিয়েছেন। দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে খরচ বেড়েছে। বলা হচ্ছে, লোহিত সাগরে এক মাস আগের চেয়ে পরিবহন খরচ কমপক্ষে দ্বিগুণ হয়েছে। তবে তা কভিড মহামারীকালের চেয়ে কম। এছাড়া আফ্রিকার দিকে যাত্রা করা এশিয়া ও ইউরোপের প্রতিটি জাহাজকে বাড়তি খরচের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রতিটি একমুখী সমুদ্রযাত্রার জন্য মোটামুটি ১০ দিন ও ১০ লাখ ডলারের বাড়তি জ্বালানি খরচ গুণতে হচ্ছে।

গতকাল চারটি তেল ট্যাঙ্কার লোহিত সাগর এড়াতে গিয়ে মাঝে সমুদ্র থেকে ঘুরে গেছে। আরো পাঁচটি হয় দিক বদল করেছে অথবা যাত্রা বিরতি করেছে। ব্রেকওয়েভ অ্যাডভাইজার্সের ব্যবস্থাপনা অংশীদার জন কার্টসোনাস বলেছেন, ‘এ অবস্থায় ট্যাঙ্কারের ভাড়া বাড়বে ও ফিউচার মার্কেটে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। তবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই এমন পণ্যের চালান কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

ফ্রেইট প্লাটফর্ম জেনেটার প্রধান বিশ্লেষক পিটার স্যান্ড বলেন, এ সংকট যত দীর্ঘ হবে, সারা বিশ্বে সমুদ্রের পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল আরো বিঘ্নিত হবে ও খরচ বাড়তে থাকবে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার