উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকার সংকট, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত মোটাদাগে এসবই হচ্ছে এখন দেশের আর্থিক খাতে প্রধান সমস্যা। এসব সমাধানের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের।
তবে প্রভাবশালীদের চাপের কারণে খাতটি পুরোপুরি তদারকিতে রাখতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে দুবার মুদ্রানীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টা করে থাকে। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী সপ্তাহে জানুয়ারি-জুন মেয়াদের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আগে থেকে মুদ্রানীতির খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করা হলেও নতুন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই কাজটি করা হবে। এবারও নীতি সুদের হার আরও বাড়িয়ে টাকাকে আরও দামি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে সুদহার বেড়ে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। অন্যসব নীতি চলবে আগের মতোই।
এদিকে মুদ্রানীতি চূড়ান্ত করার আগে আগামী শনিবার মুদ্রানীতি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। নতুন মুদ্রানীতি কমিটিতে গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রয়েছেন অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদা ইয়াসমীন।
দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ। গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে ও আগামী জুনের মধ্যে তা ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তবে গত নভেম্বরের শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ হয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদহার কিছুটা বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি নীতি সুদের হারও বাড়িয়েছে। এতে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এদিকে তারল্য সংকট ও সুদহারের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ তলানিতে নেমেছে। গত নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
দেশে দেড় বছর ধরে ডলার সংকট চলছে। এতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে। তবে বাজারে লেনদেন হচ্ছে ১২০ টাকার ওপরে। এর প্রভাবে চলতি হিসাবের পাশাপাশি আর্থিক হিসাবও এখন ঘাটতিতে রয়েছে। ডলার–সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকের বেশি কমেছে। এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৮ কোটি ডলার।
তবে প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ বর্তমানে ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম। এদিকে তদারকিতে দুর্বলতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এক ডজন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে ৩০ শতাংশে উঠেছে। পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক চাহিদামতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারছে না, তাদের চলতি হিসাবেও ঘাটতি রয়েছে। আবার কিছু ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়ম ধরায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের বদলি করার ঘটনাও ঘটছে। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
অর্থসংবাদ/এমআই