আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য চলতি বছরে জার্মানি আরও অনাকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে। দেশটির সরকার অভিবাসন নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনছে। এতে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য দুসংবাদ থাকলেও সহজ হবে দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, নতুন বছরটি আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে। ডেয়ার স্পিগেল ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডিসেম্বরে শলৎস বলেন, তিনি আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘বড় আকারে ডিপোর্টেশন’ বা প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
সরকারি হিসাবে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে জার্মানি সাত হাজার ৮৬১ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে। ‘প্রত্যাবাসন উন্নয়ন আইন’ নামের একটি বিল পাস হলে সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে। এই আইনে আগে থেকে ডিপোর্টেশনের ঘোষণা দেওয়ার ইতি টানা হবে, বাড়ানো হবে বন্দি রাখার সময়সীমা। সেই সঙ্গে যাদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের তল্লাশি ও ফোনের মতো ব্যক্তিগত সম্পত্তি জব্দের বাড়তি ক্ষমতা পাবে পুলিশ। অপরাধীদের ক্ষেত্রে প্রত্যাবাসন আরও দ্রুত হবে।
যেসব দেশে তেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই তাদেরকে ‘নিরাপদ দেশে’র তালিকায় রাখে জার্মানির সরকার। এসব দেশের নাগরিকেরা আশ্রয়ের জন্য কম বিবেচিত হন এবং দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়। এমন দেশের সংখ্যা বাড়াতে চায় জার্মানি। সবশেষ নভেম্বরে এই তালিকায় ঢুকেছে জর্জিয়া ও মলদোভা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে তুরস্কের একটি চুক্তি পুনর্নবায়ন হলে দেশটির আশ্রয়প্রার্থীদেরও দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে।
আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চায় জার্মানি। বর্তমানে একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই বছরের বেশি পর্যন্ত সময় লাগে। প্রস্তাবিত আইনে তা তিন মাস থেকে ছয় মাসে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। আশ্রয় আবেদনকারীদের ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধাগুলোও কমানোর কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে ১৮ মাস পরে ‘কল্যাণভাতা’ পাওয়া যায়; যা তিন বছর পর মিলবে। রাষ্ট্রীয় আবাসনে যারা থাকবেন তাদের খাবার খরচ কেটে নেওয়া হবে।
ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাশ বা নগদ অর্থ প্রদানের বদলে কার্ড ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করছে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য; যাতে তারা পরিবার বা অন্য কাউকে অর্থ পাঠাতে না পারে। হ্যানোফার গত ডিসেম্বরে ‘সোশ্যাল কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করেছে। পূর্বের রাজ্য ঠুরিঙ্গিয়াও আশ্রয় আবেদনকারীদের জন্য কার্ড ইস্যু করেছে। ২০২৪ সালে এই ব্যবস্থা চালু করবে হামবুর্গ ও বাভারিয়াও।
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে। ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে
আগামী মার্চ থেকে বিদেশিরা দক্ষতার ভিত্তিতে সরাসরি জার্মানিতে গিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন। আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্য আনার প্রক্রিয়াও সহজ হবে। ব্যয় বহনের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারলে কর্মীরা তাদের ওপর নির্ভরশীলদের নিয়ে তিন বছরের বসবাসের অনুমতি পাবেন। কিছু দেশের জন্য বিশেষ অভিবাসন কোটার সংখ্যা বাড়ানো হবে।
অর্থসংবাদ/এমআই