ভারতের জুতাশিল্পের আকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৯০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। বর্তমানে দেশটির এই শিল্পের আকার ২৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) নামের এক অর্থনৈতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এই পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে সে জন্য ভারত সরকারকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করে এই প্রতিষ্ঠান। যেমন জুতা আমদানি বন্ধ করা, জুতা কোম্পানিগুলোকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া, আরও ডিজাইন কেন্দ্র স্থাপন ও তাইওয়ানের ঠিকাভিত্তিক উৎপাদনকারীদের ভারতে কার্যক্রম বৃদ্ধি।
জিটিআরআইকে উদ্ধৃত করে ভারতের গণমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বলেছে, ভারতীয় জুতাশিল্পে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন প্রয়োজন। একটি হলো বাজারে চামড়াবিহীন জুতা, যেমন কাপড়ের তৈরি খেলার জুতা, দৌড়ানোর জুতা ও স্নিকার বাজার হিস্যা বর্তমানের ২৫ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জুতার উৎপাদন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প থেকে বৃহৎ কারখানায় স্থানান্তরিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে আটটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে জিটিআরআই। তারা বলছে, ইলেকট্রনিকস ও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন শিল্পের তুলনায় জুতাশিল্প এখনো আদিম পর্যায়ে আছে। তারা মনে করে, ভারতের নিজস্ব ও সেখানে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি জুতা আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে।
সেই সঙ্গে জুতার প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরিতে আমদানি প্রতিস্থাপক নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে তারা, যেমন জুতার উপকরণ তৈরিতে উৎপাদনভিত্তিক প্রণোদনা দেওয়া। স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে জিটিআরআইয়ের পরামর্শ হলো, প্রতি জোড়া জুতা তিন ডলারের কম হলে আমদানিতে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং আমদানি করা জুতার দাম ন্যূনতম পাঁচ ডলার নির্ধারণ।
জিটিআরআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, স্থানীয় পর্যায়ে উচ্চমানের জুতা উৎপাদনে এসব পরামর্শ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে; সেই সঙ্গে ভারতের জুতাশিল্পকে সুরক্ষা দেবে।
অজয় শ্রীবাস্তব ভারতের স্থানীয় পর্যায়ে জুতা উৎপাদনে সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, ভারতের অনেক ব্র্যান্ড চীন ও ভিয়েতনামে তৈরি জুতা বিক্রি করছে।
স্থানীয় পর্যায়ে জুতা উৎপাদন উৎসাহিত করতে উৎপাদনভিত্তিক প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জিটিআরআই। যেমন জুতার সোল, আঠা ও ইথিলিন ফিনাইলের মতো উপকরণ আমদানির পরিবর্তে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছে তারা। তাদের ভাষ্য, এসব উপকরণ আমদানির কারণে উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এসব আমদানি প্রতিস্থাপক পণ্য উৎপাদনে প্রণোদনা দেওয়া হলে ভারতে উচ্চমানের হালকা ও দীর্ঘস্থায়ী জুতা উৎপাদন ত্বরান্বিত হবে।
প্রতিবেদনে ভারতের জুতাশিল্পের বিভিন্ন দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারত বর্তমানে যত জুতা রপ্তানি করছে, তার ৮১ দশমিক ৭ শতাংশ হচ্ছে চামড়ার জুতা। এসব জুতা মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো মান–সচেতন দেশের বাজার লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনের পরামর্শ, মান নিয়ন্ত্রণে কোয়ালিটি কন্ট্রোল অর্ডার বা কিউসিও নামে যে বিধান প্রয়োগ করা হয়, তার প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত চামড়াবিহীন জুতা। ভারতে প্রতিবছর ৯০ কোটি ডলারের জুতা আমদানি হয়, যার ৭৭ শতাংশই এ–জাতীয় জুতা। ভারত চামড়াবিহীন জুতা উৎপাদনে পিছিয়ে আছে বলে প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে এবং সে কারণে এ ধরনের জুতার জন্য তাদের আমদানিনির্ভরতা আছে।
বর্তমানে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জুতা উৎপাদনকারী দেশ। পৃথিবীতে যত জুতা উৎপাদিত হয়, তার ১৩ শতাংশ এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে। তবে রপ্তানির দিক থেকে তারা বিশ্বে নবম। যথারীতি বিশ্বের অন্যান্য পণ্যের মতো জুতা রপ্তানিতেও শীর্ষে চীন; এরপর আছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম, ইতালি, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও তারপর ভারত।