মানুষ জান্নাত থেকে পৃথিবীতে এসেছে। নির্ধারিত সময় শেষে আবার জান্নাতেই ফিরে যাবে। তবে পৃথিবীতে বসবাসের এই সময়টা মানুষের জন্য পরীক্ষার। নিজেকে তার আদি বাড়ি জান্নাতে বসবাসের জন্য উপযোগী করে তোলার। পৃথিবীতে আসার পর অনেকেই শয়তান এবং নফসের প্ররোচনায় পড়ে তার চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির ঠিকানার বিপরীতে চিরস্থায়ী অশান্তির জীবন জাহান্নামে নিজের আবাস্থল বানিয়ে নেবেন।
তবে যারা শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিজেকে রক্ষা করে পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য মনে রেখে নেক আমল করবে, পাপাচার, অশ্লীলতা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে, তাদের জন্যই রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যদি তারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে কিংবা নিজের ওপর জুলুম করে, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃত কর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনেশুনে তার পুনরাবৃত্তি করে না। ’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত, ১৩৫)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর ও তার রাসুলের আদেশমতো চলে, তিনি তাকে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটা বিরাট সাফল্য। (সূরা নিসা, আয়াত, ১৩-১৪)
পৃথিবীর জীবন, কবর, কেয়ামত, পুলসিরাত পার হয়ে একজন মুমিন যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে সে তার নিজের জন্য বিশাল রাজ্য ও রাজত্ব দেখতে পাবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তুমি যখন সেখানে দেখবে, দেখবে ভোগ-বিলাসের উপকরণ এবং বিশাল রাজ্য।’ (সূরা দাহর, আয়াত, ২০)
হাদিস থেকে জানা যায়, যাকে সর্বনিম্ন মর্যাদার বিবেচনায় জান্নাত দেওয়া হবে, সেটিও ১০ দুনিয়ার সমান হবে। (মুসলিম, হাদিস, ১৮৬)
এতো বিশাল আয়তনের জান্নাতে একজন মুমিনের দৈহিক গঠন কেমন হবে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে মৌলিক কথা হলো, জান্নাতে দুনিয়ার এই দৈহিক কাঠামো থাকবে না। জান্নাতের বিশাল রাজ্যে রাজত্ব করার জন্য জান্নাতি সাজে জান্নাতবাসীদের দেহ সাজানো হবে। সেখানে নতুন দেহ, নতুন বয়সে নতুনভাবে মুমিনরা নিজেদের আবিষ্কার করবে। জান্নাতবাসীদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ৬০ হাত।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে তার যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তার উচ্চতা ছিল ৬০ হাত। তিনি তাকে সৃষ্টি করে বলেন, তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগসহ শুনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়। কারণ এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)।
তাই তিনি গিয়ে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম।’ তারা জবাবে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ তারা বাড়িয়ে বলেন, ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদম আলাইহিস সালামের আকৃতিবিশিষ্ট হবে। তার পর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। (বুখারি, হাদিস, ৬২২৭)
এ হাদিস থেকে জানা যায়, মানুষ আদম আলাইহিস সালামের আকৃতিতে অর্থাৎ ৬০ হাত দৈর্ঘ্যের দেহ নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর এই দেহ শক্তিমত্তার দিক থেকে দুনিয়ার দেহের চেয়েও ভিন্ন হবে।