সম্প্রতি রাশিয়া মালিকানাধীন ও ইউরোপের বৃহত্তম হীরা উৎপাদনকারী কোম্পানি আলরোসাকে কালো তালিকাভুক্ত দেখিয়ে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেয় ইউরোপিয়ান কাউন্সিল (ইসি)। আর এই বাণিজ্যে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে কঠোর হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
একই বিজ্ঞপ্তিতে আলরোসার প্রধান নির্বাহী (সিইও) পাভেল মারিনিচেভকেও কালো তালিকাভুক্ত করেছে ইসি। অফিশিয়াল বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, কাউন্সিল ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন বা হুমকির জন্য দায়ী একজন ব্যক্তি এবং একটি সত্তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ইউরোপীয় কাউন্সিল ঘোষণা দিয়েছিল, নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে রুশ হীরা আমদানি, পুনঃরফতানি বা লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় রাশিয়ার আর্থিক সক্ষমতা কমিয়ে আনতে নতুন করে নেয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সংস্থাটি।
ইসি জানায়, হীরা শিল্প রাশিয়ান অর্থনীতির জন্য ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ’। বিশেষ করে আলরোসার সঙ্গে রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারত্ব রয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানিটি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারকে রাজস্ব হিসেবে প্রদান করে।
আলরোসা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে কোনো মন্তব্য জানাতে রাজি হয়নি। তথ্যমতে, কোম্পানিটি রাশিয়ার ৯৫ শতাংশ এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হীরা উৎপাদন করে। হীরার বৈশ্বিক মজুদের তৃতীয় শীর্ষ এ কোম্পানি খনি থেকে উত্তোলিত ৯০ শতাংশেরও বেশি হীরা রফতানি করে।
জানা যায়, মস্কোর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় জোটের ১২তম প্যাকেজ নিষেধাজ্ঞার অংশ এটি। নিষেধাজ্ঞাটি রাশিয়ায় উৎপন্ন হীরা, রাশিয়া থেকে রফতানি করা হীরা এবং তৃতীয় দেশে প্রক্রিয়া করা রুশ হীরা ও গয়নার ওপর আরোপ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক হীরার পাশাপাশি কারখানায় তৈরি সিনথেটিক হীরাও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। তবে তৃতীয় দেশে কাটা অথবা পলিশ করা রাশিয়ান হীরা বা হীরার গয়না আমদানি-রফতানি নিষেধাজ্ঞা পর্যায়ক্রমে আগামী ১ মার্চ থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কার্যকর করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জি৭ জোটের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রাশিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস থেকে বঞ্চিত করতে আন্তর্জাতিকভাবে হীরা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর আগে বেলজিয়াম পশ্চিমা মিত্রদের রাশিয়ান হীরা নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছিল। দেশটি সতর্ক বার্তায় বলেছিল, বিশ্বের ৯০ শতাংশ হীরাই বেলজিয়ামের এন্টওয়ার্প শহর ঘুরে ব্যবহারকারীদের হাতে পৌঁছে।
সেখানকার ১০ হাজারের বেশি মানুষের জীবিকা ধাতুটির বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল।
বেলজিয়ামের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে চোরাই পথে রুশ হীরার বাণিজ্য বেড়ে যাবে। এতে এন্টওয়ার্পের পরিবর্তে দুবাইয়ের হীরা বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠবে। পাশাপাশি রুশ হীরার বড় গন্তব্য হয়ে উঠবে চীন, ভারতের মতো দেশ। এতে ইউরোপের হীরার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।