দেশের আর্থিক খাতের অভ্যন্তরীণ উৎস তথা ব্যাংক, বিল-বন্ড, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নেওয়া পুঞ্জীভূত ঋণ ৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গেল এক বছরেই এই ঋণ বেড়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। তাতে গত অক্টোবর শেষে এই ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৯ হাজার ৯১৮ কোটি টাকায়।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদনে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবরে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের একই মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৯ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানেই তা এক লাখ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।
তবে আলোচ্য সময়ে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ বাড়লেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে অবশ্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ কমেছে।
প্রতিবেদনমতে, গত জুলাই-অক্টোবরে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের প্রকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৫ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ ২২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা কমেছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে বিল-বন্ডের মাধ্যমে সরকারের ধারের পরিমাণ বেড়েছে। গত ১৮ নভেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদি বিল বন্ডের মাধ্যমে সরকার প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা তুলেছে। কিন্তু গতকাল যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি জুলাই-অক্টোবর সময়কালের।
এদিকে গত অক্টোবরের শেষে ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। আর ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-অক্টোবরে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য তফসিলি ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নেওয়ার বদলে ৩ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা পুরোনো ঋণ পরিশোধ করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকে সরকারের প্রকৃত ঋণ ছিল ২২ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। গত জুলাই-অক্টোবরে সরকার ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ না নিলেও ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এ খাত থেকে সরকারের প্রকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা।
সরকার সঞ্চয়পত্র, বিল ও বন্ড বিক্রি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া সরাসরি ঋণই হলো ব্যাংক খাতের ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখিত চার মাসে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার মোট ৮ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা ঋণ করেছে। এর মধ্যে সরকার সঞ্চয়পত্রের আসল বাবদ ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। ফলে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকারের প্রকৃত ঋণ কমে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাংক থেকে সরাসরি অর্থ ধার কমলেও বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষ দুই মাসে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে সরকারের ধারের পরিমাণ বেড়েছে।
বিদায়ী বছরের শুরু থেকে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। তাই অর্থনীতিবিদেরা ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বন্ধের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। কারণ, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বাড়লে তা পরোক্ষভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
অর্থসংবাদ/এমআই