চীনের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় মার্কিন বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের ব্যাপক পতনের পর নতুন বছরে চীনা পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছে ওয়াল স্ট্রিটের বৃহত্তম ব্যাংকগুলো। যদিও বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে শক্ত নীতিগত পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতি আবারো খারাপের দিকে চলে যাওয়ার বড় আশঙ্কা রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগ ব্যবস্থাপকদের অনেকেই।
জেপি মর্গানের বাজার কৌশল নির্ধারণকারীদের পূর্বাভাস হলো এ বছর চীনা পুঁজিবাজারের সূচক এমএসসিআই বাড়তে পারে ১৮ শতাংশ। প্রায় একই ধরনের পূর্বাভাসের ওপর নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে গোল্ডম্যান স্যাকসও।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে নেয়া আর্থিক ও মুদ্রানীতি সংক্রান্ত প্রণোদনামূলক পদক্ষেপগুলো এখন পর্যন্ত চীনের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে খুব একটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। থামেনি স্থানীয় বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগকারীদের দ্রুত শেয়ার বেচে দেয়ার প্রবণতাও। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর চীনা পুঁজিবাজারের এমএসসিআই সূচকের পতন হয়েছে ১৩ শতাংশের বেশি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস্তবতা যেমনই হোক, চীনের বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা। বিষয়টিকে স্যামুয়েল বেকেটের বিখ্যাত অ্যাবসার্ড ঘরানার নাটক ওয়েটিং ফর গডোর সঙ্গে তুলনা দিয়ে সোসিয়েত জেনারেলের গ্লোবাল অ্যাসেট অ্যালোকেশন শাখার প্রধান অ্যালেন বোকোবজা বলেন, ‘এটা অনেকটা যেন “গডোর প্রতীক্ষায়” বসে থাকার মতো। চীনের পুঁজিবাজার নিয়ে গত বছরও এমন অনেকবার আলোর ভুল প্রত্যাশা করা হয়েছে। চীনা ইকুইটি নিয়ে আমরা কৌশলগতভাবেই অনেকটা বেশি জোর দিয়ে ফেলেছি। বিষয়টি বেশ পীড়াদায়ক।’
পুঁজিবাজারের দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে গত বছর চীনের ইকুইটি মার্কেট থেকে বিদেশী বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এক্সচেঞ্জভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জানিয়েছে, ডিসেম্বর শেষে চীনের পুঁজিবাজারে নিট বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭০ কোটি ইউয়ান (৪৩০ কোটি ডলার)। আর হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের কানেক্ট ট্রেডিং প্রোগ্রামের তথ্য বিশ্লেষণেও দেখা গেছে, ২০২৩ সালে চীনের পুঁজিবাজারে নতুন নিট বিদেশী বিনিয়োগ নেমে এসেছে ৪৪ বিলিয়ন ইউয়ানের নিচে, যা ২০১৫ সালের পর সর্বনিম্ন।
ওয়াল স্ট্রিটের অনেক বিশ্লেষক এখনো বিশ্বাস করেন যে চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর তাগিদে চলতি বছর আরো জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হবে। তাদের অনেকেই ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে শেয়ারমূল্য সুলভ থাকতে থাকতে বিনিয়োগকারীদের চীনা পুঁজিবাজারে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফেডারেটেড হার্মেসের গ্লোবাল ইমার্জিং মার্কেটের প্রধান কুঞ্জল গালা জানান, ‘অনেকের মধ্যে চীনা পুঁজিবাজার বিনিয়োগযোগ্যতা হারিয়েছে এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা দিয়েছে। আমরা এর সঙ্গে একমত নই। আমরা চীনে ঝুঁকি নেয়ার প্রতিদান পাওয়ার মতো পরিবেশ দেখতে চাই।’
বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আমুন্দি ইনস্টিটিউটের ইমার্জিং ম্যাক্রো এবং স্ট্র্যাটেজি প্রধান অ্যালেসিয়া বেরারদি জানান, কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশনে এখন সেগুলোর মানের প্রকৃত প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। চীনা পুঁজিবাজার নিয়ে আমুন্দির পর্যবেক্ষণ ছিল ‘কৌশলগত অতিভারী’। নিরপেক্ষভাবে বলতে গেলে অটোমেশন, রোবোটিকস ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি খাতে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করেছে, এটা স্বীকার করতেই হবে।