ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

ইউয়ানের পতন ঠেকাতে নতুন কৌশল প্রয়োগ করছে চীন

নিজস্ব মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন নতুন কৌশলে কাজ করছে। সেটা হলো, কেবল ডলার বিক্রি করে ইউয়ান কেনার মতো প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে না গিয়ে তারা এখন ইউয়ান কেনার পাশাপাশি ব্যাংকারদের দিকনির্দেশনাও দিচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এর আগে চীন অবশ্য ভিন্ন পথে হেঁটেছে। ২০১৫ সালে সংকটের সময় পিপলস ব্যাংক অব চায়না এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলার বাজারে বিক্রি করে ইউয়ানের দর বাড়িয়েছে।

কিন্তু ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতি হোঁচট খেলে এবং দেশটি থেকে বিদেশি বিনিয়োগ বেরিয়ে যেতে শুরু করলে ভিন্ন অবস্থান নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইউয়ানের দর ধরে রাখতে বাজারকে তারা ইঙ্গিত দেয়, কোন ক্ষেত্রে মুদ্রা বিক্রয় সহ্য করা হবে আর কোন ক্ষেত্রে হবে না।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ২৮ জনের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। তাঁদের অন্তত ২৪ জন জানিয়েছেন, ইউয়ানের ওপর চাপ কমাতে চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বাজার–সংশ্লিষ্ট মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে, তাঁদের দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মুদ্রা নিয়ন্ত্রক স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ফরেন এক্সচেঞ্জকে এ বিষয়ে রয়টার্স সরাসরি প্রশ্ন করলেও তারা কিছু বলতে রাজি হয়নি। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর প্যান গংসেনগাস বলেছিলেন, মুদ্রার বিনিময় হার অন্যায্য ও ভিত্তিহীনভাবে বাড়তে দেবে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সেই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করবে।

চীনের বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, মুদ্রার মান নির্ধারিত হয় অর্থনীতির মৌলভিত্তির ভিত্তিতে এবং চীন কতটা সফলতার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ রুখতে পারে, তার ওপর।

বাজার–সংশ্লিষ্ট মানুষ ও বিশ্লেষকেরা বলেছেন, চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো মুদ্রার অনিয়ন্ত্রিত পতন রোধ করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব ব্যবস্থার কারণে সফলতা মিলেছে ঠিকই, কিন্তু দেশটির মুদ্রাবাজারে এর অপ্রত্যাশিত নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, এটা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখে মূল্যায়ন করার মতো বিষয়।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগের কারণে দেশটির বিদেশি মুদ্রার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে চীন নিজের মুদ্রা ইউয়ানকে যে বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রায় রূপান্তরিত করতে চায়, সেই উচ্চাভিলাষ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইউয়ান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির মুদ্রা, যে দেশটি আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক। ইউয়ানের মূল্যের ওপর বিশ্বজুড়ে পণ্যমূল্য নির্ভর করে, সেই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রা হিসেবে ডলারের প্রবাহেও তার প্রভাব আছে। ইউয়ানের মান দেখে বোঝা যায়, চীনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এখন কী অবস্থায় রয়েছে।

২০২৩ সালের জুন থেকে ইউয়ানের মান নিয়ে মুদ্রা কারবারিদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। তখন চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইউয়ানবিষয়ক দৈনিক দিকনির্দেশনা বাজার থেকে ভিন্ন হতে শুরু করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মিডপয়েন্ট হিসেবে পরিচিত, তাত্ত্বিকভাবে এটি ১৪টি ব্যাংকের কার্যক্রম এবং আগের দিনের লেনদেন ও মুদ্রার তৎপরতার ওপর নির্ভর করে। এটা দেখে বোঝা যায়, সেই দিন মুদ্রা কতটা ওঠানামা করতে পারে।

গত আগস্ট থেকে কারবারিরা অভিযোগ করতে শুরু করেন, মিডপয়েন্টের সঙ্গে তাদের হিসাবের ব্যবধান বাড়ছে। অভিযোগ ওঠে, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউয়ানকে বাজারের গতিবিধির প্রভাব থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে।

২০২৩ সালে সামগ্রিকভাবে ডলার ইনডেক্সের মান কমলেও ব্যাংকারদের ওপর এই চাপের কারণে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের ২ দশমিক ৮ শতাংশ দরপতন হয়েছে। এমনকি ৮ সেপ্টেম্বর ইউয়ানের দর ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। এর কয়েক দিন পর আটটি বড় ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে বেইজিংয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। তাঁদের বলা হয়, যারা পাঁচ কোটির বেশি ডলার কিনবে, তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমতি নিতে হবে।

এ ছাড়া ব্যাংকারদের স্পট ট্রেডিং বন্ধ করতে এবং ডলার ধরে রাখার ওপর সীমা আরোপ করা হয়। এসব কারণে বাজার–সংশ্লিষ্ট মানুষের মধ্যে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার