দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে মূল্যস্ফীতি। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ আরও কমে যেতে পারে। এতে ঋণের সুদহার আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। ২০২৩ সালে নানামুখী চ্যালেঞ্জ ছিল, পুরো বছরই তা মোকাবিলার চেষ্টা করে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কিছু অর্জনও ছিল।
তিনি বলেন, চলতি হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে এনেছি। সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। নতুন টাকা সৃষ্টি করে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। তাই বলা যায় ২০২৩ সাল পুরো বছর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাতেই গেছে।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে নতুন বছরের জুনে তা ৬ বা ৮ শতাংশে নেমে আসবে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটা ইতিবাচক ধারায় এসেছে। নতুন সরকার আসলে তা আরও শক্তিশালী হবে। রিজার্ভ শক্তিশালী হলে বৈশ্বিক সংকট অনেকটাই ধীরে ধীরে কেটে যাবে। অন্যদিকে আগামী জুনে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। তাই আমরা আশা করছি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে আমরা পড়েছি, নতুন বছর তা উত্তরণের মাধ্যমে একটা ভালো অবস্থানে যেতে পারব।
করপোরেট গভর্নেন্স নিশ্চিত করার বিষয়ে নতুন বছরও অব্যাহত থাকবে বলে জানান মুখপাত্র। তিনি বলেন, করপোরেট গভর্নেন্স নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তা নতুন বছরও অব্যাহত থাকবে। আমানতকারীদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংক নিবে। কারণ আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা দেওয়াই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূলনীতি।
জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় ভাগের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করার লক্ষ্যে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মতামত ও পরামর্শ চেয়েছে। এ ছাড়া গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন কমিটি পুনর্গঠন করেছে। আগে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই কমিটিতে ছিলেন, এবারের কমিটিতে বাইরে থেকে আরও তিনজনকে রাখা হয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুদ্রানীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা, যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও মুদ্রানীতির অন্যতম কাজ। বছরে দুবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৮ জুন চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়।
এমআই