অর্থনীতি
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে জাপানের ঋণ সহায়তা

মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজক্টের জন্য বাংলাদেশকে জাপানি মুদ্রায় ঋণ সহায়তা দেবে জাপান সরকার। যার পরিমাণ ২ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৬ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন বা আনুমানিক ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি বিনিময় নোট ও ঋণচুক্তি সই হয়েছে।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ এবং জাপান সরকারের মধ্যে এ চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান বিনিময় নোট ও ঋণচুক্তিতে সই করেন।
জাপান সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বিনিময় নোট এবং বাংলাদেশে অবস্থিত জাইকা অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তমোহিদ ঋণচুক্তি সই করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এনইসি-২ সভাকক্ষে এ ঋণচুক্তি সই হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ঋণচুক্তিটির আওতায় জাপান সরকার বাংলাদেশকে ২ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৬ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (আনুমানিক ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা দেবে। এ ঋণের বাৎসরিক সুদের হার নির্মাণ কাজের জন্য ১ দশমিক ৬০ শতাংশ, পরামর্শক সেবার জন্য শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ, ফ্রন্ট ইন্ড ফি (এককালীন) শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। এ ঋণ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।
অব্যাহত বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এলাকায় ১২০০ মেগাওয়াট (৬০০ মে:ও:X২ ইউনিট) আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে।

প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি (সরকারি তহবিল) ৬ হাজার ৪০৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর জাইকা ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি ৩ লাখ টাকা, সিপিজিসিবিএল সংস্থা নিজস্ব ১ হাজার ৫২৭ কোটি ৬৯ লাখ কোটি।
প্রকল্পের মেয়াদকাল জুলাই ২০১৪ থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। জাইকা কর্তৃক পর্যায়ক্রমে ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে ৬টি পর্যায়ে মোট ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫৪ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। জাপান সরকারের ৪৪তম উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) লোন প্যাকেজের (দ্বিতীয় ব্যাচ) আওতায় সপ্তম পর্যায়ে ২ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৬ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন দেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, জাপান সরকারের ৪৪তম ওডিএ লোন প্যাকেজের দ্বিতীয় ব্যাচের আওতাধীন মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের সপ্তম পর্যায়ে ঋণের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান সরকারের মধ্যে বিনিময় নোট ও ঋণচুক্তি সই হয়েছে।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধন কর কমলো

ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকার জমি বা ফ্ল্যাটসহ ব্যক্তিগত স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরে জমি নিবন্ধন উৎস কর কিছুটা কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সোমবার এ সংক্রান্ত জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আয়কর আইন-২০২৩– এর ৩৪৩ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জমি রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনে মৌজা অনুযায়ী বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার জমি নিবন্ধন কর পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঢাকা জেলার কাফরুল, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ক্যান্টনমেন্ট, চকবাজার, কোতোয়ালি, লালবাগ, খিলগাঁও, শ্যামপুর ও গেন্ডারিয়া এলাকার ঙ শ্রেণির মৌজার জমি নিবন্ধনে করহার ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ভূমির মূল্যের ৬ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি দেড় লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি, তা প্রযোজ্য হবে।
একইভাবে ঢাকার খিলক্ষেত বিমানবন্দর, উত্তরা পশ্চিম, মুগদা, রূপনগর, ভাষানটেক, বাড্ডা, পল্লবী, ভাটারা, শাহজাহানপুর, মিরপুর, দারুসসালাম, দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, শাহ আলী, সবুজবাগ, কদমতলী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ডেমরা ও আদাবর এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর, নারায়ণগঞ্জ সদর ও রূপগঞ্জ থাকার ঙ শ্রেণির মৌজার জমি নিবন্ধনে জমির মূল্যের ৮ শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশ কর নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ওই এলাকার ভূমির মূল্যের ৬ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি এক লাখ টাকা—যেটি কম হবে, তা কর হিসেবে দিতে হবে।
চট্টগ্রামের খুলশী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, হালিশহর ও কোতোয়ালি এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর থানা, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, সদর, বাসন, কোনাবাড়ী, গাছা ও টঙ্গীর ঙ শ্রেণির মৌজার জমি নিবন্ধনে মূল্যের ৬ শতাংশ করহার আগের মতো বহাল আছে। তবে কাঠাপ্রতি করের পরিমাণ ৮০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই ৬ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি মূল্য ৫০ হাজার টাকা-যেটি কম হবে, তা প্রযোজ্য হবে।
একইভাবে ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই এবং চট্টগ্রামের আকবর শাহ, ইপিজেড, কর্ণফুলী, চকবাজার, চান্দগাঁও, ডবলমুরিং, পতেঙ্গা, বাকলিয়া, বায়েজিদ বোস্তামী, সদরঘাট এলাকা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ঙ শ্রেণির মৌজার কর কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর ফলে নিবন্ধনের সময় জমির মূল্যের ৬ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ২০ হাজার টাকা- যা কম হবে, তা প্রযোজ্য হবে।

গত অক্টোবর মাসে যখন মৌজা ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করা হয়, তখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা ও এর বাইরে অবস্থিত জমিকে মৌজা অনুযায়ী ক থেকে ঙ-এই পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৯.৪৯ শতাংশ

এক মাসের ব্যবধানে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশে ঠেকেছে। আগের মাস অক্টোবরে যা ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এছাড়া অক্টোবর মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি যেখানে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল, নভেম্বরে সেটি নেমে এসেছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএসের হিসাবে দেখা যায়, দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এছাড়া খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশে ঠেকেছে।
চলতি অর্থবছর গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাহত হওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এতদিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন।
গত তিন মাস ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে নভেম্বরে তা কিছুটা কমে ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিবিএসের হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল।
বিবিএসের হিসাবে দেখা যায়, দেশের গড় মূল্যস্ফীতি কমলেও শহরের তুলনায় গ্রামের মূল্যস্ফীতি এখনো বেশি। নভেম্বরে গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশে, যা আগের মাস অক্টোবরেও ছিল ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। নভেম্বরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশে। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে রয়েছে।
শহর এলাকায় গ্রামের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম। নভেম্বরে শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৬ শতাংশে, অক্টোবরে যা ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।
চলতি বছরের আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে। যা ছিল এক যুগ বা ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বরে অবশ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নমুখী হয়। সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি নামে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশে।
এরপর অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে প্রায় ১০ শতাংশে (৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ) উঠে যায়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেশ দ্রুতগতিতে কমলেও বাংলাদেশে তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি কমে ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে।
শ্রীলঙ্কার শুমারি ও পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ৪৩ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়ায়। গত মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। এপ্রিলে এটি আরও কমে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৮ শতাংশে। মে মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। গত জুনে মূল্যস্ফীতি এক অংকে নেমে আসে, যা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যাংকে ভ্রমণ ফেরত ডলার জমায় মিলবে ৭ শতাংশ সুদ

বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে খোলা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবে জমার ওপর এখন থেকে ৭ শতাংশের বেশি সুদ দেবে ব্যাংক। এ ছাড়া এ ধরনের হিসাব থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাঠানো, একাধিক কার্ড ইস্যুসহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যাবে।
দেশের ডলার সংকট কাটাতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আরএফসিডি হিসাবে একজন ১০ হাজার ডলার জমা রাখতে পারেন। এখন থেকে এ জমার ওপর ব্যাংকগুলো বেঞ্চমার্ক রেটের সঙ্গে আরও অন্তত দেড় শতাংশ সুদ দেবে। এই হিসাবে জমার বিপরীতে দুটি সাপ্লিমেন্টারি কার্ড ইস্যু করা যাবে। সন্তান বা ভাইবোনসহ তাঁর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি সেই কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। এই অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের বাইরে শিক্ষার খরচ পাঠানো যাবে। আবার নিজের ওপর নির্ভরশীল তথা– স্ত্রী বা স্বামী, সন্তান, ভাইবোন, পিতামাতার চিকিৎসার খরচও এখান থেকে বহন করা যাবে।
বেঞ্চমার্ক রেট বলতে এসওএফআর, লাইবর, ইউরিবরের মতো রেফারেন্স রেট বা সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রার সুদহারের আদর্শ নির্দেশককে বোঝানো হয়। এর মাধ্যমে সেখানকার আমানত, ঋণ, আন্তঃব্যাংক লেনদেনে সুদহার কেমন তার একটি ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমানে ডলার, ইউরোসহ অনেক মুদ্রার বেঞ্চমার্ক সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি। এর মানে, এ ধরনের জমার ওপর ৭ শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যাবে।
চলমান সংকট কাটাতে বেশি সুদে ডলার আনতে গত বুধবার অপর এক নির্দেশনার মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশির পাঠানো রেমিট্যান্সের সুবিধাভোগীর নামেও বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সুবিধাভোগীর নামে খোলা অ্যাকাউন্টে তিন মাস থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে অর্থ রেখে ৭ থেকে ৯ শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যাবে; অন্যান্য দেশের তুলনায় যা বেশি। প্রবাসীর সুবিধাভোগী ছাড়া অন্য যারা বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারেন, তারাও এ হারে সুদ পাবেন। দেশের বাইরে ধরে রাখা ডলার আনতে ওই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত যারা দেশের বাইরে বেশি যান কিংবা যাদের ছেলেমেয়ে বাইরে পড়ালেখা করেন, তারাই বাজার থেকে নগদ ডলার কিনে ঘরে রেখে থাকতে পারেন। এখন অনেকেই ডলার কিনে ধরে রাখায় বাজারে নগদ ডলারের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে আনতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেউ যে কোনো প্রয়োজনে দেশের বাইরে গিয়ে ফেরার পর আরএফসিডি হিসাব খুলে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত জমা রাখতে পারেন। কেউ হয়তো যাওয়ার সময় ৫০০ ডলার সঙ্গে নিয়েছিলেন। ফেরার পর ১০ হাজার ডলার দিয়ে অ্যাকাউন্ট করলেও কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না। মূলত মানুষের হাতে থাকা ডলার ব্যাংকে আনতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পাইকারি বাজারে কমেছে আলুর দাম

দেশের অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বেড়ে যাওয়া আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে আলু আমদানি করছে সরকার। তবে গত বৃহস্পতিবার আলু আমদানির সময়সীমা শেষ হওয়ার খবরে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছিল। এরপর আলু আমদানির মেয়াদ আরো ১৫ দিন বাড়ানোয় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম।
গত দুদিনের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি দাম কমেছে ৪ টাকা। দুদিন আগেও প্রতি কেজি আলু প্রকারভেদে ৩২-৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল তা ৩০-৩৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বন্দর দিয়ে আমদানি অব্যাহত থাকায় দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বন্দরে আলু কিনতে আসা পাইকার আইয়ুব আলী বলেন, ৩০ নভেম্বর আলু আমদানির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে থেকেই আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। প্রকারভেদে ২৭-৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া আলু বেড়ে ৩২-৩৮ টাকায় উঠে যায়। গত বৃহস্পতিবার কার্টিনাল জাতের লাল বর্ণের আলু দাম বেড়ে ৩৭-৩৮ টাকা কেজি দরে উঠে যায়। এছাড়া সাদা বর্ণের আলু ২৭ টাকা থেকে বেড়ে কেজিপ্রতি ৩২ টাকায় বিক্রি হতে শুরু করে। তবে আবারো আমদানির সময়সীমা বাড়ানোয় বন্দর দিয়ে শনিবার থেকে আলু আমদানি হচ্ছে। তাই দামও কমতে শুরু করেছে। সাদা বর্ণের আলু ৩০ টাকা ও কার্টিনাল জাতের আলু ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বাজারে আলুর দাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে গত ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। ২ নভেম্বর থেকে হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আলু আনতে শুরু করেন আমদানিকারকরা। শুধু হিলি স্থলবন্দর দিয়েই ৪০ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি পান কয়েকজন ব্যবসায়ী। এতে আলুর সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে আসে। তবে আমদানির মেয়াদ ছিল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ফলে গত বৃহস্পতিবারই ছিল আলু আমদানির শেষ দিন। কিন্তু বাজার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল না হওয়ায় আমদানির মেয়াদ আরো কিছুদিন বাড়ানোর দাবি তোলেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু আমদানির সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ

২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছিল ৩৪৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে এসেছে ৩২৫ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে এফডিআই কমেছে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ।
রবিবার (৩ ডিসেম্বর) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগে গত জুন পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, মোট এফডিআইয়ের মধ্যে মাত্র ৮০ কোটি ডলার এসেছে বিদেশ থেকে পুঁজি হিসাবে। বাকি অর্থ দেশে কার্যরত বিদেশি কোম্পানিগুলোর মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ ও এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ।
দেশে ক্রিয়াশীল বিদেশি কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ হিসাবে এফডিআই এসেছে ২৩৭ কোটি ডলার।
মাত্র ৮ কোটি ডলার এসেছে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ হিসাবে। গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি নিট পুঁজি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৬ কোটি ডলার। সব মিলে এসেছে ২৯ কোটি ডলার।

২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ এসেছিল ৬২ কোটি ডলার। আলোচ্য এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে বিনিয়োগ কমেছে। বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের স্থিতি গত বছরের জুনে ছিল ৪০ কোটি ডলার, চলতি বছরের জুনে তা সামান্য কমে ৩৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের স্থিতি কমেছে ২ কোটি ডলার। এদিকে বৈদেশিক ঋণ গত এক বছরে বেড়েছে ৩৪৯ কোটি ডলার।
টাকার অঙ্কে যা ৩৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। গত বছরের (২০২২) জুনে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ৫৪৫ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৯৪ কোটি ডলার। এই সময়ে ব্যাপকভাবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরও পরিমাণ বেড়ে চলেছে। আলোচ্য সময়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে, কমেছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের (২০২২) জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুনে দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়েছে। দেশে আসা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই কমেছে। আর বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের স্থিতিও সামান্য কমেছে।
গত বছরের (২০২২) জুনে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৯০ কোটি ডলার। গত বছরের (২০২২) জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল ২ হাজার ৬৫ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে এ ঋণ আরও কমেছে।
গত দেড় বছর ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। সার্বিকভাবে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়ে গেছে, যা পরিশোধে ডলারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। আগে যেসব ঘাটতি ছিল তা এখন কমে এসেছে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বৈদেশিক ঋণ বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। ২০২১ সালের জুনে মোট ঋণ বেড়েছিল ১৯ শতাংশের বেশি। গত বছরের জুনে তা কমে ঋণ বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৭ শতাংশে। চলতি বছরের জুনে তা আরও কমে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গত বছরের (২০২২) জুনে তুলনায় চলতি বছরের জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ কমেছে ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমেছে প্রায় ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছরের (২০২২) জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছিল ৪৭ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছিল ১১ শতাংশ।