ধর্ম ও জীবন
যেভাবে তৈরি হলো পবিত্র কাবাঘর

নারীজাতি প্রথম কোমরবন্ধ বানানো শিখেছে ইসমাইল (আ.)-এর মায়ের কাছ থেকে। হাজেরা (আ.) কোমরবন্ধ লাগাতেন সারা (আ.)–এর কাছে নিজের মর্যাদা গোপন রাখার জন্য। হাজেরা (আ.) শিশুসন্তান ইসমাইল (আ.)–কে দুধ পান করানোর সময়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁদের নিয়ে বের হলেন। কাবার কাছে মসজিদের উঁচু অংশে জমজম কূপের ওপরে অবস্থিত একটা বিরাট গাছের নিচে ইব্রাহিম (আ.) তাঁদের দুজনকে রাখলেন। তখন মক্কায় মানুষ বা পানির ব্যবস্থা কিছুই ছিল না। একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর আর একটি মশকে কিছু পরিমাণ পানি দিয়ে সেখানেই তাঁদের রেখে ইব্রাহিম (আ.) ফিরে চললেন।
ইসমাইল (আ.)-র মা পিছু পিছু এসে বারবার বলতে লাগলেন, হে ইব্রাহিম! আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন? আপনি আমাদের এমন এক ময়দানে রেখে যাচ্ছেন, যেখানে কোনো সাহায্যকারী বা কোনো ব্যবস্থাই নেই। ইব্রাহিম (আ.) তাঁর দিকে তাকালেন না। হাজেরা (আ.) তাঁকে বললেন, আল্লাহই কি আপনাকে এ আদেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। হাজেরা (আ.) বললেন, তাহলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না। তিনি ফিরে এলেন।
ইব্রাহিমও (আ.) সামনে এগিয়ে চললেন। যেতে যেতে গিরিপথের বাঁকে পৌঁছে যখন স্ত্রী–সন্তানকে আর দেখতে পেলেন না, তখন কাবাঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে দু হাত তুলে দোয়া করলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার পরিবারের কয়েকজন আপনার সম্মানিত ঘরের কাছে এক অনুর্বর উপত্যকায়…যাতে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
ইসমাইলের মা ইসমাইলকে স্তন্যের দুধ পান করাতেন। আর নিজে ওই মশক থেকে পানি খেতেন। মশকের পানি এক সময় ফুরিয়ে গেল। তিনি আর তাঁর শিশুপুত্র তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুটিকে দেখতে লাগলেন। তৃষ্ণায় তাঁর বুক ধড়ফড় করছে। শিশুপুত্রের এ করুণ অবস্থার দেখা অসহনীয় হয়ে পড়ল।
তিনি সরে এলেন। সাফা ছিল তাঁর কাছাকাছি পর্বত। তিনি সেটির ওপরে উঠে ময়দানের দিকে তাকালেন। এদিক–সেদিক তাকিয়ে দেখলেন, কোথাও কাউকে দেখা যায় কিনা। তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। সাফা পর্বত থেকে নেমে তিনি নিচের ময়দানে পৌঁছালেন। বস্ত্রের একটি প্রান্ত তুলে ধরে ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষের মতো ছুটে চললেন তিনি। ময়দান পার হয়ে এক সময় মারওয়া পাহাড়ের ওপর উঠে এলেন। আবার এদিক–সেদিক তাকিয়ে দেখলেন কাউকে পাওয়া যায় কিনা। কাউকেই দেখতে পেলেন না। এভাবে তিনি সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন।

আরও পড়ুন: জুমার দিনে ৮০ বছরের গুনাহ মাফের আমল
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে নবী (সা.) বলেছেন, এ জন্যই মানুষ এ পর্বত দুটোর মাঝখানে সাঈ করে থাকে।
তিনি যখন মারওয়া পাহাড়ে ওঠার পর একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি নিজেকেই নিজে বললেন, একটু অপেক্ষা করো। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। শুনে বললেন, তুমি তো তোমার আওয়াজ শুনিয়েছ। তোমার কোনো সাহায্যকারী আছে?
তক্ষুনি জমজম কূপের কাছে তিনি একজন ফেরেশতাকে দেখতে পেলেন। ফেরেশতাটি নিজের পায়ের গোড়ালি (বা ডানা) দিয়ে আঘাত করলেন। এতে পানি বের হতে লাগল।
হাজেরা (আ.) এর চারপাশে নিজ হাতে বাঁধ দিয়ে এক চৌবাচ্চার মতো করে নিয়ে হাতের আঁজলা ভরে তাঁর মশকে পানি ভরতে লাগলেন। পানি উপচে পড়ছিল।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন যে নবী (সা.) বলেছেন, ইসমাইলের মাকে আল্লাহ রহম করুন। তিনি যদি বাঁধ না দিয়ে জমজমকে ছেড়ে দিতেন (কিংবা বলেছেন, যদি আঁজলা ভরে পানি মশকে জমাতেন), তাহলে জমজম একটি কূপ না হয়ে প্রবাহিত ঝরনায় পরিণত হতো।
রাবী বলেন, অতঃপর হাজেরা (আ.) নিজে পানি খেলেন, শিশুপুত্রকেও দুধ পান করালেন। ফেরেশতাটি তখন তাঁকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোনো আশঙ্কা করবেন না। কারণ এখানেই আল্লাহর ঘর। এই শিশুটি আর তাঁর পিতা মিলে এখানে ঘর তুলবে। আল্লাহ তাঁর আপনজনকে কখনো ধ্বংস করেন না।
আল্লাহর ঘরের স্থানটি তখন ছিল জমিন থেকে টিলার মতো উঁচু। বন্যা আসায় এর ডানে-বাঁয়ে ভেঙে যাচ্ছিল। হাজেরা (আ.) এভাবেই দিনযাপন করছিলেন। এক সময় জুরহুম গোত্রের একদল লোক তাঁদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল (অথবা, রাবী বলেন, জুরহুম পরিবারের কিছু লোক কাদা নামে একটি উঁচু ভূমির পথ ধরে এদিকে আসছিল)। মক্কায় তারা নিচু ভূমিতে নেমে এল। তারা দেখল একঝাঁক পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তারা বলল, নিশ্চয় এই পাখিগুলো পানির ওপর উড়ছে। আমরা বহুবার ময়দানের এ পথ পার হয়েছি, কিন্তু এখানে কখনো পানি ছিল না। দুয়েকজন লোককে তারা সেখানে পাঠাল। তারা গিয়েই পানি দেখতে পেল। ফিরে এসে সবাইকে পানির খবর দিল। খবর শুনে সবাই সেদিকে এগিয়ে গেল।
আরও পড়ুন: যাদের জন্য জুমার নামাজ ওয়াজিব নয়
রাবী বলেন, ইসমাইল (আ.)-এর মা পানির কাছে ছিলেন। তারা তাঁকে বলল, আমরা আপনার কাছাকাছি বসবাস করতে চাই। অনুমতি দেবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে এই পানির ওপর তোমাদের কোনো অধিকার থাকবে না। তারা ‘হ্যাঁ’ বলে তাদের মত প্রকাশ করল।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন যে নবী (সা.) বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাইলের মাকে একটি সুযোগ এনে দিল। তিনিও মানুষের সাহচর্য চেয়েছিলেন।
তারা সেখানে বসতি স্থাপন করল। পরিবার-পরিজনের কাছে খবর পাঠালে তারাও এসে তাদের সঙ্গে বসবাস করতে লাগল। পরে তাদেরও কয়েকটি পরিবার এসে বসতি করল।
এ দিকে ইসমাইল যৌবনে উপনীত হলেন। তাদের কাছ থেকে আরবি ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌঁছে তিনি তাদের কাছে অনেক আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। তিনি পূর্ণ যৌবন পেলে তারা তাঁর সঙ্গে নিজেদের একটি মেয়েকে বিয়ে দিল। এর মধ্যে ইসমাইলের মা হাজেরা (আ.) ইন্তেকাল করলেন।
ইসমাইলের বিয়ের পর ইব্রাহিম (আ.) তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা দেখার জন্য এলেন, কিন্তু ইসমাইলকে পেলেন না। তিনি তাঁর স্ত্রীকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। স্ত্রী বলল, তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। পুত্রবধূকে তিনি তাদের জীবনযাত্রা আর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, আমরা অতি দুরবস্থা, খুব টানাটানি আর নিদারুণ কষ্টে আছি। ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে সে তাদের দুর্দশা নিয়ে অভিযোগ করল।
তিনি বললেন, তোমার স্বামী বাড়ি এলে তাকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলে নেয়। ইসমাইল (আ.) বাড়ি ফিরে এসে যেন কিছুটা আভাস পেলেন। তিনি তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কাছে কেউ কি এসেছিল? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। এমন এমন আকৃতির একজন বৃদ্ধ এসেছিলেন। আমাকে আপনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি তাঁকে আপনার খবর দিয়েছি। তিনি আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আমি জানালাম, আমরা খুব কষ্টে আর অভাবে আছি।
আরও পড়ুন: জুমার দিন আল্লাহর শেখানো ৪টি দোয়া পাঠ করুন
ইসমাইল (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি তোমাকে কোনো নসিহত করেছেন? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আপনাকে তাঁর সালাম পৌঁছাই। তিনি আরও বলেছেন যেন আপনি ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলে ফেলেন।
ইসমাইল (আ.) বললেন, তিনি আমার বাবা। এ কথার মাধ্যমে তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, যেন আমি তোমাকে আলাদা করে দিই। কাজেই তুমি তোমার নিজের লোকজনের কাছে চলে যাও। এই বলে ইসমাইল (আ.) তাঁকে তালাক দিয়ে দিলেন। এর পর ওই লোকদের মধ্য থেকে আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করলেন।
আল্লাহ যত দিন চাইলেন, ইব্রাহিম (আ.) এদের থেকে দূরে রইলেন। এর পর তিনি আবার তাঁদের দেখতে এলেন। এবারও তিনি ইসমাইল (আ.)-এর দেখা পেলেন না। পুত্রবধূর কাছে এসে তিনি তাঁকে ইসমাইল (আ.) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, তিনি আমাদের খাবারের খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। ইব্রাহিম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেমন আছ? তিনি তাদের জীবনযাপন ও অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সে বলল, আমরা ভালো ও সচ্ছল অবস্থায় আছি। সে আল্লাহর প্রশংসাও করল।
ইব্রাহিম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের প্রধান খাদ্য কী? সে বলল, গোশত। তিনি আবার জানতে চাইলেন, তোমাদের পানীয় কী? সে বলল, পানি।
ইব্রাহিম (আ.) দোয়া করে বললেন, হে আল্লাহ! তাদের গোশত ও পানিতে বরকত দিন।
নবী (সা.) বলেন, ওই সময় তাদের সেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো না। যদি হতো, তাহলে ইব্রাহিম (আ.) সে বিষয়েও তাদের জন্য দোয়া করতেন।
বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ছাড়া আর কোথাও কেউ শুধু গোশত ও পানি দিয়ে জীবন ধারণ করতে পারে না। কেননা, শুধু গোশত ও পানি জীবনযাপনের অনুকূল হতে পারে না।
ইব্রাহিম (আ.) বললেন, যখন তোমার স্বামী ফিরে আসবে তাঁকে সালাম বলে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখে। ইসমাইল (আ.) যখন ফিরে এসে বললেন, তোমাদের কাছে কি কেউ এসেছিলেন? সে বলল, হ্যাঁ। একজন সুন্দর চেহারার বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন। সে তাঁর প্রশংসা করর বলল, তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাঁকে আপনার খবর জানিয়েছি। তিনি আমার কাছে আমাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি তাঁকে জানিয়েছি, আমরা ভালো আছি।
আরও পড়ুন: কাবায় ৮০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি, তবুও তাওয়াফ ছাড়েননি মুসল্লিরা
ইসমাইল (আ.) বললেন, তিনি কি তোমাকে আর কোনো কিছুর জন্য আদেশ করেছেন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি আপনাকে সালাম জানিয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আপনি আপনার ঘরের চৌকাঠ ঠিক রাখেন।
ইসমাইল (আ.) বললেন, তিনিই আমার বাবা। তুমি হলে আমার ঘরের দরজার চৌকাঠ। এ কথার মাধ্যমে তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে বহাল রাখি।
যতদিন আল্লাহ চাইলেন, ইব্রাহিম (আ.) তাদের কাছ থেকে দূরে রইলেন। তিনি আবার এলেন। (দেখতে পেলেন,) জমজম কূপের কাছের একটি বিরাট গাছের নিচে বসে ইসমাইল (আ.) একটি তির মেরামত করছেন। বাবাকে দেখতে পেয়ে তিনি উঠে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। বাবার সঙ্গে ছেলের সাক্ষাৎ হলে যেমন হয়ে থাকে, তাঁরা তা–ই করলেন।
কাবা তৈরিতে আল্লাহর নির্দেশ
ইব্রাহিম (আ.) বললেন, হে ইসমাইল! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাইল (আ.) বললেন, আপনার রব আপনাকে যা আদেশ করেছেন, তা করুন। ইব্রাহিম (আ.) বললেন, তুমি আমার সাহায্য করবে কি? ইসমাইল (আ.) বললেন, করব। ইব্রাহিম (আ.) বললেন, আল্লাহ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এই বলে তিনি উঁচু ঢিলাটির দিকে ইশারা করলেন। সেটির চারপাশে ঘেরাও দিয়ে তখনই তাঁরা দুজন মিলে কাবার দেওয়াল তুলতে লেগে গেলেন। ইসমাইল (আ.) পাথর আনতেন আর ইব্রাহিম (আ.) নির্মাণ করতেন। দেওয়াল যখন উঁচু হয়ে উঠল, তখন ইসমাইল (আ.) (মাকামে ইব্রাহিম নামে খ্যাত) পাথরটি এনে ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্য যথাস্থানে রাখলেন। ইব্রাহিম (আ.) তার ওপর দাঁড়িয়ে নির্মাণকাজ করতে লাগলেন। ইসমাইল (আ.)–ও তাঁকে পাথর জোগান দিতে থাকলেন।
তাঁরা দুজনই এই দোয়া করতে থাকলেন, হে আমাদের রব! আমাদের কাছ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।
তাঁরা উভয়ে আবার কাবাঘর তৈরি করতে লাগলেন এবং কাবাঘরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে এই দোয়া করতে থাকলেন, ‘হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছু শোনেন ও জানেন’। (আল-বাকারা ১২৭)
সহিহ্ বুখারি, হাদিস: ৩৩৬৪
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ধর্ম ও জীবন
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ বৃহস্পতিবার (১২ রবিউল আউয়াল)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর শুভ আবির্ভাব ঘটে।
দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্মের আগে গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’র যুগ।
তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করত। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
মহানবী (সা.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ২৫ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুর আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর) গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।

এদিকে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ২৮ সেপ্টেম্বর

দেশের কোথাও পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। তাই রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। আর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হবে ২৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার)।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার।
সভা শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় ১৪৪৫ হিজরি সনের পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলো, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আজ ২৯ সফর ১৪৪৫ হিজরি, ৩১ ভাদ্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি। ফলে আগামীকাল ১ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার পবিত্র সফর মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে এবং আগামী ২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রি. রোববার থেকে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। আগামী ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি, ১৩ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হবে।
সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহা. বশিরুল আলম, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, সিনিয়র উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিল, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মহা. আসাদুর রহমান, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের সহকারী প্রশাসক মো. শাহরিয়ার হক, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক মো. জুলফিকার রহমান কোরাইশী, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ই-আলিয়ার আল-কুরআন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
ঈদে মিলাদুন্নবী কবে, জানা যাবে সন্ধ্যায়

পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা ও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) তারিখ নির্ধারণে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে (বাদ মাগরিব) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) কবে, তা জানা যাবে এদিন সন্ধ্যায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে এ সভা হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবারের সভায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা আছে।
দেশের আকাশে কোথাও পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে টেলিফোনে (০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭) ও ফ্যাক্স নম্বরে (০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১) অথবা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
আরবি মাসের ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়। সফর মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হলে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) পালন করা হবে। আর সফর মাস যদি ২৯ দিনে শেষ হয় তাহলে ১২ রবিউল আউয়াল হবে ২৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার)।

অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
জুমার দিনে নারীরা জোহরের নামাজ কখন পড়বেন?

জুমাবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিন জুমার নামাজ আদায় করা হয়। মানুষের আগমন ও জুমার আলোচনা এবং খুতবাসহ সব আনুসাঙ্গিকতা মিলিয়ে অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা বিলম্ব হয়। ফলে জুমার নামাজ আদায়ে খানিক সময় লাগে।
এখন প্রশ্ন হলো- নারীরাও কি বিষয়টি লক্ষ্য রেখে দেরিতে জোহরের নামাজ আদায় করবে? নাকি জোহরের ওয়াক্ত হলে নামাজ আদায় করে নিতে পারবে? কোনো কোনো মুরব্বিকে বলতে শোনা যায়- পুরুষদের আগে নারীরা নামাজ আদায় করবে না, কথাটি কি ঠিক?
এ প্রশ্নের উত্তর হলো- নামাজের সময় হওয়ার পর বিনা প্রয়োজনে বিলম্ব করা নারী ও পুরুষ কারো জন্য উচিত নয়। বিশেষত যখন নামাজের মুস্তাহাব ওয়াক্ত হয়ে যায়। তাই নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণি নামাজের মুস্তাহাব ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায় করবে।
আর পুরুষের নামাজের সঙ্গে নারীদের নামাজের এমন কোনো সম্পর্ক নেই যে পুরুষ যে সময়ে নামাজ পড়ে সে সময়েই তাদের নামাজ আদায় করতে হবে বা পুরুষ নামাজ আদায় করার পর তারা নামাজ আদায় করবে।
সুতরাং শুক্রবারও নারীরা জোহরের নামাজের মুস্তাহাব সময় হওয়ার পর নামাজ আদায় করতে পারবেন। চাই মসজিদে জুমার জামাত হোক বা না হোক। শুক্রবার জোহরসহ যেকোনো দিন যেকোনো ওয়াক্তের নামাজ নারীরাও মুস্তাহাব সময় দেখে আদায় করবে। পুরুষদের ঘরে ফেরার অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। (আল-বাহরুর রায়িক ও কানজুদ দায়িক)

অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
২০২৪ সালের রোজা-ঈদের সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ

২০২৪ সালের রমজান ও ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশিত হয়েছে। চলতি বছর সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছিল ২৩ মার্চ। আর ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছিল ২১ এপ্রিল। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলোত ২৪ মার্চ রোজা ও ২২ এপ্রিল ঈদ পালন করা হয়।
সেই হিসেব অনুযায়ী ২০২৪ সালে রমজান মাস শুরু হতে বাকি আর মাত্র ৬ মাস। এরই মধ্যে আগামী বছর কবে পবিত্র রমজান শুরু ও ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে, তার সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশ গবেষণা ও জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক সংস্থা আমিরাতস এস্ট্রোনোমি সোসাইটি।
সংস্থাটির বরাতে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস জানিয়েছে, গণনা অনুযায়ী ২০২৪ সালে রমজান মাস শুরু হবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ও মধ্যপ্রাচ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে ১০ এপ্রিল।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ইসলামিক হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এখন ‘সফর’ মাস চলছে। তাদের মহাকাশীয় গবেষণা অনুযায়ী, আরবি বছরের পরবর্তী মাস ‘রবিউল আউয়াল’ শুরু হতে পারে ১৬ সেপ্টেম্বর। সেই হিসাবে রমজান মাস শুরু হবে ২০২৪ সালের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
তবে সম্ভাব্য তারিখ জানানো হলেও, রমজান মাস কবে শুরু হবে ও ঈদ কবে উদযাপিত হবে সেটি সম্পূর্ণ চাঁদ দেখে নির্ধারণ করা হবে।

রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজান। বেশি সওয়াব লাভের আশায় প্রতি বছরই পবিত্র রমজান মাসের জন্য অপেক্ষায় থাকেন বিশ্বের সব ধর্মপ্রাণ মুসলমান। এছাড়া, রোজার পরই উদযাপিত হয় মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।
অর্থসংবাদ/এসএম