মত দ্বিমত
কক্সবাজার: বাংলাদেশে অফুরন্ত পর্যটন সুযোগ উন্মোচন

পর্যটন বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়নে ও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এর বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উষ্ণ আতিথেয়তার সাথে, বাংলাদেশে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি অনন্য এবং লোভনীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের কক্সবাজারে যে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। পর্যটন বাংলাদেশের একটি হাব হিসেবে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটি জনপ্রিয় পর্যটন শহর হিসেবে পরিচিত, কক্সবাজার যার ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগের ফলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি হয়েছে। পর্যটন শিল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, দারিদ্র্য বিমোচনে এবং জীবিকা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। তাছাড়া, পর্যটন সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার উন্নীত করতে সাহায্য করে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে পর্যটন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদান রাখে। টেকসই উন্নয়নের একটি শক্তিশালী চালক হিসেবে, বাংলাদেশের পর্যটন স্থানীয় সম্প্রদায় এবং দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি উভয়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করার অপার সম্ভাবনা রাখে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো কক্সবাজার উন্নয়ন অগ্রগতির একটি শো-কেসে পরিণত হয়েছে । সরকারের আমলে কক্সবাজারে শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা জানা গেছে । এসব প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ল্যান্ড ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজার, মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড টেকনোলজি সেন্টার, মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম, মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প।
এই প্রকল্পগুলি কক্সবাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে রূপান্তরিত করেছে এবং যা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাপানের ব্যস্ত বন্দরের আদলে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ি প্রতিষ্ঠা একটি বড় মাইলফলক। বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং দূষণ ব্যবস্থাপনার জন্য বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্ভাবনা ও সম্পদকে কাজে লাগাতেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজার এবং ডাবল পাইপ লাইনের সাথে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপনে মতো প্রকল্পগুলি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, শক্তি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং নিরাপদ এবং পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি পরিবহনের প্রচারে অবদান রাখছে। মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করবে, রাস্তা ব্যবহারকারীর খরচ কমবে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও লজিস্টিক পার্কের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলি শুধুমাত্র জেলাকে রূপান্তরিত করছে না বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ও জোরদার করতে এবং দেশকে আঞ্চলিক সামুদ্রিক অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্যের দেশ বাংলাদেশ ধীরে ধীরে কিন্তু অবিচলিতভাবে একটি প্রতিশ্রুতিশীল পর্যটন গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এর রত্ন গুলির মধ্যে, কক্সবাজার এশিয়ার অন্যতম মনোমুগ্ধকর উপকূলীয় আশ্রয়স্থল হিসাবে লম্বা। বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, আদিম জল এবং মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিরাম প্রসারিত কক্সবাজার বিশ্বব্যাপী ভ্রমণকারীদের জন্য অবশ্যই একটি দর্শনীয় গন্তব্যে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ অব্যাহত থাকায়, কক্সবাজারের ভবিষ্যত উত্তেজনাপূর্ণ সুযোগের সাথে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়: কক্সবাজারের লোভনীয় স্থান-বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত, কক্সবাজার বঙ্গোপসাগর বরাবর ১২০ কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতের গর্ব করে। এই সমুদ্র সৈকত স্বর্গের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য এবং প্রশান্তি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে যা বিশ্রাম এবং প্রশান্তি কামনা করে।
তার মনোমুগ্ধকর উপকূলরেখার বাইরে, কক্সবাজার প্রাকৃতিক বিস্ময়ের একটি বিন্যাস সরবরাহ করে। দর্শনার্থীরা কাছাকাছি পাহাড়, বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর আবাসস্থল, প্রত্যেকে তাদের অনন্য ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। সবুজ বন এবং জলপ্রপাত উপকূলীয় অভিজ্ঞতায় একটি দুঃসাহসিক ছোঁয়া যোগ করে, যা কক্সবাজারকে সব ধরনের ভ্রমণকারীদের জন্য একটি সুন্দর গন্তব্যে পরিণত করে।
অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ বৃদ্ধি: যদিও পর্যটনের সম্ভাবনা স্পষ্ট, কক্সবাজার এখনও একটি জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক গন্তব্য হিসাবে বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যাইহোক, বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতায়, অবকাঠামোগত উন্নতির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে এবং পর্যটন অভিজ্ঞতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।
একটি বড় উন্নয়ন হল পরিবহন সংযোগ স্থাপন। একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্ক উন্নতি অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় যাত্রীদের জন্য সহজে প্রবেশের সুবিধা দেবে। কানেক্টিভিটি উন্নত হওয়ায় কক্সবাজার প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে আরও বেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দায়িত্বশীল পর্যটন- প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ: পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে কক্সবাজারে দায়িত্বশীল পর্যটন অনুশীলনের প্রচার করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড, পরিবেশ সংস্থা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতায়, উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং পরিবেশের উপর পর্যটনের প্রভাব কমানোর উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। পরিবেশ-বান্ধব বাসস্থানকে উত্সাহিত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের প্রচার করা এবং দায়িত্বশীল আচরণ সম্পর্কে পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি আগামী প্রজন্মের জন্য কক্সবাজারের প্রাকৃতিক বিস্ময় রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা: এর মনোমুগ্ধকর ল্যান্ডস্কেপের বাইরে, কক্সবাজার বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে। ভ্রমণকারীরা স্থানীয় রীতিনীতিতে নিজেদের নিমজ্জিত করতে পারে, ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিতে পারে এবং এই অঞ্চলের জাতিগত সম্প্রদায়ের দ্বারা উদযাপন করা রঙিন উৎসব গুলো দেখতে পারে। এই ধরনের সাংস্কৃতিক সাক্ষাৎ ভ্রমণ অভিজ্ঞতার গভীরতা যোগ করে এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক টেপেস্ট্রি সম্পর্কে বৃহত্তর বোঝার বিকাশ ঘটায়।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা- অর্থনৈতিক বুস্ট এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ: কক্সবাজার একটি সমৃদ্ধ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে উঠলে তা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। পর্যটন শিল্পের বৃদ্ধি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ করে আতিথেয়তা খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। অধিকন্তু, অর্থনৈতিক সুবিধা গুলো বিভিন্ন সহায়ক শিল্পে প্রসারিত হবে, জীবিকা বৃদ্ধি করবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন চালিত করবে।
কক্সবাজার, তার অদম্য সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির সাথে, এশিয়ার একটি ভবিষ্যত পর্যটনের হটস্পট হিসাবে অপরিসীম প্রতিশ্রুতি ধারণ করে। যেহেতু সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অবকাঠামো এবং টেকসই অনুশীলনে বিনিয়োগ করে, এই অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রামাণিক সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার সন্ধানকারী ভ্রমণকারীদের জন্য একটি পছন্দের গন্তব্যে পরিণত হওয়ার পথে। দায়িত্বশীল পর্যটন অনুশীলন এবং এর প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের যত্ন সহকারে, কক্সবাজার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পর্যটন মুকুটে একটি রত্ন হিসাবে বিকাশ লাভ করবে, সারা বিশ্ব থেকে দর্শনার্থীদের এর অফুরন্ত সম্ভাবনা গুলি অন্বেষণ করতে আমন্ত্রণ জানাবে।
লেখক: দেলোয়ার জাহিদ, একজন মুক্তিযোদ্ধা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি সদস্য, সভাপতি, বাংলাদেশ উত্তর আমেরিকান জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক, আহ্ববায়ক বাংলাদেশ নর্থ-আমেরিকান নির্বাচন পর্যবেক্ষণ হাব, কানাডার বাসিন্দা।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত
খেলাপির ফাঁদে ব্যাংক খাত: সমাধান কোন পথে

বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের ‘এ টেল অব টু সিটিজ’ উপন্যাসের শুরুর লাইনটি পাঠকের সামনে যুগের চিত্র তুলে ধরে নিখুঁতভাবে ‘এটি ছিল সর্বোত্তম সময়, এটি ছিল নিকৃষ্টতম সময়, এটি ছিল জ্ঞানের যুগ, এটি ছিল মূর্খতার যুগ, এটি ছিল বিশ্বাসের যুগ, এটি ছিল অবিশ্বাসের যুগ, এটি ছিল আলোর ঋতু, এটি ছিল অন্ধকারের ঋতু, এটি ছিল আশার বসন্ত, এটি ছিল হতাশার শীত, আমাদের সামনে সবকিছু ছিল, আমাদের সামনে কিছুই ছিল না, আমরা সবাই সরাসরি স্বর্গে যাচ্ছিলাম, আমরা সবাই সরাসরি অন্য পথে যাচ্ছিলাম —’। ১৮৫৯ সালে ফরাসি বিপ্লব সংঘটনের পেছনের ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে চার্লস ডিকেন্স এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন। প্রথম শিল্প বিপ্লবের শেষ দিকে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের সামাজিক অসংগতির চিত্র এতে তুলে ধরা হয়েছিল।
আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঊষালগ্নে দাঁড়িয়ে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোৎকর্ষ উপভোগ করছি। আমাদের ব্যাংকগুলো শিল্প বিপ্লবের সুফল কাজে লাগাচ্ছে। দ্রুততম, আধুনিক ও উন্নত সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন গ্রাহকগণও। কিন্তু তবুও কেন ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থায় চিড় ধরতে শুরু করেছে। সর্বোচ্চ পরিমাণ আমানত ও বিনিয়োগের পোর্টফোলিও নিয়ে সুশাসনের অভাব, আইন প্রয়োগে অনীহা ও ব্যর্থতা এবং ব্যাংকের স্বার্থ পরিপন্থী নীতিমালা গ্রহণের ফলে প্রায় ডুবতে বসেছে অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ব্যাংক খাত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনকভাবে। কিন্তু এর থেকে পরিত্রাণের জন্য কোন পথ বের করার চেষ্টা না করে উল্টো পথে হাঁটছি আমরা। ঋণ পুনঃ তফসিলের ডাউনপেমেন্ট ৩০ শতাংশের জায়গায় ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, ক্ষেত্র বিশেষে প্রভাব খাটিয়ে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই ঋণ পুনঃ তফসিল করা হচ্ছে। খেলাপিদের নানান সুবিধা দিতেই যেন ব্যস্ত সবাই। গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি বিনিয়োগ বেড়েছে কয়েক গুণ। ২০২২ সালের শেষে সেটা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। তবে প্রকৃতপক্ষে এর পরিমাণ আরো অনেক বেশি। বিগত বছরে ব্যাংকগুলো ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল করেছে। অর্থাৎ এই পরিমাণ খেলাপি বিনিয়োগ বিশেষ বিবেচনায় আবার নিয়মিত বিনিয়োগ দেখানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ মোট বিনিয়োগের প্রায় ২০ শতাংশ।
অনেক ব্যাংক আর্থিক প্রতিবেদন ভাল দেখানোর জন্য খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখায়। দীর্ঘদিনের খেলাপি ঋণগুলো ব্যালান্সশীট থেকে মুছে ফেলা হয়। এটাকে ঋণ অবলোপন বলা হয়। এ ধরণের ঋণ আদায়ের আশা খুবই কম। ২০২২ সালের শেষে ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় এর পরিমাণ বেড়েছে ৮ শতাংশেরও বেশি। এভাবে জনগণের সম্পদ খেলাপিদের পেটে হজম হয়ে যাচ্ছে।
এক লোক ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে গিয়ে কৌতুক করে বললেন ‘প্লিজ গিভ মি এ লোন অ্যান্ড লিভ মি অ্যালোন।’ অর্থাৎ লোন দেয়ার পরে আমার সাথে আর যোগাযোগ না রাখলেই ভাল হয়। খেলাপি গ্রাহকদের মনের অবস্থাও এমনই প্রতীয়মান হয়। ব্যাংকাররা খেলাপি বিনিয়োগ আদায় করতে গেলে তারা দেখা দিতে চান না। অনেকে দেখা দিলেও তেলে বেগুনে জলে ওঠেন ব্যাংকারদের ওপর। নানান বাহানা তৈরি করেন ব্যাংকের বিনিয়োগ পরিশোধ করতে চান না।
এসব গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে ব্যাংক সম্পত্তি নিলামে তুলে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে চাইলেও তারা প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকারদের বিরত রাখার চেষ্টা করেন। অনেক সময় কোন কোন গ্রাহক মিথ্যা গল্প ফেঁদে মিডিয়ায় ব্যাংককে জনগনের কাছে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ ব্যাংকের মর্টগেজ করা সম্পত্তি নকল কাগজ পত্র তৈরি করে গোপনে বিক্রি করে দেন। এতে বেকায়দায় পড়ে ব্যাংক।

বাংক খাতে রাজনৈতিক প্রভাব বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি এক ওয়েবিনারে অর্থনীতিবিদগণ এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “যেকোন দেশের আর্থিক খাতের নীতি পেশাগতভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে আর্থিক খাতে রাজনীতি ঢুকে গেছে। নতুন ব্যাংক তৈরি ও ঋণ প্রদান থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়। এটা আমাদের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।”
পিডব্লিউসি-এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার মামুন রশীদ বলেন “রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রভাবিত করে ফেলেছে। যেটা ২০০৭-০৮ সালের ক্রান্তিলগ্নেও দেখা যায়নি।”
ব্যাংকগুলো থেকে বিনিয়োগ নিয়ে সেটা কোন খাতে ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু এসব খেলাপির অনেকেই ব্যাংকগুলো থেকে বিনিয়োগ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করছে। ফলে দেশের প্রকৃত সম্পদ কমে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্য। বাজার মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাধারণ মানুষের আয় সমানভাবে বাড়ছে না। ফলে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ খেলাপি গ্রাহক ও পাচারকারীদের কর্মকান্ডের পরিণাম সমগ্র জাতি ভোগ করছে। অধঃ পতনের দিকে যাচ্ছে ব্যাংক ও অর্থনীতির চাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে একক ঋণগ্রহীতার সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, যেন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কোন ব্যাংক জিম্মি হয়ে না পড়ে। এই সীমা মেনে ঋণ দেয়া হচ্ছে কিনা তা দেখভাল করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তব্য। ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু কয়েকটি ব্যাংক এই সীমা অতিক্রম করে ঋণ প্রদান করে ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
একটি প্রচলিত কৌতুক রয়েছে ‘তুমি যদি পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ নাও তাহলে সেটা পরিশোধের জন্য মাথা ব্যাথা তোমার। তোমাকেই ব্যাংকের পিছনে ছুটতে হবে। আর যদি পাঁচশ কোটি টাকা নাও তাহলে মাথা ব্যাথা ব্যাংকের। ব্যাংক তোমার পিছনে ছুটবে। তাই বড় বিনিয়োগ নাও।’
বড় বড় গ্রাহকদের অনেককেই দেখা যায় খেলাপি হওয়ার প্রবণতা বেশি। ব্যাংকগুলোকে তাই বড় বিনিয়োগ দেয়ার সময় গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা এবং সদিচ্ছার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। বড় গ্রাহকদের খেলাপি বিনিয়োগের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে খেলাপি বিনিয়োগের ৫১ শতাংশই রয়েছে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে, যার পরিমাণ ৬৬ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বড় ঋণ কমিয়ে এসএমই এবং কৃষি ঋণ বেশি হারে বিতরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকের টাকা জনগণের আমানত। সেটা সঠিকভাবে বিনিয়োগ করা এবং যথাসময়ে ফিরিয়ে দেয়া ব্যাংকারের দায়িত্ব। আবার গৃহীত বিনিয়োগ সময়মত পরিশোধ করা বিনিয়োগ গ্রাহকের দায়িত্ব। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইসলামী শরীআহ ঋণ পরিশোধের বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করেছে। শহীদদের মর্যাদা পরকালীন জীবনে অনেক বেশি হবে। হাদীসে বলা হয়েছে শহীদদের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে, কিন্তু ঋণের গুনাহ ক্ষমা করা হবেনা। এটি বান্দার হক । ব্যক্তি ক্ষমা না করলে মাফ হবে না। ব্যাংকের টাকা সাধারণ মানুষের। কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ শেষ বিচারের দিন থাকবেনা। তাই পরকালের শাস্তি থেকে বাঁচতে জীবিতাবস্থায় মানুষের হক ফেরত দেয়া প্রতিটি মুসলিম বিনিয়োগ গ্রাহকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বাংলাদেশের মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা অপরিসীম। ব্যাংক খাতের ক্ষত খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে এ খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এর পরিশোধনের কাজ শুরু করতে হবে এখনই। সমস্যার যায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের জন্য সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। খেলাপি গ্রাহকদের সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দিতে হবে, এবং খেলাপি বিনিয়োগ আদায়ে ব্যংকগুলোকে সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের জন্য এখন একটি দৃষ্টান্ত। এত অল্প সময়ে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দেশটি কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে! শ্রীলঙ্কা তাদের সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশের ঋণও পরিশোধ করেছে। পেশাদারিত্ব সুশাসন ও মূল্যবোধের কারণে শ্রীলঙ্কা তাদের সংকট কাটিয়ে উঠছে।
শিল্প বিপ্লবের সুফল কাজে লাগিয়ে অর্থনীতির মেরুদন্ড খ্যাত ব্যাংক খাতকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে যথাযথ নিয়মাচার পরিপালন করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া জরুরি। পাশাপাশি দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের নীতি গ্রহণ ও ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বাংক খাতের খেলাপি কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ খাতের সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে তা সমাধানের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করত এ খাতকে গতিময় করার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ব্যাংকার ও গ্রাহক সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
লেখক: রিয়াজ উদ্দিন, ব্যাংকার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
বাণিজ্যিক বিবেচনায় ‘সৌরবিদ্যুৎ’ টেকসই এবং অনেক বেশি লাভজনক

যশোরের সাইদুর রহমান, তার জুট মিলের জন্য প্রতিমাসে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা বিদুৎ বিল দিতে হতো। তার ফ্যাক্টরির ছাদে ২৩১ কিলোওয়াট পিক অন গ্রিড নেট মিটারিং সোলার সিস্টেম বসানোর পর প্রতিমাসে বিদুৎ বিল সেভ করতে পারছেন প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
একইভাবে গফরগাওয়ের প্রিন্স সাহেব তার বাড়ির ছাদে একটি হাইব্রিড সোলার সিস্টেম বসানোর ফলস্বরূপ বিদুৎ বিল কমে আসার পাশাপাশি ব্যাটারি বেকাপে লোডশেডিং এর ঝামেলামুক্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশে জ্বালানি চাহিদা দিনদিন বাড়ছে কিন্তু ডলার সংকটের কারনে দেশী-বিদেশী কম্পানিগুলোর বিদুৎ , জ্বালানি তেল, কয়লা এবং গ্যাসের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না, সরবরাহ কমে যাওয়ায় ব্যহত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে স্থাপিত বিদুৎকেন্দ্রগুলোর বেশীরভাগ এখন সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে স্মার্ট সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার পারে এই সংকট থেকে মুক্তি দিতে। অনেকেই মনে করে থাকে, জমির স্বল্পতা সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের জন্য বাধা। ভিয়েতনাম মাত্র তিন বছরে ১৮ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেখিয়েছে। রুফটপের উপযুক্ত ব্যবহার এবং মাত্র ৫% অকৃষি জমি ব্যবহার করে আমাদের দেশেও ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন সম্ভব।
সোলার রুফটপ সিস্টেমে সৌরবিদ্যুত উৎপাদন ব্যয় অনেক কম। প্রযুক্তির স্মার্ট ব্যবহারে আগের চেয়ে অর্ধেক জমি লাগছে সোলার প্লান্ট স্থাপনে। এছাড়া উৎপাদনশীলতাও বাড়ছে আগের চেয়ে অন্তত ৪ গুন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির দামও অনেক কমে এসেছে ফলে সৌরবিদ্যুত ব্যবহার সহজলভ্য হচ্ছে। বানিজ্যিক বিবেচনায় ‘সৌরবিদ্যুত’ টেকসই এবং লাভজনক।

কোনো প্রতিষ্ঠান যদি নিজ খরচে রুফটপ সোলার প্লান্ট করে তাহলে প্রতি ইউনিট বিদুৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৫ টাকা। অপরদিকে নেট মিটারিং সুবিধার আওতায় থাকা গ্রাহক নিজস্ব সোলার সিস্টেম থেকে সৌরবিদ্যুত ব্যবহারের পর অতিরিক্ত বিদুৎ গ্রিডে সরবারাহের মাধ্যমে বিদুৎ ক্রেডিট পেয়ে থাকে যা বিদুৎ বিলের সাথে সমন্বয় হয়। সৌরবিদ্যুতের স্মার্ট সলুশনের জন্য ভিভন টেকনোলজিস লিমিটেডের মতো ভালো অনেক কোম্পানি রয়েছে।
লেখক: মিনহাজুল হুদা রাহি, ইঞ্জিনিয়ার, ভিভন টেকনোলজিস লিমিটেড।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
বাংলাদেশে ঈদ উৎসব ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা বাংলাদেশে প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব। ঈদকে আনন্দমুখর করে তুলতে আমরা নানাবিধ আয়োজন করে থাকি। উভয় ঈদেই নানান পদের খাবারের আয়োজন থাকে। ঈদুল ফিতরে থাকে নতুন পোষাক সংগ্রহের প্রতিযোগিতা আর ঈদুল আযহায় কুরবানীর পশু যোগাড় করা এবং তার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি। আমাদের প্রতিটি কাজের সাথেই আর্থিক লেনদেন জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে ব্যাংক খাত।
সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দকে অর্থবহ করে তুলতে ব্যাংকগুলো নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ঈদুল আযহায় পশু কেনাকাটায় প্রচুর অর্থ লেনদেন হয়। নগদ টাকা বহন করার অনেক ঝুঁকি রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী তাদের সর্বস্ব খুইয়েছেন ছিনতাইকারী, পকেটমার ও ডাকাতের হাতে। নগদ টাকার সাথে নিজের জীবনও হারিয়েছেন অনেক গরু ব্যবসায়ী।
গ্রাহকরাও খুইয়েছেন তাদের কুরবানীর পশু কেনার টাকা। সাধারণ মানুষের তথা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জীবন সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে ২০২২ সালে ঢাকা শহরের ৬ টি গরুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন চালু করা হয়।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’এই শ্লোগান ধারণ করে যাত্রা শুরু করে এ কার্যক্রম। এসব স্মার্ট হাটে ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল বুথ থাকবে যেখানে টাকা তোলার ও জমা করার জন্য থাকবে এটিএম ও সিআরএম। এসব বুথে আরো থাকছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। খামারিদের কাছে থাকছে পস মেশিন যার মাধ্যমে কার্ড ব্যবহার করে টাকা দেয়া যায়। আরো থাকবে বাংলা কিউ আর যা স্ক্যান করে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে কেনাকাটার বিল দেয়া যায়। এসব ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করে বিক্রেতার হিসাবে টাকা জমা করার ব্যবস্থা রয়েছে। হাসিলও পরিশোধ করা যাবে বাংলা কিউআর-এ।
প্রথম বছরেই সফলতা পায় স্মার্ট হাট। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। ২০২২ সালে পরীক্ষামূলক এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্যাশলেস লেনদেন হয়। ব্যাংক হিসাব না থাকায় অনেকে শুরুতে লেনদেন করতে পারেননি। এ বছর দেশের প্রায় ১০ হাজারের বেশি খামারির ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে।

এবছর ঢাকার ৮টি ও চট্টগ্রামের ২টি সহ ১০টি স্মার্ট হাটে এবছর ডিজিটাল মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি খামারি যদি ব্যাংক হিসাব খোলেন তাহলে স্মার্ট লেনদেন অনেকটা সহজ হবে। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংক দেশের গুরুত্বপূর্ন পশুর হাটগুলোতে ব্যবসারীদের সাথে মত বিনিময় সভা আয়োজন করে। এসব সভায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্মার্ট ব্যাংকিংয়ের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া ব্যাংকগুলো খামারিদের হিসাব খোলা সহজ করার ব্যবস্থা নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা স্মার্ট হাটে তাৎক্ষণিক ব্যাংক হিসাব খুলে টাকা জমা দিতে পারবেন।
এর মাধ্যমে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এসব বুথে স্মার্ট লেনদেনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে খামারিদের ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো অনেক আগে থেকেই পশুর হাটগুলোতে জাল টাকা সনাক্তকরন মেশিনের মাধ্যমে টাকা সনাক্ত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় ব্যবসায়ীদের টাকা জমা দেয়ার সুবিধার্থে গরুর হাট সংলগ্ন ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ শাখাসমূহ খোলা রাখা হয়।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যাংকিং কার্যক্রমকেও স্মার্ট করার কোন বিকল্প নেই। ইতোমধ্যেই ব্যাংকগুলো ইন্টারনেট ব্যাংকিং, অ্যাপ ভিত্তিক ব্যাংকিং, কার্ড ভিত্তিক ব্যাংকিং সহ চালু করেছে হরেক রকম স্মার্ট সেবা। টাকা জমা করার জন্য এখন আর ব্যাংকের কাউন্টারে ভিড় করার দরকার হয়না। মেশিনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা টাকা জমা করা যায় ব্যাংকের হিসাবে।
কেনাকাটার দাম পরিশোধ করতেও নগদ টাকা বহন করার প্রয়োজন নেই। কার্ডের মাধ্যমে অথবা যেকোন ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিক্রেতার ব্যাংক হিসেবে টাকা দেয়া যায় অনায়াসে। ব্যংকগুলো প্রযুক্তিগত সেবায় যথেষ্ট স্মার্ট হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কেবল ব্যাংকগুলো স্মার্ট হলেই হবে না, গ্রাহকদেরও স্মার্ট করা প্রয়োজন।
এজন্য পর্যাপ্ত প্রচার প্রচারণারও প্রয়োজন রয়েছে। স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার তথা সকল ডিজিটাল মাধ্যমই এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথা প্রতিটি মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছে গেছে। ব্যাংকের শাখা উপশাখা এবং এজেন্ট আউটলেটও এখন সবার দোরগোড়ায়। ব্যাংকারদের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে স্মার্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে।
কুরবানীর হাটের গরু কেনা কাটাতেই শুধু ব্যাংকের ব্যস্ততা শেষ নয়। কুরবানীর পশুর চামড়া ব্যবস্থাপনাও আমাদের সামগ্রিক আর্থিক কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চামড়া ব্যবসায়ীদেরকেও প্রতি বছর বিনিয়োগ দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। এবছরও ইসলামী ব্যাংকসহ ১০টি ব্যাংক চামড়া ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ প্রদান করতে ২৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। ঈদের সময় বাজারে নিত্য পণ্যের পাশাপাশি চিনি, সেমাই ও মশলাসহ বিভিন্ন দ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায়।
বাজারে পর্যাপ্ত নিত্যপন্য সরবরাহ করতে দেশে উৎপাদনের পাশাপাশি অনেক পণ্য আমদানী করা হয়। এসব পন্য উৎপাদন, আমদানী ও সরবরাহেও পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনিয়োগ দেয় ব্যাংকগুলো। এছাড়া তৈরি পোশাকের চাহিদা পূরণে গার্মেন্টস এবং ফ্যাশন হাউসগুলোকে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ দেয় ব্যাংক যা সাধারণ মানুষের সামনে তাদের পছন্দের পন্য হাজির করে তাদের ঈদের খুশির উপকরণ যোগায়।
এছাড়া ঈদুল ফিতরে ব্যবসায়ীদের টাকা পয়সা জমা করার এবং গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন ভাতা প্রদানের জন্য ছুটির সময়েও খোলা রাখা হয় ব্যাংকের শাখা। ঈদের সময়ে প্রবাসীরা অন্য সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন।
তাদের পাঠানো টাকা স্বজনদের কাছে পৌঁছাতেও অতিরিক্ত চাপ নিয়ে হাসি মুখে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ব্যাংকাররা। নতুন টাকা ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ। ছেলে-বুড়ো সবাই নতুন টাকা পছন্দ করে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার পূর্ব মহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে নতুন টাকা অবমুক্ত করে। ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখা থেকে এসব নোট সরবরাহ করা হয়।
নতুন টাকা সংগ্রহের জন্য এসব ব্যাংকের শাখায় গ্রহকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। ঈদের ছুটিতেও যেন গ্রাহকরা পর্যাপ্ত নগদ টাকা পেতে পারেন সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয় ব্যাংকগুলোকে। এটিএম বুথগুলোতে রাখা হয় পর্যাপ্ত নগদ টাকা। কোন বুথে টাকা শেষ হয়ে গেলে দ্রুত সেটা পূরণ করার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অন্যান্য ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করে টাকা লেনদেন ও কেনাকাটার সুযোগ তো থাকছেই।
সামগ্রিকভাবে ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে তুলতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের জন্য নানাবিধ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষই যেন ব্যাংকগুলোর এই স্মার্ট সেবা গ্রহণ করে জীবন সহজ করতে পারেন সেজন্য স্মার্ট ব্যাংকিং বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
লেখক: রিয়াজ উদ্দিন, ব্যাংকার
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে বন্ধ করতে হবে মানিলন্ডারিং

শিকাগোর শীর্ষ মাফিয়া ডন আলফোনসে গ্যাব্রিয়েল কেপন বা আল-কেপনের কথা অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন। ১৯২০ এর দশকে আমেরিকায় মাদক বেচাকেনা নিষিদ্ধকালীন সময়ে তার ছিল মাদকের রমরমা ব্যবসা। পাশাপাশি পতিতালয়সহ অনেকগুলো অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করত সে। এভাবে সে গড়ে তোলে সম্পদের পাহাড়। অবৈধ উৎস থেকে আহরিত এসব কালো টাকা সাদা করার জন্য লন্ড্রী ব্যবসা শুরু করে আল-কেপন। শহরজুড়ে স্থাপন করে বেশ কয়েকটি লন্ড্রী যেন বাস্তবে মনে হয় এখান থেকেই তার সকল আয় আসে। পরবর্তীতে সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধীরে ধীরে তার সকল অপরাধ সামনে চলে আসে। লন্ড্রী ব্যবসার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার এই অভিনব পদ্ধতিকে মানি লন্ডারিং নামে আখ্যায়িত করা হয়।
কেপনের মতই সারা বিশ্বে অপরাধীরা তাদের অপরাধ থেকে আসা আয় বৈধ দেখাতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকে। এ ধরণের অপরাধ প্রতিরোধে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই আইন রয়েছে। বাংলাদেশেও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে ২০০২ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। ২০১২ সালে পূর্বের আইনটি বাতিল করে নতুন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয় যা ২০১৫ সালে আংশিক সংশোধন করা হয়েছে।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২৭ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব অপরাধের মধ্য রয়েছে দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন, মুদ্র জাল করা, দলিল পত্র জাল করা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, অবৈধ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা, অপহরণ, অবৈধভাবে আটক রাখা, খুন ও মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি, নারী ও শিশু পাচার, চোরাকারবারি, দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার, চুরি–ডাকাতি দস্যুতা-জলদস্যুতা বা বিমানে দস্যুতা।
এ সংক্রান্ত অপরাধের মধ্যে আরও রয়েছে মানব পাচারের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন, যৌতুকের অর্থ, চোরাচালান ও শুল্কসংক্রান্ত অপরাধ, করসংক্রান্ত অপরাধ, মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন, ভেজাল বা স্বত্ব লঙ্ঘন করে পণ্য উৎপাদন, পরিবেশগত অপরাধ, যৌন নিপীড়ন, পুঁজিবাজার সম্পর্কিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশের আগে তথ্য কাজে লাগিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায় এবং সংঘবদ্ধ কোনো অপরাধী দলে অংশ নেওয়া।
এ ধরনের অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৪ থেকে ১২ বছরের কারাদন্ড ও এর পাশাপাশি মানিলন্ডারিংকৃত অর্থের দ্বিগুণ অথবা ১০ লক্ষ টাকা যেটা বেশি এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিল এবং মানিলন্ডারিংকৃত অর্থের দ্বিগুণ অথবা ২০ লক্ষ টাকা যেটা বেশি সে পরিমাণ জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া আদালত অপরাধে জড়িত সমুদয় অর্থ রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট না করলে আইন অনুযায়ী অনূন্য ৫০ হাজার টাকা থেকে অনুর্ধ ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। অধিকন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল হতে পারে।
এ আইন অনুযায়ী, বৈধ অনুমোদন ছাড়া দেশের বাইরে অর্থ-সম্পত্তি প্রেরণ বা পাচার কিংবা দেশের বাইরে উপার্জিত সম্পত্তি, যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে, তা ফেরত না আনা কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশে অর্জিত অর্থ বা প্রকৃত পাওনা দেশে না আনা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অর্থ পাচারের নানামুখী উৎসের মধ্যে রয়েছে বিদেশে বিনিয়োগের আড়ালে অর্থ পাচার, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার, মানব পাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কায় রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী বিদেশে অর্থ পাচার করে থাকেন। এছাড়া মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর ট্রান্সফার মিসপ্রাইসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের সম্ভাবনা থাকে।
অপরাধীরা তাদের টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পাদন করার চেষ্টা করে থাকে। ব্যাংকিং চ্যানেলে যেন মানিলন্ডারিং সংঘটিত হতে না পারে সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বেধে দেয়া নিয়ম কানুন অনুসরণ করে নিয়মিত রিপোর্ট করে থাকে।
সন্দেহজনক লেনদেন হলে সাথে সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করার নিয়ম রয়েছে। আইন অনুযায়ী, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কাস্টমস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ সংক্রান্ত অপরাধের তদন্ত করতে পারবে।
অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় প্রবেশ করাতে প্রথম পর্যায়ে তা ব্যাংকের হিসাবে জমা করা হয়। এরপর ছোটছোট বিভিন্ন লেনদেনের মাধ্যমে ঐ টাকা ছড়িয়ে দেয়া হয়। তৃতীয় ধাপে আপাত দৃষ্টিতে বৈধ মনে হওয়া ঐ অর্থ বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করা হয়। এভাবে কালো টাকা সাদা করে মানিলন্ডারিং করে থাকে অপরাধীরা।
সরকারের কর ও শুল্ক ফাঁকি দেয়ার লক্ষ্যে মানিলন্ডারিং করে থাকে অনেকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট ব্যবসায় ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়। দেশে কি পরিমাণ মানিলন্ডারিং হয় তার কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে দেশে এমন অনেক অফিস রয়েছে যেখানে ঘুষ ছাড়া ফাইল সই করা হয় না। অন্যান্য সম্পৃক্ত অপরাধের তালিকা ধরে হিসাব কষলে মানিলন্ডারিংয়ের অংক মিলানো কঠিন হয়ে পড়বে। তবে গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতি বছর দেশ থেকে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। এছাড়া অন্যান্য উপায়ে দেশ থেকে প্রতি বছর এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়ে থাকে।
মানিলন্ডারিংয়ের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতির মাধ্যমে সামিগ্রকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে বিনিয়োগ করা সম্ভব হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও প্রকৃত উৎপাদন অনেক বেড়ে যেত, সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখা যেত দ্রব্যমূল্য, নিশ্চত হতো টেকসই উন্নয়ন, তরান্বিত হতো প্রকৃত উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন।
মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশ থেকে বিপুল অর্থ বাইরে চলে গেলেও অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। স্বল্প সংখ্যক ঘটনায় মামলা হলেও মামলার বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তা এক সময় সাধারণ মানুষের দৃষ্টির অগোচরে চলে যায়। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা ও অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে তা জনসম্মুখে আনার ব্যবস্থা করলে দেশে মানিলন্ডারিংয়ের সাথে সাথে অনেক বড় বড় অপরাধ কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
মানিলন্ডারিংয়ের মত অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ধরণের অপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনা দেখা গেলে তা আগে থেকেই প্রতিরোধের চেষ্টা করতে হবে সবাইকে। বাড়াতে হবে সততার চর্চা ও সৎভাবে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা।
লেখক: ব্যাংকার
ই-মেইল: riyazenglish@gmail.com
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
ওএসডি কোন নীতিমালার মধ্যে পড়ে

যারা নীতি নির্ধারক হয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকেছেন তাদের কাজ মূলত নীতিমালা তৈরি করা। তারা নিজ থেকে দেশের এত বড় একটা গুরুদায়িত্ব পালন করতে সংসদ ভবন দখল করেছেন। বর্তমানে সেই সংসদে বিরোধী দল নেই আছে শুধু একাকীত্ব। বিরোধী দলের নেত্রী কখন জেলে গেলেন, কখন বের হলেন, কবে মামলার শুনানি হবে আর কবে হাসপাতালে চেকআপ করবেন এই খবর ছাড়া অন্য কিছু আমি শুনিনা বা জানিনা। অথচ ৩৫০ জন নীতি নির্ধারকসহ তাদের সহযোগী আমলারা রয়েছেন যারা শপথের বাণী পড়ে নীতিমালা তৈরি এবং তার প্রতিফলন ঘটাবেন বলে ওয়াদা করেছেন কিন্তু হচ্ছে কি সেই কাজগুলো সঠিকভাবে? সংসদ ভবন আছে নেই শুধু সৃজনশীল নীতিমালা!
মাত্র দুটি বিষয় তুলে ধরি তাহলে বুঝতে সহজ হবে কেন আমি হঠাৎ এমন একটি মন্তব্য করলাম।
আচ্ছা ভাবুন তো দেশের এই উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের কথা! প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ থাকতে হবে, আছে কি? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ বাধ্যতামূলক থাকতে হবে, আছে কি? আবাসিক এলাকাতে পার্ক থাকলেও সেখানে মানুষ কি করে? হাঁটাহাটি করে, সেটাও প্রয়োজন। তা নাহলে আপনি হাঁটবেন কোথায়? বাচ্চারা কি সেখানে খেলতে পারে? না। তারা দেখা যায় রাস্তার মধ্যে ক্রিকেট খেলে।
দেশের শহরগুলোকে শুধু ইট, কাঠ, পাথরের বস্তি না বানিয়ে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা দরকার নয় কি?দেশের সবার মাথায় একটিই ভাবনা ছেলে মেয়েকে শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে হবে। ছেলে বা মেয়ে বিজ্ঞান পড়তে চায় না কিন্তু অভিভাবক তাকে বাধ্য করেছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। ফলাফল রেজাল্ট খারাপ। অনেক ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্ট কিন্তু ডাক্তারি পড়তে চায় না। বাবা মা পড়াবেনই। এরকম ঘটনা ঘরে ঘরে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। যে পড়বে তার ইচ্ছেকে মূল্যায়ন করতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার মানেই সফল জীবন নয়। এটা মাথায় নিতে হবে। আপনার বাচ্চা আপনি তাকে পৃথিবীতে এনেছেন ঠিকই কিন্তু তাকে যা খুশি তাই করতে চেষ্টা করার আগে অগত্যা ভাবুন সে নিজেই একটা আলাদা মানুষ। যা জোড়ালো হতে থাকে বয়:সন্ধিতে। এটা জেনে বুঝেও নিজের ইচ্ছেটা পূরণ করতে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে তার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েন না। কিশোরীদের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের এই সময়টা সত্যিই এই শহরগুলোতে কষ্টদায়ক। নিরাপত্তার অভাবে একা কোথাও যেতে পারে না। ফলে মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যা চিন্তার বিষয়, বিভিন্নভাবে প্রলোভিত হচ্ছে ওইটুকুন একটা যন্ত্রের মাধ্যমে। তাদেরও প্রয়োজন মুক্ত বাতাস যেখানে সে নির্ভয়ে বেড়ে উঠবে। না হলে শারীরিক সমস্যার সাথে সাথে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা বৃদ্ধি পাবে।
যাইহোক, এসব চিন্তাগুলো শুধু বাবা-মার না এসব চিন্তাগুলো সংসদ সদস্যদের এবং আমলাদেরও হওয়া উচিত। শুধু শহর নয় সারা দেশের আনাচে কানাচে রয়েছে লাখো লাখো নতুন প্রজন্ম তাদের কথা ভাবুন! কে জানে দেখবেন, হঠাৎ পৃথিবী সেরা অলরাউন্ডার আমরাই পেয়েছি। এমনটি কিন্তু হতে পারে। আমরা আশা নিয়েই বাঁচি এবং বেঁচে আছি।

এটা গেল একটি বিষয়। এবার আসি আরেকটি বিষয় নিয়ে।
চল্লিশ বছর কাজ করতে এবং কাজ করাতে নিযুক্ত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে চাকুরিরত কোন কর্মচারিকে ওএসডি করে রাখা হয় শুনিনি। এমনকি চাকুরির ক্ষেত্রে এ যুগে ওএসডি শব্দটি যে ব্যবহৃত হয় তা কেবল বাংলাদেশেই চলমান। তবে ওএসডি শব্দটি মূলত একটি অন-স্ক্রিন ডিসপ্লে (OSD) বা একটি কন্ট্রোল প্যানেল যা একটি কম্পিউটার মনিটর, মোবাইল ডিভাইস, টেলিভিশন স্ক্রীন বা অন্য একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ডিসপ্লেতে তৈরি করা হয় এবং যা ব্যবহারকারীদের দেখার বিকল্পগুলো নির্বাচন করতে এবং/অথবা ডিসপ্লের উপাদানগুলোকে সামঞ্জস্য করতে সক্ষম করে। যেমন উজ্জ্বলতা, বৈসাদৃশ্য, এবং অনুভূমিক ও উল্লম্ব অবস্থান ইত্যাদি। তবে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) অনুশীলনটি ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়কালের একটি প্রথা যা ১৯৩১ সালের দিকে চালু ছিল যেমন যখন একজন কর্মকর্তা তার নিয়োগের মাধ্যমে সরকারকে তার নিয়োগে ব্যয় করার চেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা দিত আর যখন বৃহত্তর কল্যাণের জন্য সরকারের উপর একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা করত।
এটি কখনো কখনো ভবিষ্যতে উচ্চস্তরের নিয়োগের জন্য একটি প্রশিক্ষণ পর্যায় হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তবে দায়িত্ব অদৃশ্য হয়ে গেলে নিয়োগকর্তা কি একজন কর্মচারীকে পুনঃনিয়োগ করতে পারতেন বা শর্তগুলি কি আগের মতোই থাকত এবং পেশ করার মতো কোনো কাজ না থাকলে কী করত? এমতবস্থায় কর্মিকে একজন স্পেশাল ডিউটির অফিসার হিসাবে নিয়োগ দিতেন।তৎকালীন ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে এ ধরনের নিয়ম ছিল।
আর আমাদের দেশে ওএসডি বলতে বোঝায় একজন কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া। সে কোনো প্রমোশন পাবে না তবে বর্তমান স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা পাবে। এটি জানা মতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। তবে হতে পারে সীমিত সময়ের জন্য কেউ পোস্টিং অর্ডারের অপেক্ষায় আছে সেক্ষেত্রে এই কর্মকর্তারা সচিবালয়ে রিপোর্ট করেন এবং সেখানে তারা তাদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করা ছাড়া কিছুই করেন না।
অন্যান্য দেশে ওএসডি বা অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি শব্দটির যে অর্থ, বাংলাদেশে সে অর্থ বহন করে না। সেসব দেশের জনপ্রশাসনে কিছু কর্মকর্তার ওপর বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়; যাঁরা অন্য কর্মকর্তাদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে বিবেচিত। সরকারের প্রয়োজনে তাঁদের ওপর সেই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। আবার দায়িত্ব শেষে আগের পদে ফিরিয়ে আনা হয় যাকে বলা হয় ডেপুটেশন।
বাংলাদেশে ওএসডি কর্মকর্তা অর্থটি অত্যন্ত নিন্দাবাচক হয়ে পড়েছে। একজন অফিসারকে ওএসডি হিসেবে মনোনীত করা হলে এটি একটি কলঙ্ক হিসাবে বিবেচিত হয়। এতে বোঝায় যে কর্মকর্তার জন্য সরকারের কোনো উপযুক্ত পদ নেই বা তাদের পরিষেবার আর প্রয়োজন নেই। তারপরও তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ঠিকই তবে সে কোনো প্রমোশন পাবে না তবে বর্তমান স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা পাবে শুয়ে বসে। এতে জনকল্যাণ বা আদৌ কোনো কল্যাণ হয় কি?
আমাদের সুইডেনে অনেক সময় আমরা যদি কর্মচারীর কাজে খুশি না হই বা যদি তার অন্যান্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা দেখা দেয় তখন তাকে পুনঃনিয়োগ (omplacering) করি। যদি বা যখন কোনো উপায় না থাকে তখন কর্মস্থল থেকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু বাসায় বসিয়ে জামাই আদরে ওএসডি করে রাখা হয়, কখনও শুনিনি। বৃটিশ বা পাকিস্তানী নিয়ম কানুনই যদি দেশে চলবে তাহলে কী দরকার ছিল তাদের তাড়ানোর? বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে শুধু চোরগুলো রেখে গেছে।
এখন দেখছি তাদের আইনকানুনও রেখে গেছে। আমি যতটুকু জানি যুগ যুগ ধরে এই ধরনের ওএসডিধারীরা সকল সুবিধা ভোগ করছে শুধু কাজ করছে না এ ধরনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশে হাতে গুনে শেষ করা যাবে না। সরকার বা রাষ্ট্র কীভাবে এত বছরেও এর রহস্য উদ্ধার করতে পারছে না? তবে আমার জানা মতে সরকার নিজেই এর জন্য দায়ী যেমন প্রতিবারই সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে একদল কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে যান আর পূর্ববর্তী সরকারের আমলের ওএসডিরা উচ্চতর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। জনপ্রশাসনের এ দুরারোগ্য রোগটি দূর করা না গেলে জনপ্রশাসন নির্ভয়েকাজ করতে পারবে না। এ ধরনের দলীয়করণের ফলে অনেক সময় নিরীহ ও মেধাবী কর্মকর্তারা পরিস্থিতির শিকারে পরিণত হন। তারপর অনেকে দলকে কাজে লাগিয়ে আবার অনেকে সাতে-পাঁচে না থাকলেও স্বার্থান্বেষী মহল তাঁদের গায়ে বিশেষ দলের রং জুড়ে দিয়ে কোণঠাসা করে রাখে। ওএসডি কর্মকর্তাদের মধ্যে এ রকম দক্ষ ও নিরীহ কর্মকর্তার সংখ্যা কম নয়।
বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী কর্মকর্তারাই নিয়োগ পান। যাচাই-বাছাইও কম হয় না। সেখানে রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নয়। কিন্তু এ পরীক্ষা-প্রক্রিয়ায়ও গলদ রয়ে গেছে। অনেক সময় সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় থেকেই দলীয় লোকদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা দেখা যায়। এটা আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আর বাস্তবতা হলো নিয়োগ-প্রক্রিয়া থেকেই দলীয়করণের শুরু। যদিও খুব কমসংখ্যক কর্মকর্তাই এ ধরনের অনিয়মের সুযোগ পান, কিন্তু এর পরিণাম ভোগ করতে হয় অন্যদেরও। নতুন সরকার এসে সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং আবার জোরেশোরে তাদের দলীয় সমর্থকদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে তৎপর হয়।জনপ্রশাসনের এ অসুস্থ ধারা ভাঙতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা সরকারেরই কর্তব্য। তা না হলে প্রজাতন্ত্রের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে না।
যে দেশে একজন মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে, রোগীকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে দিতে পারছে না হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি না থাকার কারণে, শেষে বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু বরণ করছে সে দেশে কীভাবে ওএসডি প্রথা চলমান? খুব জানতে ইচ্ছা করে!জাগো বাংলাদেশ জাগো, নতুন করে ভাবো।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।