ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিলো জাতীয় কমিটি

ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিলো জাতীয় কমিটি
দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। বর্তমানে পৃথিবীর সকল দেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় রয়েছে। কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন কেনার টাকাও জমা দিয়েছে। বাংলাদেশকেও অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে বুকিং দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। এছাড়া আসন্ন দুর্গাপূজা সীমিত আকারে উদযাপন করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ১৯তম অনলাইন সভায় এ পরামর্শ দেয়া হয়। এতে জাতীয় কারিগরি কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ সভাপতিত্ব করেন। সভায় দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণের প্রস্তুতিতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানানো হয়। কমিটি বলেছে, কোনো কোনো টিকার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার কোল্ড চেইন ব্যবস্থা আমাদের নেই।

ভ্যাকসিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখা যেতে পারে অথবা উল্লিখিত তাপমাত্রার কোল্ড চেইন ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কোনো একটি ভ্যাকসিনের জন্য কাজ না করে একাধিক উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশেষ করে যেসব দেশে ভ্যাকসিন তৈরিতে সে দেশের সরকারের সম্পৃক্ততা আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পর ভ্যাকসিন প্রদানের কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করতে হবে এবং এখনই ভ্যাকসিন ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। ভ্যাকসিন প্রদানের পরবর্তী সময়ে ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলোআপ করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। ভ্যাকসিন বিষয়ক বিশেষ কমিটিতে নাইট্যাগ ও জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রতিনিধি রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে যেসব প্রতিষ্ঠান ট্রায়াল কার্যক্রমের উপযুক্ত ও দক্ষ তাদের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে অভিমত দেয়া হয়। আইসিডিডিআরবি-এর সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, আইইডিসিআর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কমিটি পরামর্শ দিয়েছে, বর্তমানে পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে যার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম।

কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারলে আরো বেশি সংক্রমণ শনাক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে জাতীয় পরামর্শক কমিটি এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্টের জন্য একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে রোগ নির্ণয়ে এন্টিজেন টেস্টের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্টের ব্যাপারে একটি নীতিমালা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব জেলায় পিসিআর টেস্টের সুবিধা নেই এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে এন্টিজেন টেস্টের পরিকল্পনা দাখিল করা হয়েছে। এন্টিজেন টেস্ট কিটের যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে একটি সাবধানতার বিষয়ও এখানে রয়েছে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনের কিটের এখনো অনুমোদন দেয়নি।

জাতীয় পরামর্শক কমিটি মনে করে তিন পদ্ধতিতে (পিসিআর, এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্ট) কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম পাশাপাশি থাকলে তা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখন সেরোসার্ভিল্যান্স নিয়ে কাজ করার সময় এসে গেছে যার জন্য এন্টিবডি টেস্ট চালু করাও প্রয়োজন। যে সব কারণে পরীক্ষা কমে গেছে সেগুলো দূর করে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়ানো দরকার। যা করা গেলে বিশ্ব মহামারি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সংক্রমণ পরিস্থিতির একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে। কোভিড-১৯ পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য জনগণের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। নমুনা সংগ্রহের বুথের তালিকা প্রকাশ্য স্থানে প্রদর্শন (ডিসপ্লে) করা প্রয়োজন। এ ছাড়া নমুনা সংগ্রহের ও পরীক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। পরীক্ষা দ্রুত করার জন্য অটো এক্সট্রাকশন এর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবার-পরিজনও কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছে। কমিটি মনে করে হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর কোয়ারেন্টিনের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের অনুদান প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ের কাছে দাখিল করা প্রয়োজন। তালিকাটি জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে একটি সাব কমিটি গঠন করে এবং ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সম্পৃক্ত করে প্রস্তুত করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনসাধারণ এর মধ্যে এক ধরনের শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। জনসাধারণকে আরো সচেতন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জনগণের সক্রিয় অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। দুর্গাপূজা হিন্দু সমপ্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, যা আগামী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। কোভিড-১৯ মহামারির পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গাপূজা উদযাপন করার জন্য সভায় পরামর্শ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দুর্গাপূজার আচরণবিধি প্রস্তুত করে দেয়া প্রয়োজন বলে সভা মনে করে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
নির্বাচন ঘিরে সেন্টমার্টিনের পর্যটন বন্ধ ৩ দিন
মেট্রোরেলে মাছ-মাংস-সবজি পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা
জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেড়েছে বজ্রপাত-মৃত্যু