অর্থনীতি
বাণিজ্য ঘাটতি কমে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ডলার

ডলার সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে ধারবাহিকভাবে কমছে বাণিজ্য ঘাটতি। এপ্রিল মাস শেষে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৫ কোটি। ২০২২ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৬৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি কমেছে ৪৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত মার্চে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৪৬১ কোটি ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতিও কমে হয়েছে ৩৭৭ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ডলার। এ হিসাবে কমেছে ১ হাজার ১৭২ কোটি ডলার।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের পরিসংখ্যানের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে উভয় হিসাবেই আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতি কমেছে।
হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ডলার। এক বছর আগে গত মার্চে এ ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৭৬৯ কোটি ডলার। এ হিসাবে ঘাটতি কমেছে ১ হাজার ১৯৬ কোটি ডলার (১০.৯৬ বিলিয়ন)। শতকারা হিসাবে কমেছে ৪৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৮ কোটি ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ে আমদানি খাতে ব্যয় ছিল ৬ হাজার ৮৬৭ কোটি ডলার।

চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আমদানি ব্যয় ছিল ৫ হাজার ৩৯৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ডলার বা ২৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৯৭ কোটি ডলারের, যা গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে রপ্তানি থেকে আয় এসেছিল ৩ হাজার ৯৩১ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছর রেকর্ড ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি এবং ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়েছিল। এর পর নানামুখী উদ্যোগে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসার প্রভাবে এ সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা মানে নিয়মিত লেনদেনে কোনো ঋণ করতে হয় না দেশকে। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
রিজার্ভ কমে আসা এবং চলতি হিসাবে রেকর্ড ঘাটতির মধ্যে সরকার বাজেট সহায়তাসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও দেশের কাছে অর্থায়নের চেষ্টা শুরু করে। এর অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। এর প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার গত ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই পেয়েছে বাংলাদেশ। কিস্তিতে অবশিষ্ট অর্থ পাওয়া যাবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
অপরদিকে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে গত বুধবার ৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী জুন নাগাদ আরও কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণে অর্থ পাওয়ার আশায় রয়েছে বাংলাদেশ। এসব অর্থ ছাড় হলে চলতি হিসাবের ঘাটতি আরও কমে তা ভারসাম্য আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে গত এপ্রিল শেষে সামগ্রিক লেনদেনের (ওভার অল ব্যালান্স) ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৮৪০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫২৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিলে ঘাটতির এ পরিমাণ ছিল ৮১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে, এপ্রিল শেষে যা দাঁড়িয়েছে ২১৬ কোটি ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চে এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। গত মার্চে এ হিসাবে ঘাটতি ছিল ২২১ কোটি ডলার।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
খাদ্য মূল্যস্ফীতির অস্বস্তি কমেনি

খাদ্য পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে কোনভাবেই স্বস্তি মিলছে না। বাজারের মাছ-মাংসের পাশাপাশি সবজি, মুদি বাজারে যেন হাত দেওয়া বারণ! সম্প্রতি যে হারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে তাতে বেশ বিপাকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। সেপ্টেম্বরে গ্রাম-শহরনির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ১২ শতাংশের ওপরে রয়ে গেছে। গত আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে ওঠে।
তবে গত সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে কোন সুখবর না আসলেও সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। এই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমেছে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল মঙ্গলবার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর শহরে সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, গত মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপর জুন ও জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে। তা জুন মাসে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও জুলাইয়ে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ হয়। তবে আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যায়। এ মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
লক্ষণীয় দিক হচ্ছে, দেশে গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়। এ মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতির এই হার ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে উঠেছিল।

বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে গ্রাম-শহর মিলিয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগের মাস, অর্থাৎ আগস্টে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৫৪। এর মানে, সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে মাত্র দশমিক ১৭ শতাংশ। গত জুলাই মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর মাসে গ্রাম এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা শহর এলাকায় ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
অন্যদিকে গ্রাম-শহর মিলিয়ে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি আগস্টের ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ থেকে কমে সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছে। সেপ্টেম্বরে গ্রাম এলাকায় খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ ও শহর এলাকায় এটি কিছুটা কমে ৮ দশমিক ১২ শতাংশ হয়েছে।
এ ছাড়া গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা বছরভিত্তিক হিসাবে গত এক যুগে সর্বোচ্চ।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বেসরকারি খাতে ২২ মাসে সর্বনিম্ন ঋণ প্রবৃদ্ধি

বৈশ্বিক চলমান সংকটে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর বেশ প্রভাব পড়েছে। কেউ কেউ খরচ কমাতে ব্যবসার আকার সীমিত করে নিচ্ছেন। আবার দেশে ডলার সংকটের জন্য আমদানির কড়াকড়িতে অনেকে পর্যাপ্ত কাঁচামাল ক্রয় করতে পারছেন না। ফলে বেসরকারি খাতে আগের তুলনায় ঋণ বিতরণ কমে এসেছে। গত আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ২২ মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা আগস্টে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ঋণে এই প্রবৃদ্ধি গত ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল, এটি তার চেয়ে ১ শতাংশের মতো কম। এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এরপর কখনোই তা ১০ শতাংশের নিচে নামেনি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি খাতের ঋণের বড় অংশ ব্যয় হয় আমদানিতে। তবে ডলার-সংকটের কারণে চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। তাই আমদানি কমে গেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় এখন কেউ নতুন করে প্রকল্প নিতে চাইছেন না। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। তখন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এরপর জুলাইয়ে ঋণ কমে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকায় নামে। তাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে হয় ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত আগস্টে ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধি আগস্টে আরও কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই থেকে আগস্ট—এই এক মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। আর জুন থেকে জুলাইয়ে ঋণ কমেছিল ৮ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। বর্তমান মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ।

এদিকে জুলাই থেকে নতুন পদ্ধতিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, যা স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, যা আগস্টে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। ফলে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বের স্মার্ট রেট বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। ফলে চলতি মাসে সুদহার বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। আগে ব্যাংকঋণের সুদহার ছিল সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। ঋণের সুদ বৃদ্ধির ফলেও চাহিদা কিছুটা কমেছে।
দেড় বছর ধরে দেশে ডলারের সংকট চলছে। এতে ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। মাঝে ডলারের দাম বাড়ার কারণেও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছিল। কারণ, প্রতি ডলারে খরচ ২৫ টাকার বেশি বেড়ে গিয়েছিল। তবে এখন আমদানি ঋণ কমে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণ কমে গেছে বলে ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ঋণ খেলাপিতে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বাংলাদেশ

খেলাপি ঋণ একটি দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা সৃষ্টি করে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে খেলাপি ঋণের হার কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে। দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণের হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাংলাদেশে। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্দশায় থাকা শ্রীলঙ্কা। এমনকি উচ্চ মূল্যস্ফীতির পাকিস্তানও ঋণ খেলাপিতে বাংলাদেশ থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত রোববার খেলাপি ঋণের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, দেশে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা এপ্রিল-জুন সময়ে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা বেড়েছে।
বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কায় খেলাপি ঋণের হার ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পাকিস্তানে তা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
ভারতে খেলাপি ঋণের হার অনেক কম। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারতে খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) ধারণা হলো, ভারতে আগামী বছর খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন দেশে খেলাপি ঋণের হিসাব তাদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার নিয়মিত বাড়ছে। যেমন ২০১৩ সালে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ; পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে তা একলাফে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে উঠে যায়।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়ায় ২০১৮ সালে। এরপর কিছুটা কমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, এখন আবার খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে।
ভারতে খেলাপি ঋণের চিত্রও আছে বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে। তাদের হিসাবে, ২০১৭ সালে ভারতের খেলাপি ঋণ ছিল মোট ঋণের ১০ শতাংশ, যা কমতে কমতে ২০২১ সালে সাড়ে ৬ শতাংশে নামে।
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) পাকিস্তানে খেলাপি ঋণ ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য দিক হলো, দুর্দশার মধ্যেও দেশটিতে খেলাপি ঋণ কমেছে। আগের বছরের একই সময়ে পাকিস্তানে খেলাপি ঋণ ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, দেশটিতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, তবে হার এখনো কম। সেটা ৩ শতাংশের আশপাশে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মালদ্বীপের খেলাপি ঋণ ছিল ৬ শতাংশের কম। ভুটানের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৮ শতাংশের নিচে।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দামের কারসাজি বন্ধে আলু আমদানির সুপারিশ

ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দেশে হুট করে বাড়ছে নির্দিষ্ট পণ্যের দাম। পেঁয়াজ, চিনি, মুরগি, ডিমের পরে বর্তমানে আলুর বাজারে অস্থিরতা বিরাজমান। তাতে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানান সতর্কতা এবং অভিযান পরিচালনা অনেক সময় কাজে আসেনি। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাতে পেঁয়াজের দামে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। এবার লাগাম ছাড়া আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সীমিত পরিসরে আলু আমদানির সুপারিশ করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর।
সম্প্রতি আলু নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনো কোনো ডিম আমদানি হয়নি। এখন আলু আমদানির সুপারিশের ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নেয়, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন আমদানিকারকেরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সীমিত আকারে আলুর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া হিমাগার, ব্যাপারী, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যারা অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে আরও যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে আছে- কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া, কৃষকদের জন্য শস্য বিমা চালু, কৃষিপণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারে নজরদারি বাড়ানো, টেকসই বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রান্তিক কৃষকদের ন্যায্যমূল্যে বীজ আলু, সার ও কীটনাশকপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার মতো বিষয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ভোক্তার প্রতিবেদনে আমদানির সুপারিশের পাশাপাশি কিছু পর্যবেক্ষণও তুলে ধরা হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বাজার ও হিমাগার অভিযানের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। বিশেষ করে আলু উৎপাদনকারী বড় চার জেলা মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও নীলফামারীতে হিমাগার পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কৃষিঋণ প্রকৃত কৃষকেরা পাচ্ছেন না। হিমাগারমালিকেরা এই সুবিধা নিচ্ছেন কৃষকদের নামে। পরে তারা এজেন্টদের মাধ্যমে আলু উৎপাদন মৌসুমে দাদন প্রথা চালু করেন। এর মাধ্যমে হিমাগার মালিকেরা কৃষকদের স্বল্প মূল্যে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করেন। আর এজেন্টরা প্রাপ্ত অর্থ ব্যবহার করে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে তা হিমাগারে সংরক্ষণ করে।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বনানীতে হস্ত ও কুটির শিল্পের মেলা অনুষ্ঠিত

রাজধানীর বনানীতে চাঁদনী স্টুডিওতে ‘মেলা বিফোর সেপ্টেম্বর এন্ডস’ নামে একটি হস্ত ও কুটির শিল্পের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই মেলা চলে।
মেলার আয়োজন করে ‘চাঁদনী স্টুডিও’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। যার প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি ও শিল্পী নকশাকার পাপিয়া সারওয়ার দিঠি এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি, বংশীবাদক ও ক্যালিগ্রাফার নাজেম আনোয়ার।
স্থপতি পাপিয়া সারওয়ার নিজেও একজন উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, কাজের সূত্রে আরও অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়; যারা অনেক রুচিশীল, অনুপম, বিরল পণ্য তৈরি করেন। এই সৃজনশীল মানুষগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্ম করে দেওয়ার উদ্দেশে তাদের এই আয়োজন।
টানা দুদিন চলা এই মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ফারজানা আহমেদ উর্মির ‘কাঁচপোকা’, তারান্নুম নিবিড়ের ‘উড়ুক্কু’, লায়লা আহমেদের ‘মায়াবী বনসাই’, পাপিয়া সারওয়ার দিঠির ‘বানাই’, নাজেম আনোয়ারের ‘নাজেম আনোয়ার ক্যালিগ্রাফি’, মোহাম্মদ শাহাদাতের ‘ফুটপাত’, চিত্রশিল্পী শামা শাইওম-রুহানি-জিহানের ‘অয়ময়’, সৈকতের ‘ইন্টারনাল হাব’, তন্ময়ের ‘সতত’, তামিমের ‘রেইন-সে-আর্য’, ফেরদৌস স্বপ্নিলের ‘পরিভ্রমণ’, এলমা-বাঁধন-শশীর ‘চিত্রলিপি’, নাবিলা তাবাস্সুমের ‘গোড়া’, হাফসা কেয়ার ‘চারু-অলংকার’, শিমলা হকের ‘হোল্লা’ এবং নওশীনের ‘মুনলাইট’।
এ ছাড়া মেলায় খাবারের আয়োজনও ছিল। খন্দকার দিল আফরোজের ‘খোনদাস কিচেন’ এবং আসিফের ‘গ্রাম-চা’ এবং জান্নাতুল ফেরদৌস মিষ্টির ‘বোন-সিস্টার, জুস কর্নার’।

মেলায় শিল্পী, ব্যবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রী, চাকরিজীবী, বিদেশি পর্যটক এবং সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
অর্থসংবাদ/এমআই