বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শ্লথগতির শঙ্কা বিশ্বব্যাংকের

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শ্লথগতির শঙ্কা বিশ্বব্যাংকের
বৈশ্বিক অর্থনীতি আগামী কয়েক বছরে শ্লথগতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি জানিয়েছে, উচ্চ সুদহার, দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক খাতের অব্যাহত সংকটের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এরই মধ্যে তীব্রভাবে কমেছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটির সম্প্রতি প্রকাশিত অর্ধবার্ষিক গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস প্রতিবেদনে বলছে, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রকৃত জিডিপি ২ দশমিক ১ শতাংশ বাড়বে। এ প্রাক্কলন হিসাব জানুয়ারিতে প্রকাশিত ১ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় বেশি, কিন্তু ২০২২ সালের ৩ দশমিক ১ শতাংশের তুলনায় অনেক কম।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্ডারমিট গিলের মতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত অর্থনীতিগুলোও চলতি বছরে বাড়বে মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ হারে। গত বছরের রেকর্ড ২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় যা উল্লেখযোগ্য পতন। এছাড়া এটি হতে যাচ্ছে পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল প্রবৃদ্ধির হারগুলোর একটি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্বের অর্থনীতি এখনো অনিশ্চিত। আগামী বছরের শেষ নাগাদও উন্নয়নশীল বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশের মাথাপিছু আয় ২০১৯ সালের শেষের দিকে যা ছিল তার চেয়ে কম থাকবে। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দেশের জন্য এটি পাঁচটি হারিয়ে যাওয়া বছর হিসেবে চিহ্নিত হবে।’

তবে সর্বশেষ প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাংকের জানুয়ারির প্রাক্কলনের তুলনায় সামান্য উন্নতি চিহ্নিত করেছে। এর আগের প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, বৈশ্বিক অর্থনীতি এ বছর প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। যেখানে নতুন প্রাক্কলনে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ।

জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছিল, বৈশ্বিক জিডিপি মন্দার দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতিও এখন চাপের মধ্যে। ২০২৩ সালের জন্য বিশ্বব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ১ শতাংশ হিসাবে প্রাক্কলন করেছে। জানুয়ারির শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের প্রাক্কলনের তুলনায় যা দ্বিগুণেরও বেশি। এদিকে চীনের প্রবৃদ্ধি এ সময় ৫ দশমিক ৬ পর্যন্ত উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা জানুয়ারির ৪ দশমিক ৩ শতাংশের তুলনায় কিছুটা বেশি।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক কঠোরতা এবং ব্যবসায়িক, আবাসিক বিনিয়োগে আরো সীমাবদ্ধ ক্রেডিট শর্তের কারণে উন্নয়ন ঋণদাতা সংস্থাটি জানুয়ারিতে ২০২৪ সালের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন ২ দশমিক ৭ শতাংশ করলেও নতুন প্রাক্কলনে কিছুটা কমিয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এ কারণগুলো ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন আরো কমিয়ে আনবে এমনটাও আশঙ্কা। তবে ২০২৫ সালের প্রাক্কলনে প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে ৩ শতাংশ।

ফেডারেল রিজার্ভ ও অন্যান্য বৈশ্বিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবেলার জন্য একটি কঠোর পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক দশকের মধ্যে দ্রুততম গতিতে সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণ প্রদানের খরচ বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের দেশগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

উচ্চ সুদের হুমকি এবং সম্প্রতি কয়েকটি মার্কিন ব্যাংক ধসে পড়ায় ব্যাংকিং সেক্টরে আরো অস্থিরতা বাড়তে পারে। ফলে চলতি বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো কমার আশঙ্কা রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ব অর্থনীতি এখনো অবরুদ্ধ। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারে সংকট এবং রেকর্ড পরিমাণ ঋণের কারণে অনেক দেশ ক্রমেই দরিদ্র হচ্ছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ