অর্থনীতি
মাথাপিছু বরাদ্দ ৪৪ হাজার ৮৬৩ টাকা

দেশের মানুষের মাথাপিছু বরাদ্দ ২ হাজার ৯৩০ টাকা বাড়িয়ে ৪৪ হাজার ৮৬৩ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে আয় বেড়েছে ২ হাজার ৬৬৯ এবং ঘাটতি থেকে গেছে ২৬২ টাকা।
তবে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ।
এবার জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। প্রতিযোগী দেশগুলোতে বাজেট জিডিপির ২৫ শতাংশের ওপরে। ফলে আকার অনেক বড় করে দেখানো হলেও জনসংখ্যার বিবেচনায় বাজেটের একেবারেই বড় নয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বরাদ্দ ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে মাথাপিছু বরাদ্দ ৪৪ হাজার ৮৬৩ টাকা। চলতি বছরের বাজেটে যা ছিল ৪১ হাজার ৯৩৩ টাকা। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ৯৩০ টাকা। আগের বছর যা বেড়েছিল ৪ হাজার ৬শ টাকা। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে মোট আয় ৪ লাখ কোটি টাকা।
আর মাথাপিছু আয় ২৯ হাজার ৪৪৬ টাকা। আগের বছর যা ছিল ২৬ হাজার ৭৭৭ টাকা। এ হিসাবে আয় বেড়েছে ২ হাজার ৬৬৯ টাকা। আগের বছর বেড়েছিল ২ হাজার ৫০৫ টাকা। এছাড়াও ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে মাথাপিছু ঘাটতি ১৫ হাজার ৪১৭ টাকা। আগের বছর যা ছিল ১৫ হাজার ১৫৫ টাকা।

অন্যদিকে এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আর মাথাপিছু এডিপিতে বরাদ্দ ১৫ হাজার ৪৮৮ টাকা। আগের বছর যা ছিল ১৫ হাজার ২১৭ টাকা। আলোচ্য সময়ে মাথাপিছু এডিপি বেড়েছে ২৭১ টাকা। আগের বছর যা বেড়েছিল ১ হাজার ২৮৩ টাকা।
অর্থসংবাদ/এস.ইউ
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
জুয়া-হুন্ডির সাথে জড়িত মোবাইল হিসাব স্থগিত

অনলাইন জুয়া এবং অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়িত মোবাইল সার্ভিস সেবা বা মোবাইল হিসাব বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এখন পর্যন্ত এসব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ২১ হাজার ৭২৫টি মোবাইল হিসাব বন্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অনলাইন জুয়া ও হুন্ডির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭২৫টি ব্যক্তিগত হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়া অবৈধ হুন্ডি, গেমিং, বেটিং ও ক্রিপ্টো সংক্রান্ত ৮১৪টি ওয়েবসাইট, ১৫৯টি অ্যাপ ও ৪৪২টি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও লিংকের তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠিয়েছে বিএফআইইউ।
বিএফআইইউ আরও জানায়, চলতি বছরের নয় মাসে ৩৭১টি অনলাইন গেমিং ও বেটিং লেনদেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত ৪১৩টি লেনদেন ও অনলাইন ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কিত ৯১টি লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠানো হচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মানি লন্ডারিংবিরোধী কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
সভায় বিএফআইইউ’র প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস সভাপতিত্ব করেন। সভায় বিএফআইইউ এর উপপ্রধান কর্মকর্তা এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম, বিএফআইইউ এর পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. আরিফুজ্জামান ও সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান ও উপ-প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার, অনলাইন ফরেক্স ট্রেডিং,গেমিং,বেটিং, ডিজিটাল হুন্ডি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্মের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন সমসাময়িক ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়া ওয়েজ আর্নারগণ যাতে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠান সে বিষয়ে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সচেতনতা বাড়ানোরও তাগিদ দেন।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ডিজিটাল পেমেন্ট নিরাপদ করতে নতুন নীতিমালা জারি

অনলাইনে পণ্য ও সেবা কেনাবেচা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ধরনের কেনাকাটার মূল্য পরিশোধেও ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল পেমেন্ট। তাই, ডিজিটাল পরিশোধ ব্যবস্থাকে নিরাপদ, কার্যকর, সহজলভ্য করাসহ গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় ‘মার্চেন্ট এ্যাকোয়ারিং ও এসক্রো সেবা নীতিমালা, ২০২৩’ নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুতাসিম বিল্লাহ সাক্ষরিত ওই সার্কুলার বলা হয়, নীতিমালা অনুযায়ী মার্চেন্ট হবে তিন ধরনের। প্রথমটি ফিজিক্যাল স্টোর ভিত্তিক মার্চেন্ট, দ্বিতীয়টি অনলাইন ভিত্তিক মার্চেন্ট ও তৃতীয়টি ফিজিক্যাল স্টোর ও অনলাইন উভয় ভিত্তিক মার্চেন্ট।
যেসব মার্চেন্ট বা বিক্রেতার মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার নিচে তারা মাইক্রো ফিজিক্যাল মার্চেন্ট হিসেবে গণ্য হবে। আর যাদের লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি তারা ফিজিক্যাল রেগুলার মার্চেন্ট হিসেবে গণ্য হবে। আবার যেসব অনলাইন মার্চেন্ট বা বিক্রেতার মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার নিচে তারা মাইক্রো অনলাইন মার্চেন্ট হিসেবে গণ্য হবে। আর যাদের লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি তারা অনলাইন রেগুলার মার্চেন্ট হিসেবে গণ্য হবে। যে সব মার্চেন্ট নিজস্ব ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন বিক্রেতার (মার্চেন্ট) পণ্য ও সেবা প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয় করে, তারা অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে গণ্য হবে।
সার্কুলারে বলা হয়, এ ধরনের ডিজিটাল পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণে পণ্য বা সেবা বিক্রেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কেননা, ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় পণ্যের মূল্য পরিশোধের পর মার্চেন্ট সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে প্রতিশ্রুত সেবা যথাসময়ে সরবরাহ করার জন্য দায়বদ্ধ থাকেন। অপরদিকে পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা মার্চেন্ট এ্যাকোয়ারার ক্রেতার মাধ্যমে বিক্রেতার অনুকূলে পরিশোধিত অর্থ সংশ্লিষ্ট মার্চেন্টের অনুকূলে নিষ্পত্তির জন্য দায়বদ্ধ থাকেন।

এতে আরও বলা হয়, পণ্য ও সেবার মূল্য পরিশোধের পর বিক্রেতা-মার্চেন্ট সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে যথাসময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ করলে ডিজিটাল কমার্স সেবার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। যা ডিজিটাল পরিশোধ ব্যবস্থার প্রসারেও ভূমিকা রাখবে। আবার সরেজমিন উপস্থিতি ছাড়া লেনদেনের সুযোগ গ্রহণ করে অনেক অবৈধ পণ্য বা সেবা বিক্রেতাও মূল্য পরিশোধে বৈধ ডিজিটাল পরিশোধ সেবা ব্যবহার করে প্রতারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, যা রোধে প্রয়োজনীয় নীতি কাঠামো অনুসরণ করা আবশ্যক।
বিক্রেতা বা মার্চেন্টের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও লেনদেনে গ্রাহকের স্বার্থহানিসহ মানি লন্ডারিং ও জালিয়াতির ঝুঁকি থাকে। ফলে, পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (বিকাশ, নগদ, রকেট, ব্যাংক ইত্যাদি) বা মার্চেন্ট এ্যাকোয়ারারকে বেশকিছু তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
সেগুলো হলো- মার্চেন্টের নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র, কেওয়াইসি, পারসোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট, ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), মার্চেন্টের টেলিফোন, মোবাইল নম্বর, মার্চেন্টের ব্যাংক ও এমএফএস, পিএসপি অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যবসায়িক ঠিকানা, ওয়েবসাইট ও ই-মেইল ঠিকানা, মার্চেন্ট যে ব্যবসায় নিয়োজিত তার বিবরণ, বৈধতা, সামাজিক গুরুত্ব, হালনাগাদ পণ্যের তালিকা (অনলাইন মার্চেন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য), অনুমতি আবশ্যক পণ্য ও সেবা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্চেন্টের অনুমতিপত্র, মার্চেন্ট কোনো ব্যবসায়িক সংগঠন বা সমিতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে সে সংক্রান্ত দলিল, এ্যাকোয়ারারের বিবেচনায় অন্য যে কোনো প্রযোজ্য নথি, মার্চেন্ট কর্তৃক প্রদত্ত দলিলাদির অন-লাইনে যাচাই করা প্রমাণক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠান প্রতি অর্থবছর শেষে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সব মার্চেন্টদের ঝুঁকিসমূহ মূল্যায়ন করে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে এবং প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদ বরাবর উপস্থাপন করবে। ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী মার্চেন্টসমূহকে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করতে হবে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ মার্চেন্ট, মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ মার্চেন্ট এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ মার্চেন্ট।
এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠানগুলো মার্চেন্টের ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়মিত তদারকির মধ্যে রাখবে। যদি কোনো ফিজিক্যাল রেগুলার মার্চেন্টের (যাদের মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি) মাসিক লেনদেন প্রবৃদ্ধ ৪০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে তাকে ব্যখ্যা তলব করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শন করে উত্তর সন্তোষজনক না হলে তার লেনদেন স্থগিত করতে হবে। এছাড়া অনলাইনে রেগুলার মার্চেন্ট (যাদের মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি) এর মাসিক লেনদেন প্রবৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অনলাইনের মার্কেটপ্লেসের প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
এছাড়া ওই আইনে একজন গ্রাহক ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানে কিভাবে পণ্য অর্ডার করবে, কিভাবে পেমেন্ট করবে, মার্চেন্টের দায়িত্ব ও কাজ, ব্যাংক বা এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠানের কাজ, এসক্রো বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের করণীয় এবং কোনো জায়গায় বিপত্তি তৈরি হলে তার সমাধান ও জরিমানা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে ক্ষতির ভার কার কাঁধে পড়বে তাও বর্ণনা করা হয়েছে এই নীতিমালায়।
নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও দ্রুতগতির এসক্রো সেবা (পণ্য সরবরাহ বা কুরিয়ার) চালুর লক্ষ্যে এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠান এই নীতিমালা জারি হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাদের এসক্রো সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াকে অটোমেটেড করবে। ডিজিটাল কমার্স লেনদেনে কুরিয়ার সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক বা এমএফএস) পণ্য বা সেবা ক্রেতার উপর কোন চার্জ আরোপ করতে পারবে না।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ডলার বুকিংয়ের বিষয়ে সংশোধন আনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে দুই দিনের ব্যবধানে ডলার বুকিংয়ের নিয়মে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আগাম ডলার বুকিং দিতে পারবে শুধুমাত্র আমদানিকারকরা। বুকিংয়ের সর্বোচ্চ সময় হবে তিন মাস। আগের নির্দেশনায় এ সীমা ছিল সর্বোচ্চ ‘এক বছর’।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের সংশোধিত সার্কুলার থেকে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক বছরের জন্য ডলার বুকিংয়ের নিয়ম চালু করে সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলারের ভবিষ্যৎ দাম (ফরওয়ার্ড রেট) সর্বোচ্চ কত হবে তাও বেঁধে দেওয়া হয়। যা নিয়ে জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সার্কুলার জারির দুই দিন পরই সংশোধন এনে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিং সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে আগাম ডলার নেওয়ার ক্ষেত্রে এক বছর পর সর্বোচ্চ দাম কি হবে তাও বেঁধে দেওয়া হয়। নতুন নিয়মে এক বছর পর ব্যাংক ডলারের দাম বর্তমানের চেয়ে স্মার্ট হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি নিতে পারবে।
এদিকে আগাম ডলার বুকিংয়ের নির্দেশনায় জনমনে শঙ্কাও সৃষ্টি হয়। ডলার ব্যবহারকারীরা বলছেন, আগামীতে ডলার সংকট আরও বাড়বে। এজন্য আগে থেকে ডলার বুকিং দিতে বলা হচ্ছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, এক বছর পর ডলারের রেট ১২৩ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

রেমিট্যান্স-রপ্তানি ডলারের এক রেট
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের মূল্য এখন থেকে এক রেটে ধরা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলার প্রতি ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। আগে যা ছিল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ডলারের মূল্য ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া আমদানিতে ডলারের দর হবে ১১০ টাকা। আগে যা ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থায় ডলার লেনদেন হচ্ছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়।
তবে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুণতে হচ্ছে ১১৭ টাকা থেকে ১১৮ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের নগদে প্রতি ডলার কিনতে দেশি মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা পর্যন্ত।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে ৪৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এআইআইবি

আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। প্রতি ডলারের দাম ১০৮ টাকা ৮৪ পয়সা ধরা হলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৮ হাজার ৮১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশের জন্য এই অর্থ পাইপলাইনে রয়েছে।
এআইআইবি’র বোর্ড অব ডাইরেক্টরস এবং ৮ম বার্ষিক সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। মিশরের শারম আল শেখে ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বার্ষিক সভায় জলবায়ু অর্থায়ন এবং পাবলিক ও প্রাইভেট বিনিয়োগের মধ্যে সেতু বন্ধনের ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ খাতে ১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এআইআইবি-এর বিনিয়োগ শুরু হয়েছিল। প্রথম ৩ বছরে এআইআইবি’র অর্থায়ন ছিল ৪টি প্রকল্পের বিপরীতে ৪৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে ১৮টি প্রকল্পের বিপরীতে ৩ হাজার ২৭০ মিলিয়ন ডলার।
অর্থমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আরও জানানো হয়েছে, আগামী ৫ বছরের জন্য এআইআইবি অর্থায়নের বাংলাদেশের পাইপলাইনে ৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। যা বাংলাদেশে আগামী ৫ বছরে জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় অর্থায়ন এবং পাবলিক ও প্রাইভেট বিনিয়োগের মধ্যে সেতু বন্ধনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
এআইআইবি’র সভায় বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের সচিব শরিফা খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। শরিফা খান সভায় জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণে অধিক অর্থায়নেরর জন্য আহ্বান জানান।

এবারের বার্ষিক সভার মূল প্রতিপাদ্য ‘সাসটেইনেবল গ্রোথ ইন এ চ্যালেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড’ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে শরিফা খান বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়, উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সব দেশই এই মুহুর্তে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যার বেশিরভাগই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে উদ্ভূত। বিশেষ করে জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণ বর্তমান সময়ে অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবার ঝুঁকিতে আছে। তাই বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং আসন্ন সংকট এড়াতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায্য অংশীদারত্বের বিষয়ে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সভায় এআইআইবি সভাপতি এবং বোর্ডের চেয়ারম্যান জিন লিকুন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সদস্যদের প্রচেষ্টায় একযোগে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আগামী জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এআইআইবি সদস্যদের পাশে থাকবে। আমাদের অবশ্যই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন দ্রুত কমাতে, আবহাওয়ার চরম অবস্থায় শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং পৃথিবীতে জীবনকে সম্ভব করে তোলে এমন প্রাকৃতিক পুঁজিকে রক্ষা করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল গভর্নরস বিজনেস রাউন্ড টেবিল, সেমিনার, গভর্নস অফিশিয়াল সেশনে অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের বিনিয়োগ অপারেশন অঞ্চল ১- দক্ষিণ এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. উর্জিত প্যাটেলের সাথে দ্বিপাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিপাক্ষিক সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ঋণের শর্তসমূহ আরও সহনশীল করার ওপরে গুরুত্বারোপ করে। বাংলাদেশে বর্তমানে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের চলমান বিভিন্ন প্রকল্প এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য প্রকল্প নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশের ঋণমান কমালো ফিচ রেটিং

বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ রেটিং বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। গতকাল সোমবার নতুন পূর্বাভাসে সংস্থাটি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করেছে। ফিচ রেটিং বাংলাদেশের আইডিআরকে ‘বিবি মাইনাস’ বলে নিশ্চিত করেছে।
আইডিআর স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক হওয়ার অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশের খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি, তবে বাংলাদেশ এখনো তার ঋণের দায় মেটাতে বা বাধ্যবাধকতা পূরণে সক্ষম। এ ছাড়া সরকারে ঋণও সম পর্যায়ের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম, জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও ভালো; কিন্তু রাজস্ব–জিডিপির নিম্ন অনুপাত, নিম্ন মাথাপিছু আয়, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা ও সুশসানের ঘাটতির কারণে ভালো দিকগুলো ফিকে হয়ে যায়।
এক বছর আগেও ফিচ বলেছিল, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান স্থিতিশীল।
ফিচ রেটিং নতুন পূর্বাভাসে বলেছে, নেতিবাচক পূর্বাভাসের অর্থ হলো, অর্থনীতির বহিস্থ খাতের অবনতি; যে কারণে ধাক্কা আসলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, যেমন মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণের পদ্ধতি পরিবর্তন, ঋণদাতাদের সহায়তা নেওয়া—এসব করেও বিদেশি মুদ্রার মজুতের পতন ঠেকানো যায়নি বা বাজারে ডলারে সংকট মেটানো যায়নি। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলেও সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি।
ফিচ রেটিংয়ের মতে, ক্রমবর্ধমান আমদানি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে থাকবে। এ জন্য বছর শেষে রিজার্ভ ১৯ শতাংশ কমে ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়নে নামবে। রির্জাভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ) বাদ দিলে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে আসবে ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে।

ফিচ রেটিং বলছে, রিজার্ভ পরিস্থিতি এখনো চ্যালেঞ্জের মধ্যে, বিনিময় হার নিয়ন্ত্রিত, তেলের দাম বেশি এবং ভবিষ্যতে আমদানি বিধিনিষেধ শিথিল করার চাপের কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি ২০২৫ সাল পর্যন্ত থাকতে পারে। সংস্থাটি আরও বলেছে, ২০২৪–২৫ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা পূরণের সক্ষমতা অর্জন করা উচিত বাংলাদেশের।
এর আগে বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী আরও দুই বড় প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল এবং মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিসও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে। এসঅ্যান্ডপি, মুডিস ও ফিচ রেটিং—এই তিন প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে ‘বিগ-থ্রি’ বলা হয়। ঋণমান নির্ণয়ে এই তিন সংস্থাকে বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান মনে করা হয়।
অর্থসংবাদ/এমআই