জানা গেছে, ওয়েজলি, মিত্র এবং ইজেড বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া অ্যাপের মাধ্যমে চড়া সুদে শ্রমজীবিদের ঋণ দিয়ে আসছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম বর্হিঃভূতভাবে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো লামসাম ফি বা মেম্বার ফির নামে একটি বাড়তি অর্থনৈতিক সুবিধাও গ্রহণ করছে তাদের সেবা গ্রহনকারীর কাছ থেকে। এখানেই শেষ নয়, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ মালিকানার শেয়ার বিদেশীদের হওয়ায় টাকা পাচার এবং হুন্ডি ব্যবসার একটি ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া চলমান এই তিন প্রতিষ্ঠানের সুদের হারও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত বাৎসরিক সুদের হারের কয়েকগুণ বেশি।
অপরদিকে যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ রপ্তানীমুখী পোশাক শিল্প কারখানায় তাদের সেবাটি চালু করেছে তাই তারা ইচ্ছে করলেই শিল্পকারখানার মালিকের যোগসাজশে হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ওয়েজলি যে টাকাটা দেশের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের প্রদান করল সেই টাকাটা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে না নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকের যোগসাজসে বিদেশি ক্রেতার কাছ থেকে সে দেশে ওয়েজলির শেয়ারহোল্ডার বরাবর গ্রহণ করে, তাহলে দেশের টাকা দেশে আসার সুযোগ থাকবে না। এতে করে হুন্ডি ব্যবসার একটি নতুন ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।
জনা গেছে, ওয়েজলি, মিত্র এবং ইজেড টেকনোলজি কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত। প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার কোন অনুমোদন নেই। তাছাড়া এই কোম্পানিসমূহের অধিকাংশ মালিকানা বাংলাদেশের বাহিরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়েজলির ম্যানেজিং ডিরেক্টর নুর এলাহী জানান, ওয়েজলি একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আইটি নিয়ে কাজ করছেন এবং শ্রমিকদের কে কতদিন কাজ করেছেন এবং কার কত টাকা প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা সে বিষয়টি অ্যাপের মাধ্যমে যেকোন প্রতিষ্ঠানের এইচআরকে সহযোগিতা করে থাকেন। ফলে প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ ঋণ সুবিধা নিতে চাইলে এইচআর ডিভিশন তাদের অ্যাপের মাধ্যমে তাদের কর্মঘন্টার বিপরীতে মাস শেষ না হলেও অগ্রিম অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে পারেন।
ওয়েজলি চড়া সুদে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে। তবে বিকাশের দাবি, 'ওয়েজলির সাথে আমাদের কোনপ্রকার পার্টনারশীপ চুক্তি হয়নি, আমরা তাদের সাথে কাষ্টমার শেয়ারিং করে থাকি।'
চুক্তিপত্র সম্পাদনের জন্য যে ধরণের কাগজপত্র লাগে সেগুলো তাদের না থাকায় ওয়েজলির সাথে বিকাশ অফিসিয়ালভাবে পার্টনাশীপ চুক্তি করেনি বলেও জানায় বিকাশ।
অর্জিত মজুরি বা স্যালারির বিপরীতে ঋণ সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান 'মিত্রের' ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিশোয়ার বলেন, 'বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরণের সেবা চালু আছে। আমরা প্রাথমিকভাবে শুরু করে সাড়া পাচ্ছি।' তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে আমরা ঋণ দিচ্ছি। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে। এই সেবা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন অনুমতি নেই বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে আরেক প্রতিষ্ঠান 'ইজেড ওয়েজ'র হেড অব অপারেশন শিউলী আক্তার জানান, তারা বর্তমানে অর্জিত মজুরি বা স্যালারির বিপরীতে ঋণ সুবিধা দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, চাকরিজীবীরা তার নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত মজুরীর বিপরীতে ঋণ সুবিধা নিতে পারলেও তৃতীয় পক্ষের কেউ সেই প্রতিষ্ঠানে অর্জিত মজুরীর বিপরীতে ঋণ সুবিধা দিতে পারবে না।
তিনি জানান, এ ধরণের প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বিদেশিদের হওয়ায় অর্থপাচারের সুযোগও রয়েছে।