বীমা
৮ কোম্পানিকে দ্রুত বীমা পরিশোধের নির্দেশ

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) দেশের আট কোম্পানিকে দ্রুত বীমা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলোকে বীমা পরিশোধের হার বাড়ানোসহ আট দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি কোম্পানিগুলোকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বুধবার আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়।
আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনার মাধ্যমে ব্যবসায় উন্নয়ন ও বীমা খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কয়েকটি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কার্যক্রম তদন্ত করা হয়।
যা গত ২ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত শুনানি করা হয়। এ সময় প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে সভায় আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান, সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সিএফওসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শুনানি শেষে কোম্পানিগুলোকে দেওয়া নির্দেশনা সমূহ হলো: দ্বিতীয় বর্ষে পলিসি নবায়নের হার ৭০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, তামাদি পলিসির সংখ্যা বা হার কমাতে হবে, গাড়ি সংক্রান্ত ব্যয় কমাতে হবে, ৩০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে হবে (কমিশন বাদে), কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমিয়ে লাইফ ফান্ড বৃদ্ধি করতে হবে, গ্রস প্রিমিয়াম আয় বাড়াতে হবে, দ্রুত বীমা দাবি পরিশোধ করে এর হার বাড়াতে হবে, বিনিয়োগ রির্টানের হার বাজার সুদের হারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পুঁজিবাজার
মৃত ব্যক্তিকে বিমা কোম্পানির পরিচালক দেখিয়ে নেয়া হলো ঋণ

প্রায় এক যুগ আগে মৃত ব্যক্তিকে এখনো পরিচালক হিসেবে দেখাচ্ছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি বিমা কোম্পানি। একইসঙ্গে মৃত ব্যক্তির শেয়ার বন্ধক রেখে একটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও নেওয়া হয়েছে। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটিয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রুপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। গত দশ বছর ধরে মৃত ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক দেখানোর বিষয়টি স্বীকারও করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে মৃত ওই পরিচালকের নামের কিছু অংশ পরিবর্তন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থসংবাদের অনুসন্ধানে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ধারাহিক তিন পর্বের প্রথম পর্ব থাকছে আজ।
সূত্র মতে, রুপালী ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন খান ২০১২ সালের ১৮ মে ধানমন্ডির কম্পোর্ট নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অথচ ১১ বছর পরও নাজিম উদ্দিনকে নিজেদের পরিচালক হিসেবে দেখাচ্ছে রুপালী ইন্স্যুরেন্স।
জানা গেছে, ২০১০ সালে নাজিম উদ্দিন খান ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) খোলেন। বিও হিসাব নং: ১২০১৯৫০০৩৯৩৩১৩৬৩। তাঁর বিও হিসাবে বর্তমানে রুপালী ইন্স্যুরেন্সের ২১ লাখ ১৫ হাজার ৮০২টি শেয়ার রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৮৬৪টি শেয়ার বন্ধক দেখানো হচ্ছে ইবিএল সিকিউরিটিজ থেকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে ইবিএল সিকিউরিটিজ থেকে উত্তরা ফাইন্যান্স ক্যাপিটালে এ শেয়ারগুলো বন্ধক (Pledge) দেওয়া হয়েছে। কিভাবে এই শেয়ার বন্ধক দেওয়া হলো তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি ইবিএল সিকিউরিটিজ এবং রুপালী ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সালে নাজিম উদ্দিন খানের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী-সন্তানরা রুপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার বুঝে নিতে চাইলেও কালক্ষেপন করতে থাকে কোম্পানিটি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিআইবি (সেন্ট্রাল ইনফরমেশন ব্যুরো) প্রতিবেদন অনুযায়ী নাজিম উদ্দিনের নামে কোন ঋণ নেই। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে নাজিম উদ্দিনের শেয়ার বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছে কে? কিভাবে ইবিএল সিকিউরিটিজ থেকে উত্তরা ফাইন্যান্সে লিয়েন করে ঋণ নেওয়া হলো? আর এই ঋণের অনুমতিই দিয়েছে কে? এসব প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি কোন প্রতিষ্ঠান থেকেই।
সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের আদেশের পর গত ২ মে মৃত পরিচালকের উত্তরাধিকারীদের শেয়ার বুঝে নিতে অনাপত্তি দেয় রুপালী ইন্স্যুরেন্স। যদিও এখনো পর্যন্ত শেয়ার বুঝে নিতে পারেননি নাজিম উদ্দিন খানে উত্তরাধিকারীরা। রুপালী ইন্স্যুরেন্স, উত্তরা ফাইন্যান্স এবং ইবিএল সিকিউরিটিজের যোগসাজশে তাঁরা শেয়ার বুঝে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। নাজিম উদ্দিন খানের পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১৮ই মে ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে নাজিম উদ্দিনের শেয়ার কার নির্দেশে কবে বন্ধক রাখা হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মৃত নাজিম উদ্দিন খানের বড় ছেলে সিরাজ উদ্দিন খান মিন্টু অর্থসংবাদকে বলেন, আমার বড় মামা একসময় রুপালী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর বড় মামি এসব বিষয় দেখভাল করতেন। আমরা তখন এসব বিষয়ে বুঝতাম না। এখন উচ্চ আদালতের আদেশের পর রুপালী ইন্স্যুরেন্স শেয়ার স্থানান্তরে অনাপত্তি দিয়েছে। অনাপত্তি পেয়ে ইবিএল সিকিউরিটিজে যোগাযোগ করলে জানতে পারি শেয়ারগুলো বন্ধক দেওয়া অবস্থায় আছে। তবে কেন বন্ধক রয়েছে, সে বিষয়ে তাঁরা কিছু বলছে না। তাঁরা সিডিবিএল থেকে শেয়ার লক ফ্রি করতে বলেছে। পরে আমরা সিডিবিএলে যোগাযোগ করলে সংস্থাটি জানায় এটি তাদের কাজ নয়। বরং সিডিবিএল থেকে আমাদের এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে বলা হয়।
এদিকে মো. নাজিম উদ্দিন খান ২০১২ সালে মারা গেলেও গত এক যুগ ধরেই তাকে রুপালী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক দেখাচ্ছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যদিও মো. নাজিম উদ্দিন খানকে শুধু নাজিম উদ্দিন হিসেবে দেখাচ্ছে রুপালী ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির অন্যান্য পরিচালকের ছবি থাকলেও বার্ষিক প্রতিবেদনে নাজিম উদ্দিনের কোন ছবি নেই। এছাড়াও ইবিএল সিকিউরিটিজ নাজিম উদ্দিন খানের বিও হিসাবের ছবি পরিবর্তন করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বজনরা। তার সত্যতাও মিলেছে অর্থসংবাদের অনুসন্ধানে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছায়েদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির সিডিবিএলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরহাদ মোর্শেদ সনি অর্থসংবাদকে বলেন, মো. নাজিম উদ্দিনের বিও হিসাব বিএসইসি স্থগিত করে রেখেছে। বিএসইসিতে স্থগিতের জন্য উনার উত্তরাধিকারীরাই আবেদন করেছে। আমরা তো জিম্মাদার। উনাদের বলেছি স্থগিতাদেশ তুলে নিন।
তিনি বলেন, উত্তরা ফাইন্যান্সে কিভাবে শেয়ার লিয়েন (বন্ধক) করা হয়েছে সেটি ক্লায়েন্ট (নাজিম উদ্দিন) আর রুপালী ইন্স্যুরেন্স বলতে পারবে। ক্লায়েন্টের বিও হিসাবের নাম আর ডেথ সার্টিফিকেটের নামে মিল নেই। মূলত ইবিএল সিকিউরিটিজ এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
ফরহাদ মোর্শেদ বলেন, তাদেরকে অসহযোগিতা করার কিছুই নেই। হাইকোর্টের আদেশ যেহেতু নিয়ে আসছে আমরা দিতে বাধ্য। কিন্তু বিও হিসাব স্থগিত থাকায় আমরা শেয়ার বুঝিয়ে দিতে পারছি না। তবে নাজিম উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিও হিসাব স্থগিত করার জন্য তাঁরা কোথাও কোন আবেদনই করেনি।
জানতে চাইলে উত্তরা ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান বলেন, কি কারণে শেয়ার বন্ধক রাখা হয়েছে, তা সুস্পস্টভাবে বলা কঠিন। মূলত ঋণের বিপরীতে শেয়ার বন্ধক রাখা হয়। শেয়ার বন্ধক আমাদের কাছে থাকলেও বন্ধকের কারণ আমরা বলতে পারবো না। এটি মূল কোম্পানি বলতে পারবে।
রুপালী ইন্স্যুরেন্সর কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আতিকুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, নাজিম উদ্দিন খান ২০২২ সাল পর্যন্ত পরিচালক ছিলেন, এখন আর নেই। তিনি যে ২০১২ সালে মারা গেছে সেটি আমাদের কেউ জানায়নি। তাই এতদিন পর্ষদে ছিলেন। একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পরও কিভাবে পরিচালক নির্বাচিত হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো পরিচালকদের বিষয়। আমি ফোনে এসব বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।
২০১২ সালে মারা গেলে ২০১৭ সালে কিভাবে শেয়ার বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কোম্পানি সচিব বলেন, সেটি আমি জানি না। এটি যাদের শেয়ার তাঁরা জানে। লিয়েন করতে কি কোম্পানিকে জিজ্ঞেস করতে হয়? মূলত আমি ওই সময় রুপালী ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানি সচিব ছিলাম না। তবে আমরা এখন নাজিম উদ্দিন খানের উত্তরাধিকারীদের শেয়ার হস্তান্তরের অনুমতি দিয়েছি। শেয়ার হস্তান্তর যেহেতু পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের বিষয়, তাই একটু দেরি হয়েছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন অর্থসংবাদকে বলেন, যদি এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে সেটি অবশ্যই নজিরবিহীন, চাঞ্চল্যকর এবং অনিয়ম। শেয়ার লিয়েন এবং প্লেজ করা বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব না। এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে বোর্ডের সবাই এর জন্য দায়ী। একজন মৃত ব্যক্তি তো দূরের কথা, কেউ বোর্ড মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকলে সেটির কারণও জানাতে হয়। সেখানে মৃত ব্যক্তিকে পর্ষদে রাখাতো বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া সম্ভব নয়। এর জন্য পুরো বোর্ডই রেসপন্সিবল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচাল মো. রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এসআরএমআইসি বিভাগ এ বিষয়টি দেখভাল করে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কমিশন দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালের উত্তরাধিকার আইনের ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী নাজিম উদ্দিন খানের স্ত্রী-সন্তানদের রুপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার বুঝিয়ে দিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী, নাজিম উদ্দিন খানের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে- তাঁর স্ত্রী হাজী রোকেয়া বেগম ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৭৫টি শেয়ার পাবেন। দুই ছেলে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৩১টি করে শেয়ার পাবেন। আর চার কন্যা রহিমা জামান, ফাহিমা ওয়াহিদ, শামীমা নামিজ এবং সায়মা নাজিম প্রত্যেকেই পাবেন ২ লাখ ৩১ হাজার ৪১৫টি শেয়ার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
বীমা
বাধ্যতামূলক হচ্ছে মোটরযানে থার্ড পার্টি বীমা

মোটরযানে থার্ড পার্টি বীমা আবার বাধ্যতামূলক হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। তবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, এটি অযৌক্তিক। বীমা বাধ্যতামূলক করা হলে শুধু বীমা কোম্পানির লাভ হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে হতাহতদের পরিবার বঞ্চিত হবে। গাড়ি, মোটরসাইকেল চালানোয় খরচ বাড়বে।
২০১৮ সালে বীমা ঐচ্ছিক করা হয়। এর বদলে দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করা হয়। গত ১ জানুয়ারি থেকে নিবন্ধিত যানবাহন থেকে তহবিলের জন্য চাঁদা নিচ্ছে সরকার। বীমা ফিরিয়ে আনা হলেও বাতিল হবে না এ চাঁদা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, তৃতীয় পক্ষের বীমায় কারও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নজির নেই, বরং আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া সহজ। ফের বীমা চালু হলে তহবিলে চাঁদা নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশে বীমা বাধ্যতামূলক ছিল। বীমা ছাড়া গাড়ি সড়কে চালালে জরিমানা দিতে হতো। ফার্স্ট পার্টি বীমা করলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির জন্য ক্ষতিপূরণ পেতেন মালিক। বাধ্যতামূলক ছিল থার্ড পার্টি নামে পরিচিত তৃতীয় পক্ষের বীমা। এ বীমার আওতায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রী, পথচারীর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল। এই বীমার প্রিমিয়ামও (কিস্তি) ছিল সামান্য। বাসের জন্য বছরে দেড় হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেলে ২২০ টাকা দিতে হতো। অন্যান্য যানবাহনে প্রিমিয়ামের পরিমাণ ছিল ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা।
থার্ড পার্টি বীমা তুলে দিয়ে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩ ধারা অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করা হয়। তহবিল পরিচালনায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে আইনের ৫৪ ধারা অনুযায়ী। দুর্ঘটনায় হতাহতদের পক্ষে আবেদন করলে তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে।
গত ২৭ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন বিধিমালার ১৪৯ ধারা অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তাঁর পরিবার অন্যূন ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে তহবিল থেকে। অঙ্গহানি ও পঙ্গুত্বের জন্য ৩ লাখ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা থাকলে ১ লাখ টাকা সহায়তা পাবেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি। সরকারের অনুমোদনে সহায়তার পরিমাণ কমবেশি করতে পারবে ট্রাস্টি বোর্ড।
বিধিমালার ১৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভারের জন্য মালিককে বছরে ১ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হবে তহবিলে। নতুন নিবন্ধন এবং প্রতিবছর গাড়ির কাগজ হালনাগাদ করার সময় এই চাঁদা দিতে হবে। মিনিবাস, মিনিট্রাক, পিকআপের বার্ষিক চাঁদা ৭৫০ টাকা। কার, জিপ, মাইক্রোবাসের চাঁদা ৫০০ টাকা। তিন চাকার গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনের চাঁদা ৩০০ টাকা। তবে বছর বছর মোটরসাইকেলের ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস হালনাগাদ করতে হয় না। তাই এই দ্বিচক্রযান নিবন্ধনের সময় এককালীন ১ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, তহবিল চালু হওয়ায় থার্ড পার্টি বীমা বাতিল করা হয়। সবার সম্মতিতেই তা করা হয়েছিল। আর থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সে বীমা কোম্পানি ছাড়া আর কারও লাভ হয় না। গাড়ির মালিক শুধু শুধু কিস্তি দিয়ে যান।
সড়ক পরিবহনের ৬০ ধারায় প্রথম পক্ষের বীমার বিধান রয়েছে। তবে তা ঐচ্ছিক। ৬০(১) ধারায় বলা হয়েছে, মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে মালিকানাধীন যে কোনো মোটরযানের জন্য যে সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট, তাদের জীবন ও সম্পদের বীমা করতে পারবে। পরের দুটি উপধারায় বলা হয়েছে, গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বীমার ক্ষতিপূরণ পাবেন মালিক। তবে গাড়ির ক্ষতির জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন না।
এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, সব মালিকই গাড়ির জন্য প্রথম পক্ষ বীমা করেন। এনা পরিবহনের হিনো বাসের জন্য বছরে ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার কিস্তি দিতে হয়। দুর্ঘটনা না হলে ‘নো ক্লেইম বোনাস’-এর মাধ্যমে প্রিমিয়ামের একটি অংশ ফেরত পাওয়া যায়।
অধিকাংশ বাস ও গাড়ির মালিক জানিয়েছেন, শুধু মামলা থেকে বাঁচতে আগে থার্ড পার্টি বীমা করতে হতো। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ২২০ টাকার বীমা করা না থাকলে ৮০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতো। একাধিক বাস মালিক জানান, মামলা থেকে বাঁচতে ২০০-৩০০ টাকায় বীমার কাগজ বানানো হতো। কিন্তু এখন দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য গঠিত তহবিলে বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হচ্ছে। আগে থার্ড পার্টির বীমায় ক্ষতিপূরণ না পেলেও এখন তহবিল থেকে পাওয়ার সুযোগ তৈরি রয়েছে। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেছেন, বীমা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে তাঁদের আপত্তি রয়েছে। তা সরকারকে জানানো হবে। এতে বীমা কোম্পানির লাভ হলেও গাড়ি চালানোর খরচ বাড়বে।
সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে বীমা বাধ্যতামূলক করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডলকে প্রধান করে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্ল্যাহ নুরী জানিয়েছেন, আইন সংশোধনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
বীমা
রােমাে রউফ ফের ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান

রোমো রউফ চৌধুরী সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোমো রউফ চৌধুরী ব্যাংক এশিয়ার একজন স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার ও স্পন্সর পরিচালক। তিনি লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রিধারী। একজন শিল্পপতি হিসেবে তিনি ৩০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
রোমো রউফ চৌধুরী বর্তমানে র্যানকন গ্রুপের চেয়ারম্যান। র্যানকন গ্রুপের ৩০টিরও বেশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এর মধ্যে কয়েকটি হলো র্যানকন মোটরবাইকস, র্যানকন মোটরস, র্যাংগস লিমিটেড, র্যাংগস প্রপার্টিজ, র্যানকন অটোমোবাইলস, র্যানকন ওশেনা লিমিটেড, র্যানকন সি ফিশিং ও র্যানকন ইলেকট্রনিকস।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
বীমা
কিছু বিমা কোম্পানি ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করেছে: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

কিছু বিমা কোম্পানি ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করে বলে মন্তব্য করেছেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
তিনি বলেন, প্রথম কয়েক বছর বিমা কোম্পানিগুলোর কাছে শুধু টাকা আসে। মেয়াদ পূরণের আগে তো বিমা দাবি পরিশোধ করা লাগে না। কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে তা যদি সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করে তাহলে দাবি পূরণের সময় সমস্যা হয় না। কিন্তু কিছু বিমা কোম্পানি অতিরিক্ত ব্যয় করেছে, ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করেছে, জমি কিনেছে অতিরিক্ত টাকায়। এসব কোম্পানির মালিকরা কখনো অর্থের অপচয় করেছে, কখনো আত্মসাৎ করেছে, ফলে কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে।
বুধবার (১৫ মার্চ) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টকে’ অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, বিমা দাবি পরিশোধ নিয়ে আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসে। আমরা সেগুলো নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করি। কোম্পানিগুলোকে বিমা দাবি পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিই।
তিনি বলেন, বিমা খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে কোম্পানিগুলোর থেকে এখন প্রত্যেক প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন নিচ্ছি। অডিট রিপোর্ট নিতে যেহেতু সময় লাগে, সেজন্য আমরা এটি করছি। কারণ অডিট রিপোর্ট দিয়ে অনিয়ম ধরা সময়ের ব্যাপার। এতে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন প্রান্তিকে যদি দেখি কোম্পানি খরচ বেশি করছে, পরের সময়ে খরচ কম করতে বলি।

বিমার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বলেন, আমরা কোন বিমা কোম্পানিকে জমি কেনার অনুমতি দেইনি। যৌক্তিক না হলে দেবও না। কোম্পানিগুলোর যে কোন বিনিয়োগে দেখেশুনে অনুমোদন দিব।
আইডিআরএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েকমাসের মধ্যে আমরা ২৮ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি। জনবল বৃদ্ধিতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা কাজ শেষ করতে না পারলেও পরের জন্য গাইডলাইন থাকবে।
তিনি বলেন, বিমা আইনকে অবশ্যই যুগোপযোগী করতেই হবে। অফসাইড এবং অনসাইড সুপারভিশনের জন্য গাইডলাইন তৈরী হচ্ছে। ১০ বছর ধরে বীমা আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমরা দেখেছি কিছু কিছু জায়গায় সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা ২৫টির মতো রেগুলেশন করেছি। ইতিমধ্যে আরও ২৫টি পাইপলাইনে রয়েছে। আমরা এটার পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি। সব জায়গায় রেগুলেশনের দরকার নেই। অনেক জায়গায় রয়েছে অডিট করাতে হলে ফার্ম নির্ধারণ করতে হবে রেগুলেশন দ্বারা। এ রকম করতে থাকলে তো রেগুলেশনের ঘুরপাকে থাকতে হবে সারাদিন। বিমা আইন সংশোধনের জন্য ইতিমধ্যে একটি মিটিংও করেছি। অফিসারদের দায়িত্ব দিয়েছি। তারা যে যে ধারায় সংশোধনের প্রয়োজন তা নির্ধারণ করছেন। যত দ্রত সম্ভব আমরা একটি খসড়া তৈরি করে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
দাবি পরিশোধে পুরষ্কার পেল শেয়ারবাজারের চার বিমা কোম্পানি

দাবি পরিশোধের ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত চার বিমা কোম্পানিকে পুরস্কার দিয়েছে সরকার। বুধবার (১ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পুরস্কার হস্তান্তর করেন।
লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্ত কোম্পানি দু’টি হলো- ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই কোম্পানি হলো- গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
অর্থমন্ত্রণালয় এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে জাতীয় বীমা দিবসের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান জয়নুল বারী এবং বিআইএ’র সভাপতি শেখ কবির হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।