বাংলাদেশ থেকে নকল পণ্য রপ্তানি হয় না বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানাল সরকার

বাংলাদেশ থেকে নকল পণ্য রপ্তানি হয় না বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানাল সরকার
বাংলাদেশ থেকে কোনো নকল পণ্য রপ্তানি হয় না। এ ধরনের কোনো পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির সুযোগই নেই। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ আজ রোববার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের সফররত একটি প্রতিনিধিদলকে এসব কথা বলেছেন।

বৈঠকের পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ থেকে কোনো নকল পণ্য রপ্তানি হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের কোনো পণ্য রপ্তানির সুযোগই নেই। কারণ, রপ্তানির সময় পণ্য নিয়ে মানসম্পন্ন পরীক্ষা হয়, নিরীক্ষা হয়।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, তিনি ইউএসটিআরের দলকে বলেছেন, ‘অন্য কোনো দেশের কোনো কোম্পানি যদি তাদের ওয়েবসাইটে কোনো পণ্যকে বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে দেখায়, সেই দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারি না। তারপরও যদি তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছে কোনো অভিযোগ থাকে এবং সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানায়, তাহলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।’

ইউএসটিআর কার্যালয়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্রিয়ান লুটি, ইউএসটিআরের উপসহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেনডন এলভিনচ, দক্ষিণ এশিয়ায় ইউএসটিআরের পরিচালক মাহনাজ খান, রিজিওনাল আইপি অ্যাটাচে জন ক্যাবেকা, দক্ষিণ এশিয়ায় সিনিয়র লিগ্যাল আইপি কাউন্সেল শিল্পি ঝা, ইউএস প্যাটেন্ট অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অফিসের প্যাটেন্ট বিশেষজ্ঞ রাহুল দাস, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ইকোনমিক ইউনিটের প্রধান যোসেফ গিবলিন, অর্থনৈতিক/বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ শীলা আহমেদ এবং পলিটিক্যাল/ইকোনমিক সামার অ্যাসিস্ট্যান্ট এমা ফেহরম্যান।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড পণ্যের একটি সংগঠন ও ফ্রান্সের একটি শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নকল পণ্য রপ্তানির অভিযোগ তুলে গত জানুয়ারিতে ইউএসটিআরের কাছে আলাদা দুটি আবেদন জমা দেয়। তাদের অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশের কিছু কারখানা বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক ও জুতা নকল করে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠনটির নাম আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)। সংগঠনটি ইউএসটিআরে আবেদন করেছে গত ৩০ জানুয়ারি। আর ফ্রান্সের সংগঠনটির নাম ইউনিয়ন ডেস ফেব্রিকস (ইউনিফ্যাব)। সেটি ইউএসটিআরে আবেদন করেছে গত ২৬ জানুয়ারি।

উভয় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সত্যতা যাচাইয়ে ‘বিশেষ ৩০১ পর্যালোচনা’ শিরোনামে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় ইউএসটিআর। এই পর্যালোচনা বৈশ্বিক মেধাস্বত্ব অধিকার রক্ষা ও তা কার্যকরের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি)। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কোনো এলডিসির বিরুদ্ধে নেওয়া এ ধরনের পর্যালোচনার পদক্ষেপ।

সূত্র জানায়, এ ধরনের পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ইউএসটিআর সাধারণত তিন রকমের তালিকা করে থাকে। প্রথমটি হচ্ছে নজরদারি তালিকা, দ্বিতীয়টি অগ্রাধিকার তালিকা ও তৃতীয়টি নজরদারিযোগ্য অগ্রাধিকার নজরদারি তালিকা। প্রথমটিতে শাস্তি বলতে কিছু থাকে না। দ্বিতীয়টিতে শাস্তির জন্য কড়া বার্তা দেওয়া হয়। আর তৃতীয়টিতে শাস্তি দেওয়া হয়।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু বাংলাদেশই নয়; ভিয়েতনাম, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) আরও কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধেও নকল পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির অভিযোগে একই ধরনের পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি চিঠি পাঠিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মতামত জানতে চায়। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও উইং যথাসময়েই ইউএসটিআরকে প্রাথমিক মতামত জানায়। এতে প্রমাণ ছাড়া অভিযোগকে ‘অন্যায্য ও ক্ষতিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং নকল পণ্য উৎপাদন প্রতিরোধে বাংলাদেশে অন্তত ১০টি আইন রয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এরপর বাংলাদেশ বিশদ আকারে চূড়ান্ত মতামত পাঠায়। তার আগে তৈরি পোশাক ও নিট পোশাক খাতের দুই সমিতি বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), শিল্প মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মত নেওয়া হয়।

অভিযোগ ও তার ভিত্তি
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) ইউএসটিআরের কাছে অভিযোগ করেছিল, বাংলাদেশে ব্যাপক হারে নকল পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি হয়। গত ২০২২ সালে সারা বিশ্বে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত ৫৬টি নকল পণ্যের চালান জব্দ হয়েছে, যা ২০২১ সালের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এসব পণ্য জব্দ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে।

এএএফএ জানায়, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে পরিচালিত ১৭টি অভিযানে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত নকল পণ্যের তথ্য উঠে আসে। এসব জব্দ পণ্যগুলোর উৎস বাংলাদেশ। অথচ বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) মেধাসম্পদ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন এ কারণে বাংলাদেশকে উচ্চ নজরদারির তালিকায় রাখে।

অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পোশাকখাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কমে গেছে চাহিদা
২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ
২০২৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১০ শতাংশ
ইভ্যালিতে বড় অফার আজ, ১০ টাকায় মিলবে পাঞ্জাবি
হিলিতে আদা-সবজিতে স্বস্তি, বাড়তি দামে রসুন
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঐক্যমতে শেষ হলো গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স
১১ মাসে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি
২০২৪ সালে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
আইসিএবির নতুন সভাপতি ফোরকান উদ্দীণ
বিসিক শিল্পনগরীতে এক হাজার ৯৮ প্লট খালি