অর্থনীতি
হুন্ডিতে ঝুঁকছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা, রেমিট্যান্সে ভাটা

মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের বিপরীতে তুলনামূলক কম টাকা পাওয়ায় বৈধ চ্যানেলে দেশে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে করছে রেমিট্যান্স হাউজগুলো। একটু বেশি অর্থ পাওয়ার আশায় অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান অনেক প্রবাসী। সরকারি প্রণোদনা আর নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেও সব প্রবাসীকে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী করা সম্ভব হচ্ছে না।
এর ফলে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোয় একসময় মালয়েশিয়ার অবস্থান ছিল ৫ম, যা এখন সপ্তমে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়ানোর পাশাপাশি ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার দাবি প্রবাসীদের।
হুন্ডিতে টাকা পাঠানো তুলনামূলক সহজ ও লাভজনক মনে করে অনেক প্রবাসী এই অবৈধ পথে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। এই সুযোগ লুফে নিচ্ছেন হুন্ডি কারবারি ও টাকা পাচারকারীরা। রিঙ্গিত প্রতি ব্যাংক রেট থেকে এক টাকা বেশি মিলছে হুন্ডিতে। এছাড়াও দেশে টাকা পাঠাতে কর্মস্থল থেকে দূরের ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো লাগছে না। ফলে অবৈধ হুন্ডিতে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা।
চলতি মাস এপ্রিলে রিঙ্গিত প্রতি বিনিময় ২৪ টাকা ৫ পয়সা থেকে ২৩ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে এসেছে। গত মাসে যা ছিল ২৬ টাকা। ফলে গত মাসে রেট বেশি পাওয়ায় প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে বেশ আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। তাতে আগের তুলনায় মার্চে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স বাড়ে ৪০ শতাংশ।
মার্চ মাসে মালয়েশিয়া থেকে বৈধপথে ৯৮ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমমানের রেমিট্যান্স পাঠানো হয়। তবে এপ্রিলে বাংলাদেশে রিঙ্গিতের দাম কমায় প্রবাসীরা আবারও হুন্ডিতে ঝুঁকেছেন বলে ধারণা করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে ২০ শতাংশ রেমিট্যান্স কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে ডলার বা রিঙ্গিতের বিনিময় মূল্য যা-ই হোক না কেন, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে সিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠাতে সচেতনতা ও দেশপ্রেমের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এরই মধ্যে প্রবাসী আয় কমার অন্যান্য কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বৈধপথে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এনবিএল, সিবিএল ও অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউজের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার বরাবর ১০ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হলে বিদেশে অবৈধ উপায়ে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় রেমিট্যান্সের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডিসহ প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার পাশাপাশি প্রবাসীদের সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। হুন্ডি প্রতিরোধ ও প্রবাসীদের সচেতন করতে কাজ করছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
এ সময় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার আহ্বান জানান হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
সেঞ্চুরির পথে পেঁয়াজ

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রায় প্রতি বছরই পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। নিজেরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেন ইচ্ছামতো। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদুল আজহার এক মাস আগেই বাজারে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি প্রায় একশ টাকা।
মাত্র দেড়মাস আগে রমজানে এক কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন তা বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। সবশেষ দুইদিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অসাধু বিক্রেতারা পেঁয়াজ নিয়ে সিন্ডিকেট করেন। তবে বিক্রেতাদের দাবি, মূলত ভারত থেকে আমদানি না হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এমনটা চলতে থাকলে আসন্ন কোরবানির ঈদে পেঁয়াজের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজের আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে পরদিন ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে দাম বাড়তে থাকে রান্নায় অতিপ্রয়োজনীয় মসলাজাতীয় পণ্যটির।
রোববার (৪ জুন) রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ (দেশি কিং) বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। এছাড়া দেশি (পাবনা) বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজি। দেশি ও চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা প্রতি কেজি।

ক্রেতারা বলেন, কোরবানির ঈদের এখনো প্রায় এক মাস দেরি, এর মধ্যেই দাম বেড়েছে অনেক। রোজায় ৩৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছি, এখন দাম প্রায় তিনগুণ। এখনই সরকারিভাবে অভিযান পরিচালনা করে পেঁয়াজ মজুতদারদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এটা না হলে কোরবানি আসতে আসতে ২০০ টাকায় পেঁয়াজ কেনা লাগবে।
বিক্রেতারা বলেন, আমরা খুচরা বিক্রি করি, দর-দাম নিয়ে মাথাব্যথা নেই। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমরা সেভাবে বিক্রি করি। আবার পাইকারিতে দাম কমলে খুচরায়ও কমে যায়। তবে বর্তমানে যেভাবে দাম বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে আসন্ন কোরবানির ঈদে পেঁয়াজের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও মন্তব্য এ খুচরা বিক্রেতার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছে তিন খাত

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আমাদের অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছে কৃষি, শিল্প ও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। তাই বাজেটে সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি দিবে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সরকার ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসবে। ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসতে পারাটা অনেক ভালো একটি ব্যাপার।
শনিবার (৩ জুন) মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পিআরআই আয়োজিত বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সরকার যদি ভ্যাট কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে তাহলে এই খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমি সরকারকে বলবো সঠিকভাবে এই কাজটি করতে। কারণ ভ্যাট একটি ভালো ট্যাক্স।
পিআরআইর ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বলেন, বিশ্বের যেসব দেশ সুদের হার বাড়িয়েছে তারা মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হয়েছে। তবে ২০২২ সালে আগস্টে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা চলতি বছরের মে মাসে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের জুনে থাইল্যান্ডের মূল্যস্ফীতি চিলো ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এটি চলতি বছরের এপ্রিলে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে থাইল্যান্ড ৬৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের এপ্রিলে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এর আগের বছরের জুনে ছিলো ৯ দশমিক ১ শতাংশ।

এদিকে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের এপ্রিলে ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে যার পরিমাণ ছিলো ১০ দশমিক ৬ শতাংশে। অর্থাৎ আলোচিত এই সময়ের মধ্যে দেশটির মূল্যস্ফীতি কমেছে ৩৪ শতাংশ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে দেশে আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমানো হয়েছে। এতে ডলারের ওপর চাপ কমেছিলো। কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সের কিছুটা উন্নতি হলেও ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট বাড়ানো সম্ভব হয়নি। কারণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই আমদানি নিয়ন্ত্রণ কোন স্থায়ী সমাধান না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সুদের হার বাড়িয়ে বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি কমিয়েছে

সুদের হার বাড়িয়ে বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। তিনি বলেন, ২০২২ সালের আগস্টে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা চলতি বছরের মে মাসে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার (৩ জুন) মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পিআরআই আয়োজিত বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাদিক আহমেদ বলেন, ২০২২ সালের জুনে থাইল্যান্ডের মূল্যস্ফীতি ছিলো ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এটি চলতি বছরের এপ্রিলে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে থাইল্যান্ড ৬৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের এপ্রিলে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এর আগের বছরের জুনে ছিলো ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
এদিকে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের এপ্রিলে ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে যার পরিমাণ ছিলো ১০ দশমিক ৬ শতাংশে। অর্থাৎ আলোচিত এই সময়ের মধ্যে দেশটির মূল্যস্ফীতি কমেছে ৩৪ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে দেশে আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমানো হয়েছে। এতে ডলারের ওপর চাপ কমেছিলো। কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সের কিছুটা উন্নতি হলেও ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট বাড়ানো সম্ভব হয়নি। কারণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই আমদানি নিয়ন্ত্রণ কোন স্থায়ী সমাধান নয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
হুন্ডির প্রভাবে মে মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১০.২৭ শতাংশ

খোলাবাজারের ডলারের দাম বেশি ও হুন্ডির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের ব্যাংকিং খাতে মে মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ১০.২৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী এই তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি অর্থবছরের মে মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৬৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরের একই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকাররা বলেন, দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের সংকট থাকার কারণে অনেক ব্যবসায়ী হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশি উৎস থেকে ডলার সংগ্রহ করছে। এছাড়া খোলাবাজারের তুলনায় ডলারের দাম কম থাকায় রেমিট্যান্স কম এসেছে বলে জানান তারা।
বর্তমানে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ১০৮.৫০ পয়সার সঙ্গে ২% প্রণোদনা পাচ্ছে। যদিও দেশের খোলাবাজারের বর্তমান ক্যাশ ডলার রেট ১১১-১৩ টাকা। এছাড়া বিদেশের মার্কেটে ক্যাশ ডলার ১১৫-১৬ টাকা পাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের সংকট রয়েছে। এর মধ্যে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী মার্কেটে ডলার না পেয়ে বিদেশি হুন্ডি মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করেছে যার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স কম আসছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মাথাপিছু ঋণ এক লাখ ৫ হাজার টাকা

দেশে ঋণের বোঝা বাড়ছে। আজ যে শিশুটি জন্ম নেবে, তার মাথায় ১ লাখ ৫ হাজার ২৫২ টাকা ঋণের দায় চাপবে। কারণ বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথা পিছু এই পরিমাণ ঋণ রয়েছে। আর গত এক বছরে ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৬৫২ টাকা।
আগামী এক বছরে আরও ১৫ হাজার ১৮৭ টাকা বাড়বে। ফলে ওই সময়ে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ১ লাখ ২০ হাজার ৪৩৯ টাকা। এ কারণে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেখেছে সরকার।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে মানুষের মাথাপিছু বরাদ্দ ৪৪ হাজার ৮৬৩ টাকা। এ হিসাবে ঋণ মাথাপিছু বরাদ্দের প্রায় আড়াই গুণ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর আদায় করতে না পারায় সরকারকে বেশি ঋণের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
ত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর দেশীয় উৎস থেকে যে হারে ঋণ নিচ্ছে, তা অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার জন্য ইতিবাচক নয়। এটা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে।
তিনি বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে কর আদায়ের হার অত্যন্ত কম। বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায় ৯ শতাংশের কম। অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে হলে জিডিপির তুলনায় করের অন্তত ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ থাকা উচিত। তিনি বলেন, করের হার বাড়াতে পারলে ঋণ কমবে। আর উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানো ভালো পদক্ষেপ নয়। এতে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট নয়।’

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের আভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ ১৫ লাখ ৫ হাজার ৩৬৩ কোটি এবং সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। এই ঋণ জিডিপির ৩৪ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। এ হিসাবে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ ১ লাখ ৫ হাজার ২৫২ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৫ হাজার ৬০০ টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে ৯ হাজার ৬৫২ টাকা।
এদিকে আগামী অর্থবছরের জন্য আরও ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। ফলে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি কমপক্ষে আরও ১৫ হাজার ১৮৭ টাকা বাড়বে। এই ঋণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কারণ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে ঋণ নেওয়া হয়, তার বিপরীতে সরকারকে বছরে ১০ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। এ কারণে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার, যা তিনটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় সমান।
এ ব্যাপারে মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ ঋণ অনেক ব্যয়বহুল। সেই ঋণের একটা মোটা অংশ যদি হয় সঞ্চয়পত্র, তাহলে তা আরও ব্যয়বহুল। সরকার ব্যয়বহুল ঋণ বেশি নিচ্ছে, এর অর্থই হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো অগ্রাধিকার খাতগুলোয় সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ রাখতে পারছে না।
বেসরকারি গবেষনা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসির (সিপিডি) বাজেট বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ঘাটতি মেটাতে অর্থায়নের বড় অংশই দেশীয় ঋণ। এর সুদ অত্যন্ত বেশি। এর ফলে বেসরকারি খাতেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে বাজেটে ঋণ নির্ভরতা কমানোর জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই রাজস্ব খাতে বিভিন্ন সংস্কার জরুরি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের মতে, সরকার ঠিকমতো ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না বলেই এর দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে। তুলনামূলকভাবে বিদেশি ঋণ অনেক সাশ্রয়ী। কিন্তু সরকার সহজ পথ হিসাবে বেছে নেয় বেশি সুদের অভ্যন্তরীণ উৎসকে। এতে আর্থিক খাতে চাপ বেড়ে যায়।
বর্তমানে দেশে মুদ্রার পরিমাণ ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমানত ১৫ লাখ ৫ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা এবং জনগণের হাতে নগদ টাকা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। আবার আমানতের মধ্যে মেয়াদি আমানত ১৩ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা এবং তলবি আমানত ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।